আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা আয় করেছে। পরিচালন ব্যয় বাদে নিট মুনাফা হয়েছে ১৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা। যা আগের অর্থবছরের চেয়ে প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা বেশি। ২০২২-২৩ অর্থবছরে নিট মুনাফা করেছিল ১০ হাজার ৬৫২ কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুনাফা অর্জন মূল উদ্দেশ্য নয়। তবে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক হিসেবে অর্থ ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংরক্ষণ করে। আবার প্রয়োজনের আলোকে কখনও ডলার ক্রয়-বিক্রয় করে। এছাড়া মুদ্রানীতি ব্যবস্থাপনার অংশ হিসেবে রেপো, স্পেশাল রেপো বা তারল্য সহায়তার মাধ্যমে ব্যাংকগুলোকে ধার দেয়। অনেক সময় রিভার্স রেপোর মাধ্যমে বাজার থেকে টাকা তুলে নেয়। এসব ব্যবস্থাপনা করতে গিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুনাফা করে।
গত অর্থবছর বাংলাদেশ ব্যাংক সবচেয়ে বেশি আয় করেছে রেপো, স্পেশাল রেপোর বিপরীতে বিভিন্ন ব্যাংককে দেওয়া স্বল্পমেয়াদি ধার দিয়ে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত অর্থবছর ৩২ লাখ ২১ হাজার কোটি টাকা ধার দিয়েছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে। যা আগের সাত বছরে দেওয়া মোট ধারের পরিমাণকে ছাড়িয়ে গেছে।
বুধবার (২৮ আগস্ট) বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে গত অর্থবছরের আর্থিক হিসাব বিবরণী অনুমোদন হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সভাকক্ষে গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে অন্য পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন।
আর্থিক হিসাব বিবরণী অনুযায়ী, সব ধরনের খরচের পর গত অর্থবছর নিট আয় থেকে ১৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে সরকারি কোষাগারে। তার আগের অর্থবছরের নিট মুনাফা হয় ১০ হাজার ৭৪৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১০ হাজার ৬৫২ কোটি টাকা সরকারের কোষাগারে জমা দিয়েছিল।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের নিট ঋণ দেখানো হয় ৯৪ হাজার ২৮২ কোটি টাকা। এর মধ্যে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে দেখানো হয় ৯৭ হাজার ৯২৭ কোটি টাকা। আর বাংলাদেশ ব্যাংকে ঋণ না বেড়ে উল্টো ৬ হাজার ৪৫৭ কোটি টাকা কমেছে। তবে সাবেক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সময়ে তথ্য গোপন করে ৬২ দিনে সরকারকে টাকা ছাপিয়ে প্রায় ৪১ হাজার কোটি টাকার ঋণ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের মাসিক প্রতিবেদনে দেখাচ্ছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সরকারের ব্যাংক থেকে নিট ঋণ ছিল ৮২ হাজার ৬০৯ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংক সরাসরি ঋণ সরবরাহ করলে মূল্যস্ফীতি বাড়ে। এমনিতেই এখন ১১ শতাংশের ওপরে মূল্যস্ফীতি। এর মধ্যে এভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ সরবরাহ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা করেন অর্থনীতিবিদরা। অবশ্য গত অর্থবছরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারকে ঋণ সরবরাহ না করারই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।
বৈদেশিক মুদ্রার চরম সঙ্কটের কারণে গত অর্থবছরও বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে ১২ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করে। আগের অর্থবছর বিক্রি করে ১৩ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলার। আবার এ সময়ে টাকার বিপরীতে ডলারের দর অনেক বেড়েছে। সব মিলিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা খাত থেকে ভালো আয় হয়েছে। ডলার বিক্রির কারণে অবশ্য দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ব্যাপক কমে এখন আইএমএফের বিপিএম-৬ অনুযায়ী গ্রস রিজার্ভ ২০ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলারে নেমেছে। যদিও নতুন গভর্নর দায়িত্ব নেওয়ার পর রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি বন্ধ করেছে। সরকারের আমদানি চাহিদা আন্তঃব্যাংক থেকে সংগ্রহ করে দিচ্ছে।
পর্ষদের বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর নিয়োগ, সার্বিক অর্থনীতি এবং গত অর্থবছরের কৃষি ঋণ বিতরণ বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।
একুশে সংবাদ/এনএস
আপনার মতামত লিখুন :