AB Bank
ঢাকা মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

ভাল নেই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিতাস পাড়ের কুমার পাড়ার লোকেরা


Ekushey Sangbad
একুশে সংবাদ ডেস্ক
০৪:২৩ পিএম, ১৭ জানুয়ারি, ২০২১
ভাল নেই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিতাস পাড়ের কুমার পাড়ার লোকেরা

আমাদের দেশের সবচেয়ে প্রাচীন শিল্প হচ্ছে মাটির শিল্প। অনেক পুরনো দিনের কথা এক সময় শিমরাইলকান্দির তিতাস নদীর পাড়ে গড়ে উঠে ছিলো কুমার পল্লী। পেশায় তারা কুমার বা পাল। কুমার পাড়ার পোড়া মাটির মিষ্টি গন্ধ. কাঁচা গন্ধে একসময় থাকত মাতোয়ারা। ব্যাস্ত কুমাররা হিম—শিম খেতেন চাহিদা মেটাতে। হাট বাজারে মাটির তৈজসপত্রের পসরা সাঁজিয়ে বসতেন মৃৎ শিল্পিরা।

নদীর পাড়ে ২০বছর আগে  ৫০/৬০টি পাল পরিবার (কুমার) ছিলো এখন আছে ১০ টি। এরমধ্যে ৪/৫জনের বাড়িতে কাজ হয় বাকিরা পেশা পরিবর্তন করে ফেলেছে ।অনেকেই জীবিকার সন্ধানে ভিটা মাটি বিক্রি করে ভারতে পাড়ি জমিয়েছেন। 

দিন দিন যে ভাবে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে তাতে তারা পেশা নিয়ে বেশ চিন্তিত। কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে তাদের আদি পেশা মৃৎশিল্প। নুন আনতে পান্তা ফুরাচ্ছে পরিবার গুলির।পেটের জ্বালায় অনেকেই বেছে নিচ্ছেন অন্যান্য পেশা। আধুনিকতার ছোঁয়ায় দিনে দিনে লোপ পাচ্ছে মৃৎ শিল্পের ব্যবহার। 

এক সময়ের মাটির জিনিস তৈরি করে গৃহস্থালীর চাহিদা মেটানো সেই সব কুমোরদের অধিকাংশরই চাকা মাটির সামগ্রী তৈরী করা যন্ত্র বন্ধ। ওরা নিজেরাই এখন সমস্যার ঘূর্ণিপাকে। একদলা কাদামাটি থেকে শৈল্পিক হাতের পরশে চাকার গতিতে গড়ে উঠছে শিল্প। বর্ণনা করে বোঝানো যাবে না,প্রতি দিনই চাকা ঘোরাতে হয় ,চাকার এক একটি পাকে চলে সংসার। কাঠের তৈরি চাকাটি কোটিপাক ঘুরছে তাতেও তাদের ভাগ্যের চাকায় মরিচা ধরা । অভাব অনটন আর দুঃখ তাদের পিছু ছাড়ে না ,তাই আগামীতে কুমারের চাকা ঘোরোনোর মত কেউ থাকবে না। 

দিন—রাত শ্রম দিচ্ছে তাতেও ফিরে আসছেনা পরিবারের সচ্ছলতা। সারা দিন রাত খেটে যে পন্য উৎপাদন হয়, তা বাজারে বিক্রি করে অতি কষ্টে তাও আবার মাটির দামে। যা দিয়ে লেখাপড়ার খরচ সহ সংসার চালাতে হিমসিম খেতে হয়। তাই  কামড়িয়ে ধরে আছে।

কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে তাদের আদি পেশা মৃৎশিল্প।নুন আনতে পান্তা ফুরাচ্ছে পরিবার গুলির। আধুনিকতার ছোঁয়ায় দিনে দিনে লোপ পাচ্ছে মৃৎ শিল্পের ব্যবহার। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম যেভাবে বেড়েছে সে তুলনায় মাটির জিনিসের দাম বাড়েনি, তারা দিন দিন শেষ হয়ে যাচ্ছে ইচ্ছা থাকলেও বাবা দাদার পেশা ধরে রাখতে পারছেনা। সকাল হলেই তৈরীকৃত হাড়ি পাতিল রোদে শুকানোর ধুম নামত সোনালী রুদ্রের কিরণে পণ্যের গায়ের আশমিক ঝিকমিক করত ঐদিন আর চোখে পড়েনা।

পাড়ার ৫০/৬০টি পরিবার সবাই মাটির তৈরী রান্নার পাতিল, তৈরি হাড়ি পাতিল, ঢাকনা, কলস,পুতুল,ভাশি, ডাবর, ধুপদানি, প্রদীপ, থালা, সরা, পটে আকা লক্ষীর সরা,তাগাড়ি,জল ঘট,জলেরপট, খেলনা, কড়াই, ফুলের টব, পিঠা বানানোর সাজ, মুর্তি, প্রতিমা, চুলা, পানির কলসি, দইয়ের হাড়ি, ঢাকনা, ধূপ দানি ও শিশুদের নানা রকমের খেলনা তৈরী করতেন,তৈরীকৃত পণ্য ভোর হলেই মাথায় নিয়ে চলে যেতেন লোকালয়ের বিভিন্ন পাড়ায় পাড়ায়। 

তিতাস নদী বেয়ে শিমরাইল কান্দির কুমার পাড়ার ভিড়ত দাঁড়টানা পালতোলা নৌকা,বর্ষার দিনে নৌকায় করে তাদের তৈরি হাড়ি পাতিল সহ বিভিন্ন জিনিষ গ্রামেগঞ্জের বাজারে ও ভাটি এলাকায় নিয়ে বিক্রি করতেন। জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে এসব পণ্য বিক্রি করে সংসার চালাত সবাই। ৯০ দশকের পর থেকে দিন দিন সিরামিকের পণ্য প্রচলনা ঘটতে থাকলে ঐহিত্যবাহী পুরাতন মাটির তৈরী তৈজসপত্র কেনাবেচা কমে যায়।

বর্তমানের আধুনিকতায় টিন,স্টিল,প্লস—টিকের তৈরী মালামালের কাছে তাদের  পন্যের ব্যবহার দিনে দিনে লোপ পাচ্ছে।তাই ক্ষুদার তাড়নায় ছুটতে হয়েছে অন্য পেশায়।এর মধ্যে পরিবর্তন করে দিন মজুর, বাদাম ,বুট, গুড়,দোকান দারি স্বর্নকার কিম্বা ভ্যান চালিয়ে জীবীকা নির্বাহ করছে,  সহ বিভিন্ন পেশা বেছে নিয়েছে।শিমরাইল কান্দির কুমার পাড়ায় বেকারত্ব প্রকটতর রূপঅভিশাপ হয়ে দাড়িয়েছে।

শিমরাইল কান্দির কুমার পাড়ার দিনেশ পাল,সুদির পাল ভিটা মাটি হারিয়ে শ্রম বিক্রি করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিখ্যাত মিষ্টি দোকান মাতৃভান্ডারে। সাধারন সমাজ ব্যবস্থার বৈপরীত্য কুমার পল্লী  প্রায় আকাশ পাতাল তফাৎ। কুমার পাড়ার নারী পুরুষ সবাই মাটির তৈরির বাসন বানানোতে বেশ দক্ষ । শিশু থেকে বৃদ্ধা সবার এই কাজ জানা।
জীবিকা নির্বাহে প্রতিদিন কাকডাকা ভোর থেকে রাত অবধি মাটির বাসন কোসন তৈরি করে চলছেন। কি নিদারুন দু:খ কষ্টের মধ্য দিয়ে যে ওরা দিন কাটায় সেটা কাছ থেকে না দেখলে বোঝা যাবে না। 

প্রতিদিন সেই ভোর থেকে শুরু করে একাগ্র চিত্তে কাজ করে যাওয়া, একটার পর একটা যুগের সমাপ্তি ঘটে, নতুন যুগ শুরু হয়।জন্ম নেয়া নতুন একটা শিশুর ভুবন ভোলানো হাসি হয়তো সেরকম আনন্দের নয় এখানে। তাই আস্তে আস্তে সে বেড়ে উঠে অযত্ন আর অবহেলায়। ঠিক মতন পৃথিবী বুঝে উঠার আগেই সে বুঝে যায় তার অনেক  দায়িত্ব। তাই এরা অল্প বয়স থেকেই হাত লাগায় জীবিকার কাজে। একসময় এভাবেই সময় ফুরিয়ে আসে বার্ধক্য। কিন্ত জীবিকা তখনো তাদের পিছু ছাড়ে না। ঐ পাড়ায় জন্ম নেয়া শিশুটাও এখন  ঠিকই জন্মের জন্য নিজের ভাগ্যকে দোষারোপ করে।

আমাদের ক্ষনিকের মুগ্ধতায় ওদের পেট ভরে না। আর আমরা নিতান্তই স্বার্থপর মানুষ। নিজের তাগিদে নিজের ক্ষুধা মিটিয়েই খালাস। জীবনের চাকা, এর ব্যাসার্ধটা পরিধির সব বিন্দুতে মনে হয় সমান নয়। তাই এর গতি স্বাভাবিক নয়। বড় বেশি অস্বাভাবিক। আমাদের চোখের সামনে দেশব্যাপী পুরা একটা সম্প্রদায় বিলীন হয়ে গেছে প্রায়। 


একুশে সংবাদ/ এনা.খ/এস

Link copied!