সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

মালদ্বীপে নিখোঁজ হওয়া বাংলাদেশি হত্যার তদন্তে ফুয়েল বার্জের ক্যাপ্টেন গ্রেফতার

একুশে সংবাদ প্রকাশিত: ০৪:৩৫ পিএম, ৭ জানুয়ারি, ২০২৩

চতুর্দিকে যখন ইংরেজি ২০২২ বিদায়ের সুন্দর আয়োজনে ব্যস্ত পুরো পৃথিবী, অপর দিকে ঘটেছে প্রবাসীদের আহাজারি- নিখোঁজের মিছিল।

 

গত (২৮ ডিসেম্বর) মালদ্বীপের পার্শ্ববর্তী ভিলিমালে আইল্যান্ড থেকে ফুয়েল বার্জ বা জ্বালানি সরবরাহকারী নৌকায় রওনা হওয়ার পর থেকে নিখোঁজ হয়েছিল বার্জ সহ দুই ব্যক্তি।

 

একজন মালদ্বীপের থিনাধু আইল্যান্ডের মোহাম্মদ নিজাম (৪৫), এবং অপর ব্যক্তি প্রবাসী বাংলাদেশি মোহাম্মদ লিটন (৩৫)। ২৯ ডিসেম্বর তাদের নিখোঁজ হওয়ার খবর প্রকাশ হলে বার্জ সহ দুই ব্যক্তিকে খুঁজে পেতে মালদ্বীপ পুলিশ সার্ভিস অনুসন্ধান অভিযান শুরু করেন।

 

অনুসন্ধান অভিযানের পরের দিন ফুয়েল বাহী বার্জ বা নৌকাটি মালদ্বীপ এয়ারপোর্টের হুলহুলের নিকটবর্তী সাগরে ভাসমান অবস্থায় পাওয়া গেলেও নিখোঁজ দুই ব্যক্তির সন্ধান না পাওয়ায় বিষয়টি সিরিয়াস এবং অর্গানাইজড ডিপার্টমেন্ট দ্বারা তদন্ত শুরু করেন মালদ্বীপ পুলিশ, তাদের সন্দেহ জাগে যে এটি একটি সাধারণ নিখোঁজ হওয়া ব্যক্তিদের ঘটনা নয়। এরইমধ্যে সমুদ্রপথে নিখোঁজ হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধানে মালদ্বীপ পুলিশ একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন।

 

অনুসন্ধানের একপর্যায়ে, পরের দিন মালদ্বীপের বা-ভেনফারু আইল্যান্ডের কাছে সাগরে ভাসমান একটি অর্ধগলিত লাশ পাওয়া যায়। তবে তার পরিচয় সম্পর্কে কোনো তথ্য জানা যাইনি। মৃতদেহ শনাক্ত করার জন্য পুলিশ কাজ করছেন বলে  জানাযায় এবং স্থানীয় লোকজনের ভাষ্যমতে লাশটি লিটনের মৃতদেহ হতে পারে বলে তাদের বিশ্বাস।

 

সমুদ্রে নিখোঁজ হওয়া দুই ব্যক্তির জন্য অনুসন্ধান চলমান থাকায়, বর্ষপঞ্জির ২০২৩-এর দ্বিতীয় দিন জনসাধারণের একজন সদস্য যিনি সমুদ্রে নিখোঁজ হওয়া ব্যক্তি নিজাম (৪৫)-কে মালে সিটিতে দেখতে পান এবং ঐ ব্যক্তির সাথে একটি সেলফি তুলে সোশ্যাল মিডিয়া টুইটারে পোস্ট করেন।

 

টুইটার ছবি পুলিশের নজরে আসাতে দুই নিখোঁজ ব্যক্তির মামলা অপ্রত্যাশিত মোড় নেয়, এবং মালে সিটিতে পুলিশ অনুসন্ধান চালিয়ে নিখোঁজ ব্যক্তিদের একজনকে মালে‍‍`র একটি গেস্টহাউস থেকে উদ্ধার করেন এবং তাকে মঙ্গলবার ৩ জানুয়ারি বাংলাদেশি লিটন হত্যার অভিযোগে আদালতের আদেশে গ্রেফতার দেখানো হয়। সমুদ্রে নিখোঁজ হওয়া ফুয়েল বার্জের মামলাটি এখন নিখোঁজ থেকে হত্যা মামলার তদন্তে পরিণত হয়েছে। মামলার প্রধান সন্দেহভাজন ব্যক্তিটি উদ্ধার হওয়া ফুয়েল বার্জের ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ নিজাম।

 

মালদ্বীপের স্থানীয় গণমাধ্যমে দেওয়া বক্তব্যে একজন শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তা সন্দেহ করেন মোহাম্মদ নিজাম লিটনকে হত্যা করতে পারেন। কারন, তারা দুজনেই ছিল ফুয়েল বার্জে। আর সেই ফুয়েল পাওয়ারের সবকিছুর দ্বায়িত্বে ছিলেন প্রবাসী লিটন। ফুয়েল কোম্পানির কার্যক্রম পরিচালনা সহ বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থ বহন করতেন লিটন।

 

তার ধারণা, টাকা চুরি করতে নিজাম লিটনকে হত্যা করেছে। এছাড়াও আমি নিজামকে ২০০৬ সাল থেকে চিনি। সে তখনও চুরি ও মাদকের অপরাধে জড়িত ছিল এবং এখনও নানানরকম ভাবে অপকর্মে লিপ্ত আছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে, গত বুধবার নিজামকে কোর্টে তুলা হয় মালদ্বীপ পুলিশের অনুরোধে, তার শুনানির জন্য রুদ্ধদ্বার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় এবং আদালত নিজামকে ৬০ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার নির্দেশ দেন।

 

গত কাল রাতে মুঠোফোনে নিখোঁজ লিটন এর খালাতো ভাই মালেশিয়া প্রবাসী জিল্লুর রহমান এর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান আমার ভাই মালদ্বীপের সমুদ্র বাহী ফুয়েল বার্জে কাজ করেন। ভাইয়ের সাথে গত কিছু দিন যাবত কোনো যোগাযোগ করতে পারেনি, তার সহকর্মীদের সাথে যোগাযোগ করে জানতে পারি সে নিখোঁজ রয়েছেন তার সহকর্মী ক্যাপ্টেন নিজামকে পুলিশ সন্দেহজনক গ্রেপ্তার করেছেন। তার দাবি আমার ভাই এতো দিন নিখোঁজ হতে পারেনা সে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন এবং এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। দ্রুত সময়ের মধ্যে ভাই লিটনের হত্যাকারীর বিচার ও তার মরদেহ দেশে পাঠানোর জন্য দাবী জানান তিনি।

 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মালদ্বীপের বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রথম সচিব (শ্রম) মো. সোহেল পারভেজ জানান, আমরা বিষয়টি নিয়ে অবগত আছি এবং নিখোঁজ ফুয়েল বার্জের ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ নিজামকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে ৬০ দিনের রিমান্ড মনজুর করেন।  তার জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পারবো লিটন নিখোঁজ নাকি হত্যার শিকার। তারপর এবিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে পারবো।

 

উল্লেখ্য, নিখোঁজ লিটন এর দেশের বাড়ি জয়পুরহাট জেলার, আক্কেলপুর থানাধীন আমানপুর গ্রামের মরহুম আফজাল হোসেন এর একমাত্র পুত্র। তার গ্রমের বাড়িতে মা, স্ত্রী ও এক ছেলে, এক মেয়ে সন্তান রয়েছেন।

 

একুশে সংবাদ.কম/ও.অ.প্র/জাহাঙ্গীর

প্রবাস বিভাগের আরো খবর