টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে তিস্তার তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলে বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে লালমনিরহাটের পাচ উপজেলার নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলের প্রায় ২০ হাজার পরিবার। জেলার আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, রাজপুর, হাতিবান্ধা উপজেলার ডাউয়াবাড়ী গড্ডিমারী ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলে তলিয়ে গেছে গ্রামীণ কাচা-পাকা সড়কসহ আমনের ক্ষেত। বাড়িঘরে পানি থাকায় বন্ধ রান্নাও। এতে দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ, খাদ্য ও গোখাদ্য সংকট। ফলে বানভসিরা রয়েছেন চরম বিপাকে।
রবিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৩ টায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে পানির প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ৫২.০৭ মিটার। যা বিপদসীমার মাত্র ৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর সকালে ব্যারাজ পয়েন্ট দিয়ে বিপদসীমার ২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার বন্যাকবলিত এলাকার মহিষখোচার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে পানিবন্দি মানুষের দূর্ভোগের অন্ত নেই। অনেকের ঘর পানিতে হাবুডুবু খাচ্ছে। তলিয়ে গেছে পাকা-কাচা সড়কসহ ধানের ক্ষেত। বাড়িঘর ছেড়ে অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন অন্যত্র।
লালমনিরহাট জেলার আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা বারোঘরিয়ার বাসিন্দা রিপন মিয়া জানান, গত কয়েকদিনের বৃষ্টি ও ভারত থেকে পানির কারণে নদীর পানি লোকালয়কে প্লাবিত করেছে। এতে আমার বাড়িতে কোমর সমান পানি। আমরা খুবই কষ্টে দিনাতিপাত করছি। জেলার সদর উপজেলার কালমাটি পাকার মাথার বাসিন্দা খয়বর হোসেন জানান, গতকাল বৃহস্পতিবার তিস্তার পানি বেশ কম ছিলো। ও-ই দিন রাত থেকে পানি বৃদ্ধি দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পেয়ে বন্যার সৃষ্টি হলো। তিনদিন পানিবন্দি মানুষজনের কেউ খবর নিতে আসেনি বলে অভিযোগ তার। একই এলাকার কৃষক নাজমুল আকন্দ বলেন, গত চারদিনের বৃষ্টির জন্য মানুষ প্রয়োজন ব্যতিত ঘর ছাড়েনি। তিনদিন পানিবন্দি অবস্থায় দিনকাটছে খুনিয়াগাছের নদীপারের মানুষজনের। খাবার রান্নাও বন্ধ চুলাসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ভেজা থাকায়৷ কালীগঞ্জে ভোটমারী শৈলমারী চরাঞ্চলের বাসিন্দা ছকমল জানান, বন্যার আসবে নদী পাড়ের কেউ ভাবেনি। অনেকের ধান, মিষ্টি কুমড়াসহ নানাসবজির ক্ষেত পানির নিচে রয়েছে। পানি স্থায়ী হলে সব নষ্ট হয়ে যাবে। আমরা (কৃষকেরা) খুবই ক্ষতিগ্রস্ত হবো।
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শুনীল কুমার রায় বলেন, টানা বৃষ্টি ও উজানের ঢলের কারণে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলে বন্যার সৃষ্টি করেছে। তবে আজ দুপুর থেকে পানি কমতে শুরু করেছে। আগামী ২৪ ঘন্টায় অতিভাবি বৃষ্টিপাতের সম্ভবনা কম বলে জানিয়ে তিনি বলেন, পানি নেমে গেলে নদীর যে ভাঙ্গন দেখা দিবে তা প্রতিরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড জিও ব্যাগ ফেলা হবে। চরাঞ্চল ও নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের কিছু এলাকা
লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার লালমনিরহাটের মহিষখোচা এলাকা পরিদর্শন শেষে বলেন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতায় বন্যার্তদের তালিকা তৈরির কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এরই মধ্যে কিছু বানভাসিদের সহয়তা প্রদান করা হয়েছে। পর্যাপ্ত পরিমাণ ত্রাণ সামগ্রী মজুদ রয়েছে যা প্রয়োজন অনুযায়ী বানভাসিদের মাঝে বিতরণ করা হবে বলেও জানান তিনি।
একুশে সংবাদ/ এস কে
আপনার মতামত লিখুন :