AB Bank
ঢাকা মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

টাংগাইলে চাঞ্চল্যকর ক্লুলেস হত্যার রহস্য উদঘাটন করলো পিবিআই


Ekushey Sangbad
নিজস্ব প্রতিবেদক
০৬:৪৭ পিএম, ২২ ডিসেম্বর, ২০২১
টাংগাইলে চাঞ্চল্যকর ক্লুলেস হত্যার রহস্য উদঘাটন করলো পিবিআই

ছবি: একুশে সংবাদ

বেলাল দেওয়ান:ঘটনার মাত্র ৫ দিনের মধ্যে চাঞ্চল্যকর ক্লু-লেশ হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করলো টাঙ্গাইল জেলার পিবিআই পুলিশ। 

গত ১৭/১২/২০২১ তারিখ টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুর থানাধীন আজগানা ইউনিয়নের ঘাগড়া সাকিনস্থ “এসএবি” ইট ভাটার পশ্চিম পাশে কলাবাগানে অজ্ঞাতনামা এক মহিলার অর্ধগলিত লাশ পড়ে আছে মর্মে সংবাদ পাওয়া যায়। তৎপ্রেক্ষিতে টাঙ্গাইল জেলার পিবিআই পুলিশ সুপারের  নির্দেশে একটি চৌকস ক্রাইমসিন টিম দ্রুততার সাথে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করে এবং থানা পুলিশকে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করে। 

পিবিআই টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে জানতে পারে যে, ইটভাটার লেবার সর্দ্দার মতিউর রহমান কলাবাগান থেকে দুর্গন্ধ পেয়ে, উক্ত কলাবাগানে গিয়ে, ঘটনাস্থলের পাশে পড়ে থাকা ভ্যানেটি ব্যাগ দেখতে পায় এবং উক্ত ব্যাগের পাশে মাটি চাপাবস্থায় একজন মানুষের পা দেখতে পায়। সে তাৎক্ষনিক ইট ভাটার মালিকদেরকে ও মির্জাপুর থানায় ফোন করে ঘটনাটি অবগত করলে মির্জাপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে মৃতার লাশের সুরতহাল রির্পোট প্রস্তুত করে লাশের ময়না তদন্তের জন্য টাঙ্গাইল জেলার সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরন করেন। ভিকটিমের পরিচয় অজ্ঞাত থাকায় পিবিআই টাঙ্গাইল টিম তাৎক্ষনিক পরিচয় সনাক্ত করার জন্য অজ্ঞাতনামা মহিলার লাশের ফিংগার প্রিন্ট গ্রহন পূর্বক তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে অজ্ঞাতনামা লাশটির পরিচয় শনাক্ত করে। অজ্ঞাতনামা মহিলার নাম-নাজমা বেগম (৩১), পিতা-আঃ রহমান, মাতা-অজুফা বেগম, সাং-দেবীর চর বেড়ীবাঁধ হাওলাদার বাড়ী, থানা-লালমোহন, জেলা-ভোলা মর্মে জানা যায়।

পিবিআই টাঙ্গাইল জেলা হত্যা মামলাটির ছায়া তদন্ত শুরু করে, মামলাটির ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনসহ হত্যার সাথে জড়িত ব্যক্তি/ব্যক্তিদের গ্রেফতার করার জন্য তদন্ত শুরু করে। পিবিআই টাঙ্গাইল টিম মৃতার আত্মীয় স্বজন, ও ইটভাটার শ্রমিকদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পারে, মোঃ ওয়াসিম নামে এক ব্যক্তি মৃতার ২য় স্বামী। উক্ত ওয়াসিমের সাথে দেখা করার জন্য মৃতা নাজমা গত ১১/১২/২০২১ তারিখ টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুর থানা এলাকার “এসএবি” ইট ভাটায় আসে। “এসএবি” ইট ভাটার লেবার সর্দ্দার মতিউর রহমান জানায় মোঃ ওয়াসিম হক (৪০), পিতা-ইছাহক, মাতা-মেহেরুন, সাং-ডাঙ্গারপাড়া, থানা-খানসামা, জেলা-দিনাজপুর উক্ত ইটভাটায় শ্রমিক হিসাবে কাজ করে। কিন্তু গত ১২/১২/২০২১ তারিখ ভোর বেলা থেকে ওয়াসিম গরহাজির এবং পলাতক আছে। অন্যান্য শ্রমিকরা জানায় ওয়াসিমের দ্বিতীয় স্ত্রী তার সাথে দেখা করার জন্য অত্র ইটভাটায় এসেছিল, তারা দেখেছে। তবে লাশটি অর্ধগলিত থাকায় লাশের মুখ দেখে তারা চিনতে পারেনি। উক্ত ঘটনায় মির্জাপুর থানায় একটি হত্যা মামলা রুজু হয়। পিবিআই তদন্ত টিম পলাতক ওয়াসিমকে গ্রেফতার করার জন্য ঢাকা, দিনাজপুরসহ সম্ভাব্য বেশ কয়েকটি স্থানে অভিযান চালায়। এক পর্যায়ে বিভিন্ন গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ওয়াসিমের অবস্থান শনাক্ত পূর্বক দিনাজপুর জেলার খানসামা থানাধীন মুন্সিপাড়া এলাকা থেকে গতকাল তাকে গ্রেফতার করে পিবিআই পুলিশ।   

গ্রেফতারকৃত আসামী ওয়াসিমকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ কালে জানায় যে, ২০১৯ সালে মোহাম্মদপুর থানাধীন ঢাকা উদ্যানের পাশে একটি ইট ভাটায় কাজ করা কালে নাজমা বেগমের সাথে পরিচয় হয়। নাজমা বেগম উক্ত ইট ভাটায় শ্রমিকদের বাবুর্চির কাজ করত। ইট ভাটায় ৪/৫ মাস কাজ করে, এই সময়ে নাজমা বেগমের সাথে ওয়াসিমের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ২০২০ সালে শুরুর দিকে দেশব্যাপি করোনা মহামারীর জন্য ইটভাটার কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ওয়ানিসমসহ অন্যান্য শ্রমিক মিলে নিজ এলাকা দিনাজপুর চলে যাওয়ার সিন্ধান্ত নেয়। ওয়াসিম দিনাজপুর চলে যাওয়ার সংবাদটি নাজমা বেগমকে মোবাইল ফোনে জানালে নাজমা ওয়াসিমকে বলে যে, ‘‘দেশে তো চলে যাবা, আমার বাসায় আসিয়া একটু দেখা কইরা যাও’’। তখন ওয়াসিম একাই নাজমার সাথে দেখা করার জন্য ঢাকা উদ্যানে যায়। নাজমা ওয়াসিমকে অনুরোধ করে তার ভাড়া বাসায় যাওয়ার জন্য। ওয়াসিম নাজমার বাসায় গিয়ে দেখতে পায় যে, পূর্বে থেকে তার বাসায় দুই জন মহিলা ও একজন মুরব্বী পুরুষ লোক অবস্থান করছে। নাজমার সাথে কিছুক্ষন আলাপচারিতা শেষে ওয়াসিম চলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিলে নাজমা ওয়াসিমকে বলে যে, ‘‘আমি কি তোমাকে যাওয়ার জন্য এখানে ডেকে নিয়া আসছি, আজ আমাকে তোমার বিয়ে করতে হবে’’। অতঃপর নাজমা বেগম তার বাসায় থাকা লোকজনের সহায়তায় জোর পূর্বক কাজী দিয়ে তিন লক্ষ টাকা দেনমোহর ধার্য্যে তাদের বিবাহ সম্পন্ন করে। বিবাহ সম্পন্ন হওয়ার পর, ঐদিনই ওয়াসিম অন্যান্য শ্রমিকদের সাথে দিনাজপুর চলে যায়। ওয়াসিম দিনাজপুর চলে গিয়ে নাজমা বেগমের সাথে কিছু দিন গোপনে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ রাখে। পরবর্তীকে নাজমা বেগমের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। অত্র মামলার ঘটনার প্রায় ১ মাস পূর্বে টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুর থানাধীন আজগনা ইউনিয়নের ঘাগড়া সাকিনস্থ “এসএবি” ইট ভাটায় লেবার সর্দার মতিউর রহমানের সাথে “এসএবি” ইট ভাটায় কাজ করতে আসে এবং দৈনন্দিন কাজ শেষে ইট ভাটার অন্যান্য শ্রমিকদের সাথে রাত্রি যাপন করতো। উক্ত ইট ভাটায় কাজ করতে আসার দুই দিন পর নাজমা বেগম জানতে পারে, ওয়াসিম মির্জাপুরে ইট ভাটায় কাজে যোগদান করেছে। ওয়াসিম কাজে যোগদান করার বিষয়টি নাজমা মোবাইল ফোনে ওয়াসিমকে জানায় এবং ওয়াসিমকে নাজমা বেগমের ঢাকার বাসায় যেতে বলে। 

ওয়াসিম নাজমার সাথে যোগাযোগ করে বসিলা এলাকায় নাজমার ভাড়া করা বাসায় যায়। নাজমার ভাড়া বাসায় ওয়াসিম যাওয়ার পর ওয়াসিমের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি নাজমা বেগম নিয়ে ওয়াসিমের আত্মীয় স্বজনদের কাছে ফোন দিয়ে তাদের বিয়ের সংবাদটি জানায়। এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে ঝগড়াঝাটি হয়। এক পর্যায়ে ওয়াসিম মোবাইল ফোনটি রেখে বাসা থেকে বের হয়ে মির্জাপুরের ইটভাটায় চলে আসে। ওয়াসিম চলে আসার দুই দিন পর নাজমা ও তার ভাই পরিচয় দানকারী এক জনকে সাথে নিয়ে ওয়াসিমের মোবাইল ফোনসহ মির্জাপুর ইটভাটায় আসে। নাজমা ওয়াসিমের সাথে ইটভাটায় থাকতে চায়। ওয়াসিম জানায় ভাটার ভিতরে বউ নিয়া থাকার সুযোগ নাই। নাজমা এবং ওয়াসিমের মধ্যে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। তখন ওয়াসিম নাজমাকে বুঝিয়ে চলে যেতে বলে এবং এক সপ্তাহ পরে আসলে তাকে নিয়ে বাসা ভাড়া করে থাকবে বলে জানায়। অতঃপর গত ১১/১২/২০২১ তারিখ রাত অনুমান ৮ ঘটিকার নাজমা ইটভাটায় আসলে ওয়াসিম নাজমাকে নিয়ে তাদের মেসের মহিলা বাবুর্চির বাসায় যায়। ওয়াসিম ও নাজমা কিছু সময় মহিলা বাবুর্চির বাসায় অবস্থান করে। মহিলা বাবুর্চ্চি ওয়াসিমকে বলে আজ রাতে নাজমা একা তার সাথে থাকুক এবং পরের দিন তাদেরকে বাসা ভাড়া করে দিবে। উক্ত কথা শুনে নাজমা রাগানি¦ত হয়ে ওয়াসিমের সাথে বাবুর্চ্চির বাসা থেকে বের হয়ে চলে এসে ইট ভাটার পাশেই কলাবাগানে বেশ কিছু সময় অবস্থান করে, নিজেদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথাকাটাকাটি ও ঝগড়াঝাটি করে। নাজমা বেগম ওয়াসিমের কাছ থেকে বিবাহের দেনমোহর হিসেবে তিন লক্ষ টাকা ফেরতসহ ডিভোর্স চায়, তা না হলে মামলা মোকদ্দমা দায়ের করবে মর্মে ভয়ভীতি দেখায়। একপর্যায়ে রাত অনুমান ২ ঘটিকার সময় ওয়াসিম রাগানি¦ত হয়ে নাজমা বেগমের গলায় থাকা ওড়না দিয়ে নাজমা বেগমের গলায় পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে উক্ত লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে কলাবাগানের ভিতরে মাটি দিয়ে ঢেকে রেখে ইট ভাটায় রাত্রী যাপন করে ভোর বেলায় কাউকে কিছু না বলে ইট ভাটা থেকে গোপনে পালিয়ে যায়।   

এ সংক্রান্তে পুলিশ সুপার, পিবিআই টাঙ্গাইল, জনাব মোহাম্মদ সিরাজ আমীন বলেন, তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে অজ্ঞাতনামা লাশটির পরিচয় শনাক্ত করা হয়। অজ্ঞাতনামা মহিলার নাম-নাজমা বেগম (৩১), পিতা-আঃ রহমান, মাতা-অজুফা বেগম, সাং-দেবীর চর বেড়ীবাঁধ হাওলাদার বাড়ী, থানা-লালমোহন, জেলা-ভোলা মর্মে জানা যায়। ভিক্টিমের আত্মীয় স্বজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, সে তার স্বামী ওয়াসিমের সাথে দেখা করার জন্য গত  ১১/১২/২০২১ তারিখ টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুর থানা এলাকার “এসএবি” ইট ভাটায় আসে। তার পর থেকে ভিক্টিমের সাথে আর কোনরূপ যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না, তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি ও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। ইট ভাটার শ্রমিকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ওয়াসিম “এসএবি” ইট ভাটার একজন শ্রমিক, সে গত ১২/১২/২০২১ইং তারিখ থেকে পলাতক রয়েছে। 

পিবিআই টাঙ্গাইল পলাতক ওয়াসিমকে গ্রেফতার করার জন্য ঢাকা, দিনাজপুরসহ সম্ভাব্য বেশ কয়েকটি স্থানে অভিযান চালায়। ওয়াসিমের অবস্থান শনাক্ত পূর্বক দিনাজপুর জেলার খানসামা থানাধীন মুন্সিপাড়া এলাকা থেকে ২১/১২/২০২১ তারিখে তাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়। গ্রেফতারকৃত আসামী ওয়াসিম, আমাদের জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, সে তার দ্বিতীয় স্ত্রী ভিক্টিম নাজমাকে গলায় ওড়না পেচিঁয়ে হত্যা করে, লাশগুম করার উদ্দেশ্যে কলাবাগানের মধ্যে মাটির নীচে পুঁেত রেখে সকলের অগোচরে পালিয়ে যায়। 

সে স্বেচ্ছায় বিজ্ঞ আদালতে দোষ স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দিতে রাজি হয়। পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।  
  

একুশে সংবাদ..এইচআই.

Link copied!