AB Bank
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

র‌্যাবের জালে পানি দেখে রোগ নির্ণয় করা চিকিৎসক


Ekushey Sangbad
আব্দুল বাতেন, রাজশাহী
০১:২৬ পিএম, ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
র‌্যাবের জালে পানি দেখে রোগ নির্ণয় করা চিকিৎসক

রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার তাহেরপুর পৌরসভার হরিফলা মহল্লায় নিজ বাড়িতে পানি দেখে রোগ নির্ণয় করে চিকিৎসা দেয়ার নামে প্রতারণা চালানো সেই কথিত চিকিৎসক মাহাবুর রহমান রাজুকে দুই সহযোগিসহ গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। 

 

মঙ্গলবার (৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে র‌্যাবের একটি দল অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে।

 

গ্রেপ্তার তার দুই সহযোগির মধ্যে একজনের নাম হাসান। সে রাজুর দেহরক্ষী হিসেবে তার সঙ্গে সব সময় থাকে। তার ক্যাডার বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণ করে হাসান। আর অপরজনের নাম আলামিন। সে চিকিৎসা সহকারি হিসেবে সব সময় রাজুর চেম্বারে তাকে।

 

র‌্যাব সূত্রে জানা গেছে, সোমবার ও মঙ্গলবার গণমাধ্যমে চিকিৎসার নামে প্রতারণার একটি খবর প্রকাশিত হয়। সেটি আমলে নিয়ে র‌্যাব মাহাবুর রহমান রাজুর বাড়িতে অভিযান চালায়। এ সময় রাজু চিকিৎসক হিসেবে কোন বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। এছাড়াও চিকিৎসার নানা কৌশল অবলম্বর করে সে রোগিদের সাথে প্রতারণা করে আসছিল। যার প্রমানও পাওয়া যায়। এ কারণে দুই সহযোগিসহ রাজুকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

 

প্রায় ১০ বছর ধরে নিজ বাড়িতে চিকিৎসার নামে প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছেন ধর্ষণ ও হত্যার দায়ে ৪৪ বছর সাজাপ্রাপ্ত কথিত গ্রাম্য চিকিৎসক মাহাবুর রহমান রাজু। চিকিৎসাবিদ্যা না থাকলেও সমাধান দিচ্ছেন হৃদরোগসহ জটিল সব রোগের। এতে প্রতারিত আর সর্বশান্ত হচ্ছেন হাজারো মানুষ।

 

সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, রোগির সামনে রাখা হয়েছে এক গ্লাস পানি। সেই পানিতে দেখেই রোগির রোগ নির্ণয় এবং কি চিকিৎসা দেয়া হবে তা বলে দিচ্ছেন কথিত গ্রাম্য চিকিৎসক মাহাবুর রহমান রাজু। বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন দেড় থেকে দুইশো রোগি চিকিৎসা নিতে যায় তার কাছে। পুরাতন রোগিদের কাছে এক হাজার নিলেও নতুন রোগিদের গুনিতে হয় দুই থেকে তিন হাজার টাকা। আর সাথে ধরিয়ে দেন কিছু ওষুধও।

 

জানতে চাইলে নিজেকে এসএসসি পাস দাবি করলেও কত সালে পাস করেছেন তা জানাতে পারেননি এই এই প্রতারক চিকিৎসক। কোন প্রশিক্ষণ না থাকলেও হৃদরোগসহ জটিল সব রোগের চিকিৎসা দিচ্ছেন মাহাবুর রহমান।

 

শনিবার বেলা ১১টার দিকে সরজমিনে গিয়ে তার বাড়িতে দেখা গেল ২০ থেকে ২৫ জন রোগি রয়েছে। এক এক করে চিকিৎসা নিয়ে চলে যাচ্ছেন।

 

নাটোর জেলার গুরুদাসপুর এলাকা থেকে সন্তান না হওয়ায় স্ত্রীকে নিয়ে চিকিৎসা নিতে এসেছেন জনৈক এক ব্যক্তি। তিনি জানান, এক মাস আগে তিনি একবার এসে চিকিৎসা নিয়ে গেছেন। সে সময় কিছু ওষধ দিয়ে তার কাছে তিন হাজার টাকা নেয়া হয়েছিল। চিকিৎসক তাকে এক মাস পর আসতে বলে। তার কথামত এসেছি। আবার দুই হাজার টাকার ওষধ দিয়েছে।

 

সন্তান না হওয়ার সমস্যা নিয়ে নওগাঁর মান্দা এলাকা থেকে এসেছেন আরেক নারী। তিনি জানান, এক সপ্তাহ আগে এখান থেকে ওষধ নিয়ে গিয়ে খেয়েছেন। ওষধ খাওয়ার পর তার পেটে প্রচন্ড ব্যথা করছে। তাই তিনি এসেছেন। এবার তার ওষধ পরিবর্তন করে দেয়া হয়েছে।

 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রতিবেশী ও ভুক্তভোগিরা জানান, চিকিৎসার নামে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন ধর্ষণ ও হত্যার দায়ে ৪৪ বছরের সাজাপ্রাপ্ত মাহাবুর রহমান রাজ। ২০১২ সালে উচ্চ আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পেয়ে শুরু করেন এই প্রতারনা।

 

প্রতিবেশীরা আরও জানান, মাহাবুর রহমান রাজু সপ্তম শ্রেণী পর্যন্ত লেখা পড়া করেছেন। তার পিতা মোহাম্মদ আলী সবজি ব্যবসায়ী ছিলেন। চিকিৎসার নামে প্রতারণা করে গত ১০ বছরে তিনি কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। নির্মাণ করেছেন কোটি টাকা ব্যয়ে তিন তালা বাড়ি।

 

তাদের অভিযোগ, চিকিৎসা নিতে আসা নারী রোগীদের অনৈতিক প্রস্তাব দেয়ারও। ভালো মহিলা দেখলে ঘরে নিয়ে যান। বিভিন্ন কথাবার্তা বলেন। এ ধরনের অনেক ঘটনা রয়েছে।

 

প্রতিবেশীরা জানান, বাড়ির চারপাশে সিসি ক্যামেরা বসিয়েছেন মাহাবুর। এছাড়াও নিজের নিরাপত্তায় রয়েছে দেহরক্ষি ও ক্যাডার বাহিনী। যাদের ব্যববহার করে এলাকায় জমি দখলসহ তার বিরুদ্ধে কেউ কিছু বললে ভয়ভিতি দেখানো হয়। এছাড়াও মিথ্যা মামলা দিয়েও হয়রানি করেন এই প্রতারক।

 

তাদের দাবি, মাহাবুরের অত্যচারে এখন অতিষ্ঠ এলাকাবাসী। সঠিক তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ চায় এলাকাবাসী।

 

কথিত গ্রাম্য চিকিৎসক মাহাবুর রহমান রাজু বলেন, ‘রোগী পানি নিয়ে আসলে তা দেখে ওই রোগী বিস্তারিত আমি বুঝতে পারি। সেই অনুপাতে তার চিকিৎসা দিয়ে থাকি।’

 

তিনি বলেন, যেসব মেয়েদের সন্তান হয় না, যাদের পেট, কমর ও হাটুতে ব্যথা, যাদের হৃদরোগ ও শ্বাসকষ্টের সমস্যা আছে এ ধরণের রোগি আমার কাছে বেশী আসে। যারা আমার কাছে চিকিৎসা নিয়েছেন তারা সবাই ভালও হন বলে দাবি এই প্রতারকের।

 

চিকিৎসাবিদ্যায় পারদর্শী হয়েই সেবা দিয়ে সেবা দিয়ে আসছি দাবি করে মাহাবুর রহমান রাজ বলেন, ‘ডাক্তারির উপরে প্রাকটিস করেছি, আমার গ্রাম্য চিকিৎসকের সার্টিফিকেটও আছে। আমি রোগ বলে দিই। যারা চিকিৎসা চায় তাদের চিকিৎসা দেই। আমি কাউকে নিজে থেকে চিকিৎসা দেয় না বলেন এই কথিত চিকিৎসক।’

 

রাজশাহীর সিভিল সার্জন ডা: আবু সাইদ মোহাম্মদ ফারুক বলেন, ‘পানিতে দেখে কোনভাবেই রোগ নির্ণয় সম্ভাব নয়। এটি একটি প্রতারণা। বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে’ বলে জানান তিনি।

 

একুশে সংবাদ/এসএপি

Link copied!