ছাত্র-জনতার গণঅভুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে চোর-ডাকাতের উপদ্রব বেড়ে যায়। বিশেষ করে টানা ছয়দিন পুলিশ কর্মস্থলে না থাকায় শ্রীমঙ্গল উপজেলায় জনমনে চোর-ডাকাত আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এই উৎকণ্ঠতা দূর করতে মাঠে নামেন বিভিন্ন শ্রেণি পেশার যুবকরা।
রাতে সরজমিনে শ্রীমঙ্গল চৌমুহনা, স্টেশন রোড, মৌলভীবাজার রোড, কলেজ রোড, মিশন রোডসহ বিভিন্ন পাড়া-মহল্লা ঘুরে দেখা যায়, কওমি মাদরাসার শিক্ষক, মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিন, স্কুলের শিক্ষক, টিম ডায়নামিকের সদস্যসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার লোকজন শহরসহ পাড়া-মহল্লায় দলবেঁধে পাহারা দিচ্ছেন। মূলত শ্রীমঙ্গলে গত পাঁচদিন পুলিশ না থাকায় চোর-ডাকাত ও দুবৃর্ত্তদের হামলা-ভাঙচুর ঠেকাতে তারা এ উদ্যোগ নেন।
রাত জেগে পাহারায় থাকা টিমের দলনেতা, ভূনবীর দশরথ স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক তারিক হাসান বলেন, পুলিশবিহীন শ্রীমঙ্গলে বিশৃঙ্খল আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির মধ্যে উপজেলার মানুষজন চোর-ডাকাত ও দুষ্কৃতিকারীদের ভয়ে আতঙ্কে রাত কাটাচ্ছেন। এই আতঙ্ক ও উৎকণ্ঠতা দূর করে শ্রীমঙ্গলবাসীকে নির্ভয় রাত উপহার দেওয়ার জন্য মোঃ মাইনুল ইসলাম, ফাহাদ চৌধুরী, সামাউন আহমেদ, সিয়াম চৌধুরী জাবেদ মিয়া, জিপ্পি চৌধুরী, আকবর আলী, মাহফুজুল ইসলাম পলাশ, রাঈয়ান রায়হান, হারুন, রাহি, শাহিন, শাকিল আদিলসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার যুবক-তরুণদের সাথে নিয়ে শহরের বিভিন্ন এলাকায় দলবেঁধে পাহারা দেয়া শুরু করি।আমাদের উদ্যোগে পর্যায়ক্রমে যুক্ত হন বিভিন্ন কওমি মাদরাসার শিক্ষক, ব্যবসায়ী, চিকিৎসক, মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিনসহ তরুণ-যুবকরা।
শহরবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা পালাক্রমে বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় রাত জেগে পাহারা অব্যাহত রেখেছি। রাত ১২টা থেকে ভোর পাঁচটা পর্যন্ত পাহারা কার্যক্রম চলছে। থানা পুলিশের কার্যক্রম পুরোদমে শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত এমন পাহারা অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
পাহারায় থাকা কওমি মাদরাসার আলেম মাওলানা আজিজুর রহমান, মাওলানা আবু বকর, মাওলানা বুরহান উদ্দিন মাাওলানা আব্দুর রাজ্জাক জানান, দেশের এমন পরিস্থিতিতে ৫ আগস্ট রাত থেকে আমরা সনাতন ধর্মালম্বীদের মন্দির-গির্জা বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে রাত জেগে দলবেঁধে পাহারা দেই। দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার আগ পর্যন্ত আমরা পালাক্রমে পাহারায় থাকবো। দলবেধে পাহারার বিষয়ে উচ্ছ্বসিত হয়ে ব্যবসায়ী আবু সুফিয়ান রায়হান ফেসবুকে লেখেন, আহ কি সুন্দর সম্প্রীতি, ঐক্য এবং ভ্রাতৃত্ববোধ। দিন শেষে রাতে ও জনসাধারণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করনে আমাদের এই ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা ও কাজ।
আসলে আমরা চাই নিরপেক্ষ সরকার। যাতে করে সমাজে এক ভাই অন্য ভাইয়ের সাথে থাকবে নিবিড় সম্পর্ক৷ যেখানে থাকবেনা কোন দলীয়করণ। স্থানীয় বাসিন্দা সজিব কানু লেখেন, বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষজন রাত জেগে পাহারা দেয়ায় আমরা স্বস্তি বোধ করছি। আমাদের উপাসনালয়সহ বাড়িঘর এখন পর্যন্ত নিরাপদে রয়েছে। জাকারিয়া আহমদ লেখেন, শিক্ষক তারিক হাসানসহ পুরো শ্রীমঙ্গলজুড়ে যারা রাতভর কিছু মানুষের নিরাপদে ঘুমানোর ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন আপনাদের শ্রীমঙ্গলবাসী কখনো ভুলবে না। প্রতিটা সন্তান যেমন ঘুমিয়ে আছে মা বাবার ছায়াতলে, ঠিক পুরো শ্রীমঙ্গলবাসী আছে আপনাদের ছায়াতলে। শ্রীমঙ্গলের মানবিক চিকিৎসক হিসেবে পরিচিত ডা. মোঃ নাজেম আল কোরেশী রাফাত তাঁর ফেসবুক আইডিতে লেখেন, গতকাল রাত ১টা থেকে ভোর ৪টা পর্যন্ত শ্রীমঙ্গল শহরের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে দেখলাম সবাই পাড়া মহল্লায় একত্রিত হয়ে পাহারা দিচ্ছেন। দিনের আলোর মতোই রাতের অন্ধকারের শ্রীমঙ্গল নিরাপদ মনে হয়েছে। এদিকে রাত জেগে পাহারা দিয়ে উপজেলাবাসীর আতঙ্ক দূর করায় সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকে প্রশংসায় ভাসছেন এসব যুবকরা। পাহারায় থাকার ছবি ফেসবুকে শেয়ার করলে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষজন তাদের মহতি কর্মকাণ্ডের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
শ্রীঙ্গলের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী শাহিন আহমদ বলেন, শ্রীমঙ্গল পৌরসভার মেয়র মোঃ মহসিন মিয়ার নির্দেশে আমি টিম ডায়নামিক এর সদস্য ও এলাকার যুবকদের সাথে নিয়ে কালিঘাট রোড, সিন্দুরখান রোডসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রহরা অব্যাহত রেখেছি। শ্রীমঙ্গলের ব্যবসায়ীদের বাসা-বাড়ি, দোকানপাঠ ও ভিন্ন ধর্মালম্বীদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানকে দুষ্কৃতিকারীদের হামলা থেকে রক্ষা করতে নিরলসভাবে চেষ্টা করছি। শ্রীমঙ্গল সম্প্রীতির শহর। সম্প্রীতি সৌহার্দ্য ফিরিয়ে এনে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন সুদৃঢ় করতে আমরা তৎপর।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :