ঢাকার সাভার ও আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে সকাল থেকে বেশিরভাগ তৈরি পোশাক কারখানায় কাজে যোগ দিয়েছেন শ্রমিকরা। শিল্পাঞ্চলে কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।তবে মঙ্গলবার বেলা ১২টা পর্যন্ত আগে থেকে বন্ধ থাকা ১৯ কারখানা ছাড়াও আজও বন্ধ রয়েছে ২১টি কারখানা। সবমিলিয়ে শিল্পাঞ্চলের ৪০টি কারখানা বন্ধ রয়েছে বলে জানিয়েছে আশুলিয়ার শিল্পাঞ্চল পুলিশ। তবে শিল্পাঞ্চলের অন্য এলাকার কারখানাগুলোয় শ্রমিকেরা কাজ করছেন বলে জানিয়েছে তারা।
এর আগে, সকালে নির্ধারিত সময়ে সাভার, আশুলিয়া ও ধামরাই উপজেলার বিভিন্ন তৈরি পোশাক কারখানায় উপস্থিত হন শ্রমিকেরা।
মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) বেলা ১২টার দিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম।তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর তথ্য অনুসারে, সাভার, আশুলিয়া, ধামরাই ও গাজীপুর এলাকায় ১,২৯৪টি পোশাক কারখানা রয়েছে।
আশুলিয়ার শিল্পাঞ্চল পুলিশ-১ ও তৈরি পোশাক কারখানা–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, বেতন ও হাজিরা বোনাস দেওয়া, টিফিন বিল বৃদ্ধি এবং শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধসহ কিছু দাবিতে তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা আশুলিয়া ও গাজীপুর শিল্প এলাকায় কয়েক দিন ধরে বিক্ষোভ করছেন। কোথাও কোথাও আন্দোলন রুপ নিচ্ছিল সহিংসতায়। এর জেরে অনেক কারখানায় শ্রমিকরা কাজ শুরু করলেও কিছুক্ষণের মধ্যে কারখানা বন্ধ ঘোষণা করছিল কর্তৃপক্ষ। সবমিলিয়ে এক অস্থির পরিস্থিতি পার করছিল পোশাক খাত।
বিভিন্ন দাবি নিয়ে শ্রমিকদের সাথে মালিকপক্ষের বনিবনা না হওয়ায় এবং অভ্যন্তরীণ সমস্যার কারণে গতকালও আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে ৯০টি কারখানায় ছুটি ছিল। তবে এসময়ে কোথাও কোনো বিশৃঙ্খলতার খবর পাওয়া যায়নি।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গত কয়েক দিন ধরেই মালিকপক্ষ, শ্রমিক পক্ষ ও প্রশাসনসহ পোশাক খাত সংশ্লিষ্টরা টানা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল। শ্রমিকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার বিজিএমইএ ভবনে বৈঠকে বসেন শ্রমিক-মালিক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
বৈঠক শেষে বেশ কিছু দাবি মানার সিদ্ধান্ত জানিয়ে শিল্পাঞ্চলের সব কারখানা মঙ্গলবার খুলে দেওয়ার কথা জানানো হয়।
মঙ্গলবার সকাল থেকে সাভার, আশুলিয়া ও ধামরাইয়ের প্রায় সব পোশাক কারখানা খোলা রয়েছে বলে জানা যায়। এছাড়া পুরো এলাকায় দেখা গেছে প্রশাসনের বাড়তি নিরাপত্তা।
বেলা ১২টা পর্যন্ত শিল্পাঞ্চলে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার কোনো খবর পাওয়া যায়নি।এদিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে অতিরিক্ত নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন ও বাড়ানো হয়েছে নজদারি।গত কয়েকদিনে যেসকল এলাকায় শ্রমিক বিক্ষোভের ঘটনা ঘটছে সেসকল এলাকায় আজও নিরাপত্তা জোরদার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
আশুলিয়ার বাইপাইল-আব্দুল্লাহপুর সড়কের নরসিংহপুর এলাকায় বিভিন্ন কারখানার সামনে সেনাবাহিনী, এপিবিএন ও পুলিশ সদস্যরা অবস্থান নিয়েছেন। সড়কে টহল দিচ্ছে সেনাবাহিনী, র্যাব, বিজিবি ও পুলিশ সদস্যরা।
বাংলাদেশ গামের্ন্ট ও সোয়েটার্স শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের আইনবিষয়ক সম্পাদক খায়রুল মামুন বলেন, ‘গতকাল বিজিএমইএ বৈঠকে কিছু সিদ্ধান্ত হওয়ার পর আজকে অধিকাংশ কারখানা সচল রয়েছে। কিছু কারখানা আগে থেকে বন্ধ রয়েছে। কিছু কারখানায় শ্রমিকরা অভ্যন্তরীণ কিছু দাবিতে কাজ বন্ধ করে ভেতরে বসে আছে। এমনিতে পরিস্থিতি ভালোই মনে হচ্ছে। বিজিএমইএ এর সিদ্ধান্ত যেটা হয়েছে শ্রমিকরা এর অনেক কিছুই মেনে নিয়েছে। এখন থেকে নারী-পুরুষ বৈষম্যও থাকবে না। গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলোর কারণে শ্রমিকরাও কাজে ফিরেছে।’
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-৪, সিপিসি-২–এর কোম্পানি কমান্ডার মেজর জালিস মাহমুদ খান বলেন, ‘পোশাক খাতে সৃষ্ট উদ্ভুত পরিস্থিতিতে আমরা গত কয়েক দিন ধরেই টানা কাজ করে যাচ্ছি। র্যাব-৪ এর মোট ১৩টি টহল গাড়ি এখানে রয়েছে। এছাড়া বিজিবি, সেনাবাহিনী ও শিল্প পুলিশ কাজ করছে। আজকে আমরা বাইপাইল, ইপিজেড, আশুলিয়া, সাভার, জিরানীসহ পুরো এলাকায় যৌথ বাহিনী কাজ করছে। পরিস্থিতি আজকে অনেকটাই স্বাভাবিক। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।’
শিল্পাঞ্চল পুলিশ-১–এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম বলেন, ‘বেশিরভাগ কারখানাই খুলেছে। কাজ চলছে। আগের ১৯টি কারখানা বন্ধ ছিল। আর আজ ২১টি কারখানার শ্রমিকরা কাজ করছে না। সবমিলিয়ে ৪০টি কারখানায় কাজ বন্ধ রয়েছে। এখানে কোনো সহিংসতা বা কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।
একুশে সংবাদ/ এস কে
আপনার মতামত লিখুন :