অনিক সিকদার, রাজবাড়ী: রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার বাবুপাড়া ইউনিয়নে ডাকুরিয়া মহাশ্মশানে ধুমধামের সাথে একসাথে বেড়ে ওঠা বট-পাকুড় গাছের বিয়ে হয়েছে।
সোমবার রাতে এ বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়।
বিয়ের আয়োজনকে ঘিরে নানান আলোকসজ্জায় সজ্জিত হয় শ্মশান প্রাঙ্গণ। দুপুর থেকেই এলাকার হাজারো উৎসুক জানতার আগমণ ঘটে।
বিয়ে ঘিরে বর-কনের পাশে ছাদনাতলা সাজানো হয়। উপরে শামিয়ানা ও চারপাশে ছিল কলাগাছ। বিয়ের উৎসবে আয়োজনের যেন কোনো ঘাটতি নেই। মূলত বিয়ের জন্য যা যা লাগে তার সব আয়োজনই ছিল এখানে। বটগাছ হলো বর আর পাকুড় গাছ হলো কনে।
বিয়ের হলুদ কোটা, পুকুর থেকে জল আনা, বর ও কনের বাবাকে দিয়ে করা হয় বিদ্ধি অনুষ্ঠান। নারীরা পুকুরে গিয়ে গঙ্গাপূজা সেরে আসেন। জল দিয়ে ভরে আনেন ঘট। ছাদনাতলায় মঙ্গলঘট বসিয়ে শুরু হয় বিয়ের নিবেদন। বিকাল ৪টায় বরের বাড়ি থেকে নারী-পুরুষ আসেন বরযাত্রী হয়ে। গেটে মিষ্টিমুখ করিয়ে অভ্যর্থনা জানানো হয় তাদেরকে। বাদ্য-বাজনার তালে নেচে ওঠেন সব বয়সী নারী-পুরুষ। বর-কনের চারপাশ ঘিরে দাঁড়িয়ে থাকেন অতিথিরা।
সন্ধ্যাবেলা শুভলগ্নে শুরু হয় বিয়ের মূল আনুষ্ঠানিকতা। গোধূলিলগ্নে মন্ত্র পড়ে বিয়ে সম্পন্ন করেন পুরোহিত।
মহা ধুমধামে আয়োজিত এই বিয়ের বটগাছের বাবা হয়ে বিয়ের কাজ সম্পন্ন করেন ডাকুরিয়া মহাশ্মশানের সেবাইত বন্ধন মিত্র ও পাকুড় গাছের পিতা ছিলেন উপজেলার পাট্টা ইউনিয়নের বাসিন্দা ও ইউপি সদস্য অতুল চন্দ্র সরকার।
শ্মশান কমিটির সভাপতি বাবুল চৌধুরী জানান, ডাকুরিয়া শ্মশানটি ছিল উপেক্ষিত। আমি এখানকার দায়িত্ব নিয়ে আমার স্বর্গীয় পিতা-মাতার স্মৃতিরক্ষার্থে এখানে নাটমন্দির স্থাপন করি। প্রতিবছর বাৎসরিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করি। শ্মশানে বেড়ে ওঠা বট-পাকুড় গাছ দুটিকে বিয়ে দেয়ার জন্য অনেকেই বলেন তাই আজ এই বিয়ের অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছি। এমন আয়োজন করতে পেরে আমি নিজেও আনন্দিত।
বিয়ের এই অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রণ খেতে এসেছিলেন প্রায় হাজারখানেক অতিথি। আমন্ত্রিতদের খাওয়ানো হয় পোলাও, সবজি, ডাল, ফুলকপির তরকারী, চাটনী ও মিষ্টি।
হিন্দু শাস্ত্রে আছে- বট-পাকুড় একসাথে থাকলে তাদের বিয়ে দিতে হয়। সে জন্যই এই বিয়ে বলে জানায় আয়োজকরা।
একুশে সংবাদ/এইচ আই/
আপনার মতামত লিখুন :