AB Bank
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

চিংড়ির রেনু আহরণ, ব্যবস্থা নেবে কে?


Ekushey Sangbad
নিজস্ব প্রতিবেদক
০৫:০৭ পিএম, ২২ মে, ২০২২
চিংড়ির রেনু আহরণ, ব্যবস্থা নেবে কে?

ফেনীর সোনাগাজী মুহুরী প্রজেক্ট এলাকায় রেগুলেটরের ওপরে কোনো মানুষ নেই একদম ফাঁকা, নিচের চিত্র পুরোটাই ভিন্ন।

ফেনী নদীতে মানুষ নিষিদ্ধ মশারি ও ঠেলা জাল দিয়ে চিংড়ির রেনু আহরণ করাসহ ধ্বংস করছে অন্য হাজারো মৎস্য ও জলজ প্রজাতি। 

কাজটি অবৈধ হলেও প্রকাশ্যেই চলছে। যারা চিংড়ির রেনু ধরছে অবৈধ কাজ হিসেবে তাদের মধ্যে কোনো ধরনের ভীতি নেই। তাদের বক্তব্য সবাইতো ম্যানেজড, ধরবে কে? টাকার ভাগতো সবাই পায় ব্যবস্থা নেবে কে? একই চিত্র দেখা গেছে জেলে পাড়া থেকে নৌকায় এক কিলোমিটার যাওয়ার পর চর খোন্দকার এলাকায়ও। সেখানেও চলছে এ অবৈধ যজ্ঞ। এ যেন নদীকে মাছহীন করার উৎসব!

সোনাগাজীতে সমুদ্র উপকূলীয় ফেনী নদীর বিভিন্ন স্থানে ও সাগরের মোহনায় নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে অবৈধভাবে অবাধে চলছে গলদা-বাগদা চিংড়ির রেনু আহরণ। এ রেনু আহরণ করতে গিয়ে প্রতিনিয়তই ধ্বংস হচ্ছে হাজারো প্রজাতির মৎস্য ও জলজ প্রাণির পোনা।

নদীর বিভিন্ন স্থানে গিয়ে দেখা যায়, নিষিদ্ধ মশারি ও ঠেলা জাল দিয়ে জেলেরা লাখ লাখ চিংড়ির রেনু আহরণ করে বিক্রি করছে স্থানীয় ব্যাপারিদের কাছে। তারা সেগুলো দ্বিগুণ দামে বিক্রি করছেন খুলনা, বাগেরহাট ও যশোরসহ দেশের বিভিন্ন চিংড়ি ঘের মালিকদের কাছে।

ফেনী নদীর মুহুরী রেগুলেটরের দুই পাশে, চর খোন্দকার, সোনাগাজী সদর ইউনিয়নের জেলে পাড়া, সুজাপুর, থাক খোয়াজ লামছি, ছোট স্লুইচ গেট, ভাঙ্গাবেড়ী, চর খোয়াজের লামছিসহ বেশ কিছু স্থানে গিয়ে চিংড়ির আহরণ এবং মৎস্য প্রজাতির এ ধ্বংস লীলা দেখা যায় প্রতি বছর এপ্রিল থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত। অথচ প্রজনন মৌসুম থাকায় এ সময়টাতে নদীতে মাছ ধরার প্রতি রয়েছে সরকারি নিষেধাজ্ঞা।

ফেনী নদীর মুহুরী সেচ প্রকল্প এলাকা থেকে শুরু করে চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ের ইছাখালী, বানচন্দ খাল পর্যন্ত এবং ছোট ফেনী নদীর কাজীর হাট স্লুইচ গেট থেকে দক্ষিণে সন্দ্বীপ চ্যানেল পর্যন্ত বিশাল উপকূলীয় এলাকায় প্রতিদিনই লাখ লাখ চিংড়ি পোনা আহরণ করা হচ্ছে। এতে খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট এবং সোনাগাজী উপকূলীয় অঞ্চলের কয়েক হাজার মানুষ শুধু নদীতে চিংড়ি পোনা আহরণ করেই তাদের জীবিকা নির্বাহও করছে।

পোনা আহরণের জন্য এসব জেলেরা প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় গড়ে তুলেছে অবৈধভাবে অসংখ্য টিনের ঘর। ফেনী থেকে ঢাকা, খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলার চিংড়ি ঘেরগুলোতে পোনা পাঠানো হয়। শুধু সোনাগাজী এলাকা থেকেই দৈনিক লক্ষাধিক চিংড়ি পোনা বৃহত্তর ঢাকা ও খুলনা অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়।

শাখাওয়াত হোসেন নামের খুলনা থেকে আসা আরেকজন জানান, তিনি প্রতি বছরই এপ্রিল-জুন তিন মাসের জন্য এলাকায় চিংড়ির রেনু পোনা আহরণের জন্য আসেন। স্থানীয় কালু মিয়া মহাজনের মাধ্যমে তিনি পোনাগুলো বিক্রি করেন।

মানু মিয়া নামে স্থানীয় সোনাপুর এলাকার আরেকজন জানান, চিংড়ির রেনু সংগ্রহ করার সময় কোরাল, কাঁকড়া, চিড়িং, বাইলা, মলা, ঢেলা, টেংরা, পোয়া, লইট্টা, ভেটকিসহ অনেক প্রজাতির পোনা আসে। তারা শুধু চিংড়ি পোনা আহরণ করেন বাকিগুলো ফেলে দেন। 

মুহুরী রেগুলেটর এলাকায় চিংড়ির রেণু আহরণকারী মানু মিয়া নামের একজন ছবি তুলতে দেখে মন্তব্য করছিলেন ‘সবতো ম্যানেজ, ছবি-টবি তুলে কোনো কাম হবে না’। আরো কয়েকজন মৎস্যজীবীর সঙ্গে কথা বলেও একই ধরনের বক্তব্য পাওয়া যায়। তাদের দাবি তাদের এ প্রক্রিয়ায় স্থানীয় চেয়ারম্যান মেম্বার থেকে শুরু করে প্রশাসন এবং কী মৎস্য অফিসও জড়িত। এখানকার আহরণ করা চিংড়ির টাকা সবার পকেটেই যায়। 

স্থানীয়রা বলছেন, নিজাম জমিদার, মফিজ জমিদার (ক্যারপেডি), ওবায়দুল হকসহ অন্যরা প্রকাশ্যে ছোট ছোট ঘর করে খুলনা, বাগেরহাট, যশোর থেকে লোক এনে এ ব্যবসা পরিচালনা করছে। সবার সামনেই ড্রামে করে নিয়ে যাচ্ছে এসব পোনা, নেওয়া হয় না কোনো ধরনের ব্যবস্থা। 

স্থানীয়রা জানান, এক সময় এ অঞ্চলে অনেক মাছ পাওয়া যেত। এভাবে চিংড়ির আহরণ করতে গিয়ে মাছের অনেক প্রজাতি ধ্বংস হয়ে গেছে, এর ফলে নদীতে আর আগের মত মাছ পাওয়া যায় না। এলাকার সাধারণ মানুষ বলছেন, প্রাকৃতিক উৎস হতে বেপরোয়াভাবে এই রেনু ধরা বন্ধ করার দরকার। অনেকে অভিযোগ করেন, এক শ্রেণির লোভী ব্যবসায়ী স্থানীয় প্রশাসনকে ‘ম্যানেজ’ করেই অবাধে চলাচ্ছে এ রেনু সংগ্রহ।

গরিব মৎস্যজীবীদের ঠেকানো যাচ্ছে না। তারা অবৈধভাবেই নদী ও খাল থেকে গলদা ও বাগদার রেনু পোনা আহরণ করছেন। এ প্রবণতা আরও বেড়ে গেছে বিগত কয়েক বছরে হ্যাচারিগুলোতে কৃত্রিমভাবে পোনা উৎপাদন প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকে। এখন ঘের মালিকরা সবাই গলদা চিংড়ির জন্য প্রাকৃতিক মৎস্য সম্পদের ওপরই পুরোপুরি নির্ভলশীল হয়ে আছে। এর ফলে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক মৎস্য সম্পদ দিন দিন মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সোনাগাজী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তূর‌্য সাহা বলেন, ‘ আমরা প্রতিবছর অভিযান পরিচালনা করি। এবছরও অভিযান হবে। সব সময় না পারলেও মৌসুমে মাঝেমধ্যেই আমরা অভিযান পরিচালনা করি। অভিযানে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট থাকলে জেল-জরিমানা করা হয়। এছাড়াও অবৈধভাবে চিংড়ির রেনু ধরার কাজে ব্যবহারিত জাল ধ্বংস করে দেওয়া হয়। এবং চিংড়ির পোনাগুলো নদীতে ফেলে দেওয়া হয়।

উপজেলা প্রশাসন থেকে সহায়তা নিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালানো হবে এবং শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।

তিনি আরও জানান, এই রেনু আহরণে বেশি ক্ষতি হচ্ছে ইলিশের। এ থেকে উত্তরণের জন্য দরকার ব্যাপক গণসচেতনতা ও জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থান।

 

একুশে সংবাদ/বা.এন.24/রখ

Link copied!