গৃহবধূর মাথা ন্যাড়া করে এবং ঘোল ঢেলে তাকে শুদ্ধ করলেন মাতাব্বর! এই চাঞ্চল্যকর ঘটনা নওগাঁর বদলগাছীতে। অভিযোগ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর এক গৃহবধূও বিরুদ্ধে অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ ওঠে। এরপর গৃহবধূর মাথা ন্যাড়া করে ঘোল ঢেলে শুদ্ধ করেন স্থানীয় মাতব্বর।
সোমবার (২৮ আগস্ট)নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়নের গয়েশপুর বাঁশপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় কয়েকজন নারী দাবি করেন, এক মুসলিম যুবকের সঙ্গে গৃহবধূর অনৈতিক সর্ম্পক ছিল। এ কারণে গ্রামের মাতব্বরদের সিদ্ধান্তে পুরোহিতকে ডেকে এনে তার মাথা ন্যাড়া করার পর ঘোল ঢেলে শুদ্ধ করা হয়। এ কাজে গৃহবধূর স্বামীরও সম্মতি ছিল।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই গৃহবধূ দুই সন্তানের জননী। পাশ্ববর্তী সোনারপাড়া গ্রামের কমল হোসেন নামের বিবাহিত মুসলিম এক যুবকের সঙ্গে তার পরকীয়া সম্পর্ক রয়েছে। ১০-১২ দিন আগে নিজ বাড়িতে আপত্তিকর অবস্থায় তার স্বামী দেখতে পান।
ঘটনার পর গৃহবধূ বাবার বাড়ি চলে যান। শনিবার বাবার বাড়ি থেকে ফের স্বামীর বাড়িতে আসেন। এরপর গ্রামের মাতব্বরের সিন্ধান্তে তাকে শুদ্ধ করে স্বামীর ঘরে তোলা হয়।
নিজের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন গৃহবধূ। তিনি বলেন, আমি কারও সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক করিনি। গ্রামের মাতব্বরদের সিদ্ধান্তে আমার মাথা ন্যাড়া করে দিয়ে ঘোল ঢেলে দিয়েছেন। কারও বিরুদ্ধে আমার কোনো অভিযোগ নেই। কিছু বলারও নেই।
এ বিষয়ে ওই গ্রামের সনাতন ধর্মাবলম্বী গোবিন্দ সাহা বলেন, আমার কাছে মনে হচ্ছে গৃহবধূ প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন। শুদ্ধ করার এ বিষয়টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী নেতা বিমল চন্দ্রের কারণেই হয়েছে। এমন সিদ্ধান্ত গ্রামের আরও কয়েকজন মাতব্বর এক হয়ে দিয়েছিলেন। এর আগে এ গ্রামে মাথা ন্যাড়া করে ঘোল ঢেলে শুদ্ধ করার ঘটনা কখনো শুনিনি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে স্থানীয় মাতব্বর বিমল চন্দ্র বলেন, জোর করে কারও মাথা ন্যাড়া করে দেওয়া হয়নি। ওই গৃহবধূর সম্মতিতেই মাথা ন্যাড়া করা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলাম বাবু বলেন, কিছুদিন আগে পরিবারে একটা ঝামেলা হয়েছিল। আমি মীমাংসা করে দিয়েছিলাম। তবে মাথা ন্যাড়া করে দেওয়ার ব্যাপারে আমি কিছু জানতাম না। পরে শুনেছি। এরপর উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানানো হয়েছে।
বদলগাছী উপজেলার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সভাপতি বৌদ্দ নাথ বলেন, বিষয়টি খুবই অমানবিক। এ রকম নিয়ম আছে বলে আগে কখনো শুনিনি।
জানতে চাইলে বদলগাছী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতিয়ার রহমান বলেন, ঘটনা শুনেছি। ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
একুশে সংবাদ/আ.শ.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :