১৫ই নভেম্বর ২০০৭। সকাল থেকেই উপকূলের আকাশে মেঘ আর গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি। রাত আনুমানিক সাড়ে আটটার দিকে প্রচণ্ড বেগে উপকূলে আঘাত হানে স্মরণকালের ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ সিডর। মাত্র আধ ঘণ্টার তাণ্ডবে লন্ডভন্ড পুরো উপকুল। প্রবল তোড়ে বেড়িবাঁধ ভেঙে পানি ঢুকে চেনা জনপদ মুহুর্তেই পরিণত হয় ধ্বংসস্তুপে।
১৩ বছরেও দুর্যোগ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে নির্মাণ করা হয়নি স্থায়ী বাঁধ। নির্মিত হয়নি পর্যাপ্ত ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র।
সরকারি হিসেবে বরগুনায় ১ হাজার ৩শ ৪৫ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। আর নিখোঁজ হয়ে যায় ১শ’ ৫৬ জন। বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে প্রায় ৮০ হাজার ঘরবাড়ি। ক্ষতি হয় ২ লাখ ৪৩ হাজার ৩শ ৯৩ একর ফসলের। মারা যায় ৩০ হাজার ৪৯৯টি গরু, ক্ষতিগ্রস্থ হয় ১ হাজার ২৩৫ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ৪২০ কিলোমিটার রাস্তা, ১ হাজার ৭শ ৯৭ মিটার ব্রিজ-কালভার্ট ।
সিডরের পর বরগুনায় ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ মেরামতে বার বার উদ্যোগ নেয়া হলেও সুফল পায়নি উপকূলবাসী। প্রতি বছরই বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম।
এলাকাবাসী জানান, স্বাভাবিক জোয়ারের সময় পানি তাদের ঘরে উঠে যায়, রান্না করারও সুযোগ থাকেনা। কোনো দূর্যোগের সময় আশ্রয় নেয়ার মতো আশ্রয়কেন্দ্র নেই সেখানে। বন্যায় স্কুল ঘরে আশ্রয় নেন তারা। সিডরের মতো সাইক্লোনের পরও সেখানে একটি সাইক্লোন সেন্টার নেই।
বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ কাইছার আলম বলেন, "স্থায়ী বাঁধ নির্মাণে প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। মোট চারটি প্রকল্পের আওতায় যেসব যায়গায় শুধু মেরামত হবে সেগুলো মেরামতের অন্তর্ভূক্ত করে প্রকল্পগুলো দেয়া হয়েছে।"
মির্জাগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান খান মোহাম্মদ আবু বক্কর সিদ্দীক এ বিষয়ে বলেন, "যদি বেড়িবাঁধ গুলো খুব শক্ত থাকতো তাহলে হয়তো মির্জাগঞ্জ উপজেলায় এতো ক্ষতি হতোনা। ব্লকের মাধ্যমে এই বাঁধগুলো না করলে দুই-এক বছর পর ই সেগুলো আবার ভেঙ্গে যাবে।"
সুপার সাইক্লোন সিডর তাণ্ডব চালায় পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জের চরখালী, গোলখালী, রানীপুর ও মেহেন্দীয়াবাদ গ্রামে। মারা যান প্রায় দুই শতাধিক মানুষ। ঘরবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয় কয়েক হাজার পরিবার।
দীর্ঘদিনেও স্থায়ী বাঁধ ও পর্যাপ্ত সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ না হওয়ায় ক্ষুব্ধ উপকূলবাসীরা।
একুশে সংবাদ/ডিটি/এআরএম
আপনার মতামত লিখুন :