AB Bank
  • ঢাকা
  • রবিবার, ০৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ২২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

উজিরপুরের হারিয়ে যাওয়া বারোপাইকা গ্রাম


Ekushey Sangbad
মোয়াজ্জেম হোসেন
১১:০৪ এএম, ৯ নভেম্বর, ২০২৪

উজিরপুরের হারিয়ে যাওয়া বারোপাইকা গ্রাম

বারোপাইকা,বরিশালের উজিরপুরের গর্ব, মনভুলানো সৌন্দর্যের প্রতীক "সন্ধ্যা নদী"র তীরে বর্তমান পৌরএলাকার হারিয়ে যাওয়া একটি গ্রামের নাম।বারোপাইকা গ্রামকে খুঁজতে হলে আপনাকে উজিরপুর উপজেলা সদরের একটি ঐতিহ্যবাহী, স্বনামধন্য স্কুলের পরিচয় জানতে হবে আগে।

স্কুলটির বর্তমান (২০২৪) নাম- " সরকারি ডব্লিউ.বি ইউনিয়ন মডেল ইন্সটিটিউট"। উজিরপুর ডাকবাংলোর পূর্ব পাশে অবস্থান যার। স্কুলের পুরো নাম-সরকারি উজিরপুর বারোপাইকা ইউনিয়ন মডেল ইন্সটিটিউট।
উজিরপুর গ্রাম বা উপজেলা সদর সবাই চেনেন কিন্তু বারোপাইকা গ্রাম কোথায়? তরুণ প্রজন্মের কাছে তা অজানা এক রহস্য।

১৮৯৮ সালে উজিরপুর গ্রামের দক্ষিণ সীমানায় (বারোপাইকা গ্রাম লাগোয়া) প্রতিষ্ঠিত এই স্কুলটি সন্ধ্যা নদীর অব্যাহত ভাঙনের কারণে ১৯৫৮ সালে বর্তমান স্থানে স্থানান্তর করা হয়। বারোপাইকা গ্রামটি পুরো নদীতে বিলীন হয়ে যায়। আবার নদীতে চর পড়ার কারণে বর্তমানে গ্রামটি জেগে উঠছে। উজিরপুর গ্রামের যেখানে স্কুলটি ছিল সেখানের ৩৩ শতাংশ জমি এখনো স্কুলের ভোগদখলে।

অন্যদিকে নদীগর্ভে থাকায় ভূমি জরিপে বারোপাইকা গ্রামটিকে মৌজা থেকে বাদ দেয়া হয়।

স্কুলটির নামকরণের ব্যাপারে বিশিষ্ট ইতিহাস গবেষক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব জাহাঙ্গীর হোসেন বাচ্চু ফকির জানান, তৎকালীন বারোপাইকা গ্রামের-রসিক চন্দ্র রায় ও উজিরপুর গ্রামের পরমানন্দ  মোহন ঘোষের প্রচেষ্ঠায় স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হয় বলে দুটি গ্রামের নামে স্কুলটির নামকরণ করা হয়, উজিরপুর বারোপাইকা ইউনিয়ন মডেল ইন্সটিটিউট সংক্ষেপে ডব্লিউ বি ইউনিয়ন মডেল ইন্সটিটিউট।

তবে মানুষের মুখে মুখে এখন গ্রামটির নাম হয়েছে হানুয়া-বারোপাইকা। হানুয়া, বারোপাইকা ও উজিরপুর ৩টি গ্রাম পাশাপাশি ছিল। হিন্দু অধ্যুষিত এই বারোপাইকাসংলগ্ন উজিরপুর গ্রামের মুখার্জি পরিবার বাংলা সংগীত জগতে অতিপরিচিত নাম। 

এ স্কুলটি প্রতিষ্ঠায় মুখার্জিদেরও অবদান ছিল বলে জানা যায়।এ পরিবারের গজেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় ছিলেন সংগীত ও সাহিত্যপ্রমী। তার ১১ সন্তানের মধ্যে রত্নেশ্বর, সিদ্ধেশ্বর ছিলেন সংগীতজ্ঞ। গজেন্দ্রনাথের আরেক সন্তান ছিলেন অতুলচন্দ্র নাথ মুখোপাধ্যায়, কোলকাতার আর্কিটেকচার। ভারতীয় উপমহাদেশের শাস্ত্রীয় সংগীতজ্ঞ, নজরুলের গানকে "নজরুলগীতি" হিসেবে বিশ্বে পরিচিতি এনে দেন যে ব্যক্তিটি তিনি মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায় এই অতুল চন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের ছেলে। অর্থাৎ গজেন্দ্রনাথের ছেলের ঘরের নাতি মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়।

প্রয়াত মানবেন্দ্রর সন্তান মানসী মুখোপাধ্যায় ভারতীয় সংগীতের পরিচিত নাম। মানসী এখনো গান করে যাচ্ছেন।

মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায় বাড়ির সাথের "উজিরপুর-বারোপাইকা ইউনিয়ন মডেল ইন্সটিটিউট" থেকেই এসএসসি সমমান পাস করেন ১৯৪৬ সালে।

বারপাইকা গ্রামের নামকরণের ইতিহাসে যেটুকু জানা যায়- ১৫৮৪খৃ: প্রলয়ংকরী জলোচ্ছ্বাসের পরপরই চন্দ্রদ্বীপের রাজা কর্দপ নারায়ণ সিংহাসনে বসেন। তখন থেকে শুরু করে ১৭৪০খৃ: পর্যন্ত চলছিল মগ- পর্তুগিজদের লুন্ঠন ও হত্যাকাণ্ড। 

এই মগ জলদস্যুদের শায়েস্তা করার জন্য রাজা কন্দপ নারায়ণ চন্দ্রদীপের জলসীমায় সৈন্য সমাবেশ করেন। তারই ধারাবাহিকতায় উজিরপুরের সন্ধ্যা (তৎকালে সুগন্ধা) নদীর দক্ষিণ পার্শ্ববর্তী এলাকায় সৈন্য (১২শ সৈন্য) সমাবেশ করেন। তৎকালীন সময় সৈনিকদের "পাইক" বলা হত।এবং এভাবেই ঐ স্থানটির নাম "বারশো পাইক"। পরে পাইক থেকে "পাইকা" হয়ে যায়। মানে বারোপাইকা।

কালক্রমে বারোপাইকা নাম হয় বলে জানা গেছে। নদীগর্ভে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া  এই ঐতিহাসিক গ্রামটি, উজিরপুর বন্দর সংলগ্ন লঞ্চ টার্মিনালের পাশে হানুয়া গ্রামের সাথেই বিশাল চরে জেগে উঠেছে। কিছু লোকজন বসবাস করতে শুরু  করেছে। বর্তমানে এলাকাটি হানুয়া- বারোপাইকা নামেই পরিচিত। 
 

একুশে সংবাদ/ এস কে

Link copied!