এক সময়ে গ্রাম-গঞ্জের মাঠে-ঘাটে, বনে জঙ্গলে, গাছে গাছে শালিকসহ নানা ধরনের পাখি দেখা গেলেও কালের বিবর্তনে এখন আর চিরচেনা সেই শালিক পাখি দেখা যায় না। পাখি দেখার কলরবে মুখর গ্রামের মেঠো পথ এখন পাখিশূন্য হতে চলছে। বনে জঙ্গলে গাছে পাখি দেখার সেই অপরূপ দৃশ্যপট পাল্টে যাচ্ছে। দূরভীন ব্যবহার করেও দুষ্কর হয়ে পড়েছে পাখির দেখা। শালিক প্রজাতি পাখির মধ্যে রয়েছে ভাত শালিক, ঝুটি শালিক, গাঙ শালিক, বামন বা শঙ্খ শালিক, চিত্রা শালিক, গোলাপী শালিক, কাঠ শালিক এবং ময়না।
ছোট আকৃতির ধূসর রঙের এই পাখিগুলো অত্যান্ত নিরীহ ও শান্ত স্বভাবের। ক্ষেতের ক্ষতি কারক পোকা-মাকড় খেয়ে কৃষিপণ্য উৎপাদনে সহায়তা করে বলে আমরা এদের উপকারী পাখি বলি। আগে ক্ষেত-ক্ষামারে অসংখ্য শালিক পাখি দেখা যেতো। সকাল-সন্ধায় কিচির-মিচির শব্দে মুখরিত করে তুলতো সেকালের পল্লী গাঁয়ের বাঁশ বাগান। মনে হতো এ যেন শালিক পাখির হাট। শালিক পাখির কিচির-মিচির শব্দে ভেঙ্গে যেত সাধারন মানুষের ভোরের ঘুম। কিন্তু বড়ই দুঃখের বিষয়! ফসলের জমিতে কীটনাশক ব্যবহারে অতি চেনা এই পাখি হারিয়ে যাচ্ছে। মূলত শালিক পাখি আমাদের কোন ক্ষতি করে না। বরং এরা কৃষি জমির ক্ষতি কারক পোকা-মাকড় খেয়ে আমাদের ক্ষেতের ফসল রক্ষা করে। অথচ পরোপকারী এই পাখি গুলোই অবাধে নিধন করা হচ্ছে।
এলাকাবাসী জানায়, ফসলে অতিরিক্ত কীটনাশক প্রয়োগ ও খাদ্যের অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে দেশি প্রজাতির বিভিন্ন পাখি। এই পাখিগুলো টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারের সুদৃষ্টি দেওয়ার পাশাপাশি জনসচেতনতা বাড়াতে হবে।
কৃষক, সালেক,ফরিদ, জাবেদ,জামালসহ অনেকে বলেন, `ধান,গমসহ সব ধরনের ফসলে বিষ বা কীটনাশক না দিলে ফসল করাই সম্ভব নয়। কারণ বিষ প্রয়োগ না করলে বিভিন্ন রোগ বালাই, পোকা মাকড়ে ফসল শেষ করে দেবে।`তাই বেশি ফলনের জন্য কীটনাশক ব্যবহার করা হয়।
পাখি প্রেমিক জহিরুল ইসলাম বলেন, শালিকসহ সুন্দর সুন্দর পাখি হারিয়ে যাওয়ার কারণ হচ্ছে অবাধে বৃক্ষনিধন এবং বনাঞ্চাল ধ্বংস। এক সময় গ্রামাঞ্চলের মানুষ আখ, ধান, গম ও সরষে ক্ষেতে ঝাঁকে ঝাঁকে শালিক পাখি দেখতে পেত। এখন তা আর চোখে পড়ে না। শালিক পাখির খাদ্য তালিকায় রয়েছে শস্যদানা, পোকামাকড় ও নানা ফল।
শালিক পাখিসহ দেশীয় অন্যান্য পাখি রক্ষায় প্রশাসনসহ গ্রামের সকল প্রকারের মানুষ কে পাখি শিকারী দের হাত থেকে এবং পাখির ক্ষতি করে এমন কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :