সাবেক সহকারি অধ্যাপক মো.আশরাফ আলী মন্ডল,এর ছেলে আল-মাহিয়ান প্রান্তিক।জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার পুনট ইউনিয়নের চাকলমুয়া গ্রামের এই সাহসী তরুণের নাম হয়তো আমরা ভুলতে বসেছি,কিন্তু কোটা বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে তার সংগ্রামের গল্প আমাদের ভুলে যাওয়ার নয়।
পড়ালেখার সুবিধার্থে পরিবারসহ বগুড়া শহরে তাদের বসবাস। আল মাহিয়ান বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজে ম্যানেজম্যান্টে অনার্সের ১ম বর্ষের ছাত্র। কোটা বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে সারা বাংলাদেশ থেকে ছাত্ররা তাদের ন্যায্য দাবি আদায়ের লক্ষ্যে রাস্তায় আন্দোলন শুরু করেন।ঠিক তখনই ১৫ই জুলাই থেকে বগুড়ার সাতমাথায় ন্যায়ের দাবিতে কোটা বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নেমেছিল তিনশত জনের একদল সাহসী তরুণ। তাদের কাতারে ছিলেন আল মাহিয়ানও।আন্দোলনের মাত্রা যখন ধীরেধীরে বেগবান হচ্ছিল তখন থেকে ছাত্রলীগ ও পুলিশ বেপরোয়া হতে থাকল।সেদিন ১৮ই জুলাই সকাল ১১টায় বগুড়ার সাতমাথায় তিনশো ছাত্ররা অবস্থান নিলে পুলিশ বেপরোয়াভাবে টিয়ার শেল, সাউন্ড বোমা নিক্ষেপ করেছিল। পুলিশের মারমুখী অবস্থানের কারণে ছাত্ররা ছত্রভঙ্গ যখন হতে লাগল তখন দুপুর প্রায় সাড়ে বারটার দিকে আল মাহিয়ানের মাথায়,ঘাড়ের ডান পাশে ও ডান চোখে রাবার গুলি এসে আঘাত করেছিল। সেই মুহূর্তে যেন পৃথিবী অন্ধকার হয়ে গিয়েছিল তার জন্য। আঘাত ছিল গুরুতর। চিকিৎসার জন্য নিতে হয়েছিল শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজের অপারেশনের আশ্রয়। মাথার ভিতরে লুকিয়ে থাকা সেই বিপজ্জনক আঘাতের স্মৃতি এখনও বহন করছে তার শরীর। তার ডান চোখে এখনও ঠিকমতো দেখতে পায় না; চশমার সাহায্য ছাড়া আজ তার পৃথিবীটা ঝাপসা। আল- মাহিয়ান মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে এসেছে ঠিকই, কিন্তু তার জীবন এখন আগের মতো স্বাভাবিক নেই। তার চোখের আলো যেন ফিকে হয়ে গেছে, কিন্তু তার মনোবল অটুট। প্রতিটি দিনই তার জন্য এক নতুন সংগ্রামের দিন। এক চোখে দৃষ্টি ঝাপসা হলেও তার মনের চোখে জ্বলছে প্রতিবাদের আগুন।
আলাপ কালে জানা যায়,আল-মাহিয়ানের সেই বেদনাবিধুর দৃশ্য,তার চোখের কোণে জমে থাকা অশ্রু,তার অস্ফুট কণ্ঠে উচ্চারিত শেষ কথাগুলো আমাদের মনকে আজও নাড়া দিয়ে যায়। তার সেই সাহসী পদক্ষেপ,তার প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর, আর তার রক্তের প্রতিটি বিন্দু যেন আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়ানোর জন্য কতটা ত্যাগ স্বীকার করতে হয়।
সেই প্রথম দিকে কোটা বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মুখ যোদ্ধা আল-মাহিয়ান অশ্রুসিক্ত নয়নে হৃদয়ে অদম্য সাহস নিয়ে বলেন,"১৫ জুলাই থেকে আমরা শুরু করেছিলাম আন্দোলনের সংগ্রাম, আর ৫ আগস্টে আমাদের দেশ যেন নতুনভাবে স্বাধীনতা পেয়েছে। এই লড়াই ছিল ন্যায়ের জন্য, মেধার স্বীকৃতির জন্য। আমরা দেখিয়েছি, অধিকার কোনো অনুগ্রহ নয়,বরং তা লড়াই করে আদায় করতে হয়।আমাদের এই নতুন স্বাধীনতা সংগ্রামের ফলাফল,যা আমাদের সাহসী পদক্ষেপেরই জয়।"
একুশে সংবাদ/ এস কে
আপনার মতামত লিখুন :