AB Bank
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

বিষাক্ত তরলবর্জ্যের কবলে কয়েকশ’ একর কৃষি জমি


Ekushey Sangbad
উপজেলা প্রতিনিধি
০৭:৩১ পিএম, ১৩ জানুয়ারি, ২০২২
বিষাক্ত তরলবর্জ্যের কবলে কয়েকশ’ একর কৃষি জমি

ছবি: একুশে সংবাদ

শ্রীপুর প্রতিনিধি: গাজীপুরের শ্রীপুরে মিল ফ্যাক্টরীর অপরিশোধিত বিষাক্ত তরলবর্জ্যে কৃষকের কয়েকশ’ একর ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। বিগত ৩ বছর ধরে স্থানীয় কৃষকরা এ জমিতে না পারছে ধান ফলাতে না পারছে সবজি চাষ করতে। এ অঞ্চলে যারা শুধুমাত্র কৃষিনির্ভর তাদের অবস্থা বেগতিক। ধান ফলিয়ে সংসার চালাতে গিয়ে এখন উল্টো আরো ঋণগ্রস্ত। 

 

ভালুকা উপজেলার ক্ষীরু নদী থেকে উৎপত্তি হয়ে শ্রীপুর উপজেলার উত্তর সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করে লবনদহ নামের একটি নদ। উপজেলার মাওনা ইউনিয়নের পূর্ব এবং পৌরসভার পশ্চিমপ্রান্ত ঘেষে কেওয়া পশ্চিম খন্ড, পাথারপাড়া, বহেরার চালা, বেলতলি, বেড়াইদেরচালা, শিরিরচালা, ইন্দ্রবপুর, বানিয়ারচালা, ভবানিপুর, পিরুজালী ও মনিপুর দিয়ে এঁকেবেঁকে তুরাগ নদীতে গিয়ে এ লবনদহ নদ সংযুক্ত হয়েছে। 

 

যার দৈর্ঘ্য প্রায় অর্ধশত কিলোমিটার হবে। এ নদের উভয় পাশে যাদের জমি রয়েছে তারাই পড়েছে বিপাকে। শ্রীপুর পৌরসভা ও গাজীপুর সদরের অসংখ্য মিল ফ্যাক্টরীর অপরিশোধিত দূষিত তরলবর্জ্য মাটির নিচ দিয়ে বিশেষ ব্যবস্থায় সরাসরি ছাড়া হচ্ছে এ নদে। দখল দূষণে মৃত প্রায় এ নদে পতিত এসব বিষাক্ত তরলবর্জ্য উপচে গিয়ে পড়ছে কৃষকের জমিতে। আর এতেই নষ্ট হচ্ছে এ অঞ্চলের প্রায় কয়েকশ একর ধানের জমি।  

 


শ্রীপুর পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ডের বহেরার চালা গ্রামে সরেজমিনে গিয়ে কথা হয় কৃষক মো. মফিজ উদ্দিনের সাথে। তাঁর ১০ বিঘা জমি বিষাক্ত বর্জ্যে তলিয়ে আছে। কেমন আছেন প্রশ্ন করতেই দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন এখন শুধু মরার বাকি। জমিতে ধান ফলানো ছাড়া জীবিকা নিবার্হের অন্য কোনো উপায় নেই তাঁর। পরপর তিনবার ধান চাষ করেও খরচই তুলতে পারছেন না তিনি। সংসারের সবাইকে নিয়ে পথে বসার অবস্থা এখন তাঁর। 

 

বিষাক্ত এ তরলবর্জ্য জমিকে নয় বরং তার জীবনকেই যেনো বিষাক্ত করে তুলেছে। প্রতিকার পেতে অনেকবার পৌর মেয়রের কাছে গিয়েও কোনো লাভ হয়নি। ৪০ -৫০ জন কৃষক একসাথেও গিয়েছেন মেয়রের কাছে। মেয়র আশ্বাস দিয়েছেন কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি। তিনি জানান, আশেপাশের ফ্যাক্টরীর সকল বর্জ্য, হাসপাতালের ব্যবহৃত সরঞ্জামাদি স্যালাইন প্যাকেট, ইনজেকশন ও বোতল সব এনে রাতের আধারে আমাদের জমিতে ফেলে রাখে। এমনকি পৌরসভার বাসাবাড়ির ময়লা আবর্জনাও এখন আমাদের ফসলি জমিতে এনে ফেলছে।

 


দেখার কেউ নেই। কথা হয় ভুক্তভোগী কৃষক শফি কামাল, জালাল মিয়া, মুক্তার, সিরাজ উদ্দিন মাস্টার, মুখলেস মোল্লা, আক্রাম হোসেন, সাইফুল ইসলামসহ আরো অনেকের সাথে। শফি কামাল জানান, এ গ্রামে মিতালি, এক্স সিরামিক্স, ক্রাউন, হরাইজনসহ অসংখ্য মিল ফ্যাক্টরী রয়েছে যার বর্জ্য আমাদের জমির পানিতে এসে পড়ে। এখানে শুধু ধান কেনো, কোনো ফসলই হবে না।

 

জমির আইলে মৃতপ্রায় তালগাছ দেখিয়ে বললেন, দেখুন এখানে ধান কেনো, কোনো কিছুই হবে না। মাটি বিষাক্ত হয়ে গেছে। ক্ষেতে নেমে আর কাজ করা যায় না। শরীরে ঘা হয়। তরুণ লেখক ও পরিবেশকমীর্ মিশকাত রাসেল জানান, লবনদহ নদের শাখা গড়গড়িয়া খালের দু’পার দখল করে কংক্রিটের ঢালাই করে ফ্যাক্টরীর দু’অংশের সংযোগ ঘটিয়েছে। এতে করে উজানে তৈরি হয়েছে জলাবদ্ধতা। বিপাকে পড়েছে দু’পারের সাধারণ মানুষ। বিস্তার ঘটছে নানা ধরণের জটিল রোগ বালাই। এতে গৃহপালিত পশুপাখিও আক্রান্ত হতে বাদ পরছে না।

 

বাংলাদেশ নদী পরিব্রাজক দলের শ্রীপুর শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. খোরশেদ আলম বলেন, গতবছর নদটি পুনঃখননের কাজ শুরু হয়। ১৮ কিলোমিটার খননের কথা থাকলেও অদৃশ্য কারণে মাত্র ৫-৬ কিলোমিটার খনন করার পর হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়। পরে আর খনন হয়নি। স্থানীয় প্রশাসন এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি।  

 

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ সহকারী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ১১ কিলোমিটার খনন করার কথা, তবে ৬ কিলো ৬ শ মিটার হয়েছে। পরে বষার্য় পানি উঠে যাওয়ায় ঠিকাদার মেশিন উঠিয়ে নেয়। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে তাগাদা দিচ্ছি কাজটি পুনরায় করার জন্য।


 
এ বিষয়ে শ্রীপুর উপজেলা নিবার্হী কর্মকতার্ মো. তরিকুল ইসলাম জানান, বিষয়টি খুব বেদনাদায়ক। কৃষিজমিতে ধান না ফলাতে পারলে আমরা খাবো কি! কৃষক বাঁচলেই আমরা বাঁচবো। মিল—ফ্যাক্টরীর বিষাক্ত বর্জ্যের বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিবে পরিবেশ অধিদপ্তর। উপজেলা প্রশাসন পাশে থেকে বাস্তবায়নে সহযোগিতা করবে।

 

গাজীপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক নয়ন মিয়া জানান, শ্রীপুর প্রথম শ্রেণীর পৌরসভা হওয়ার পরও কোনো ডাম্পিং স্টেশন নেই। যে কারণে যে যার ইচ্ছেমত ময়ালা আবর্জনা ফেলছে। ইটিপি প্লান ব্যবহারে অধিকাংশ শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর ইচ্ছেই দেখি না। তবে আমরা শিঘ্রই অনলাইন নজরদারীর পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। আশা করছি শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো পরিবেশ অধিদপ্তরের নিয়ম মেনেই পরিচালিত হবে।


একুশে সংবাদ /সানি/এইচ আই

Link copied!