সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

হানি ট্র্যাপের শিকার হয়েই এমপি আনার খুন!

একুশে সংবাদ প্রকাশিত: ০৮:৪৩ পিএম, ২৩ মে, ২০২৪

ঝিনাইদহ-৪ আসনের এমপি আনোয়ার আজীম আনারকে কীভাবে ভারতে খুন করা হয়েছে সে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছে বাংলাদেশ ও ভারতের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। কোন কৌশলে তাকে ভারতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, খুন করা হয়েছে এবং কীভাবে মরদেহ গুম করা হয়েছে এখন এসব তথ্য বের করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে।

এরমধ্যে ভারতের কলকাতাভিত্তিক একটি সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হয়েছে, এমপি আনারকে হানি ট্র্যাপে ফেলে— অর্থাৎ তরুণীর মাধ্যমে লোভ দেখিয়ে কলকাতায় নিয়ে গিয়ে খুন করা হয়েছে।

সংবাদমাধ্যমটি বলেছে, আনারের ব্যবসায়িক পার্টনার আক্তারুজ্জামান শাহীন হত্যার পুরো পরিকল্পনা তৈরী করে। আর এ কাজে তিনি ব্যবহার করেন শিলাস্তি রহমান নামের এক তরুণীকে। যার প্রকৃত নাম সিনথিয়া রহমান।

গত ১২ মে চিকিৎসার কথা বলে ভারতে যাওয়া এমপি আনার শিলাস্তি রহমানের সঙ্গে দেখা করেন। এই তরুণীকে ব্যবহার করে মূলত এমপি আনারকে ভারতে আনা হয়।

হত্যার ছক কষা আক্তারুজ্জামান শাহীন ১০ মে ভারত থেকে বাংলাদেশে আসেন। কিন্তু ওই সময় সিনথিয়া ভারতে থেকে গিয়েছিলেন। এমপি আনারকে ভারতে নেওয়ার পাশাপাশি শিলাস্তি সরাসরি এই হত্যাকাণ্ডে অংশ নেন। এরপর আনারের মরদেহ গুম করতেও সক্রিয় ভূমিকা রাখেন তিনি।

সংবাদমাধ্যমটি আরও জানিয়েছে, কিলিং মিশন সাকসেসফুল হওয়ার পর শিলাস্তি রহমান ওরফে সিনথিয়া রহমান গত ১৫ মে বিমানযোগে কলকাতা থেকে বাংলাদেশে ফেরেন।

হত্যার প্রধান পরিকল্পনাকারী আক্তারুজ্জামান শাহীন এবং এই তরুণী উভয়ই মাওবাদী সংগঠন পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির (পিবিসিপি) সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে সংবাদমাধ্যমটি দাবি করেছে।

গত ১২ মে কলকাতায় যাওয়া এমপি আনার ১৩ মে নিউ টাউনের একটি বাড়িতে নির্মম হত্যার শিকার হন। হত্যার পর তার মরদেহ টুকরো টুকরো করে ফেলা হয়। এরপর সেগুলো ট্রলি দিয়ে সেই বাড়ি থেকে বের করে নিয়ে গুম করে ফেলা হয়।

এদিকে শিলাস্তি রহমান নামের এই তরুণীকে ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার করেছে বাংলাদেশের পুলিশ। বর্তমানে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

ডিবি কর্মকর্তা হারুন বলেন, হত্যাকারীরা এমনভাবে লাশ গুমের চেষ্টা করেছে যাতে কোনো হদিস না মেলে। লাশ গুমের জন্য হাড্ডি থেকে মাংস আলাদা করে পৃথক পৃথক ট্রলিতে করে বিভিন্ন জায়গায় পাঠিয়ে দেয়া হয়। মাংস নিয়ে যাওয়ার সময় যাতে কেউ আটকালেও বুঝতে না পারে, সে জন্য মাংসের সঙ্গে মসলা মিশিয়ে খাবার উপযোগী মাংসের মতো বানানো হয়।

এ সময় সাংবাদিকরা মরদেহ উদ্ধারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মরদেহ উদ্ধারের কাজ চলছে। ভারতীয় পুলিশ গাড়ির চালককে নিয়ে তদন্ত কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। পুরোপুরি না পেলেও মরদেহের অংশ বিশেষ পাওয়া যাবে বলে আশ্বস্ত করেন তিনি।

ডিবি কর্মকর্তা হারুন বলেন, ফয়সাল নামে এক ব্যক্তি এমপি আনারকে ১৩ মে দুপুরে সাদা গাড়িতে রিসিভ করে। পরে মূল হত্যাকাণ্ড সংগঠিতকারী আমানুল্লাহ ওরফে শিমুল ভুইয়া ও ফয়সালসহ আনার ওই বাসায় যান। পরে মোস্তাফিজ নামে আরও একজন ওই ফ্ল্যাটে প্রবেশ করে। জিহাদ ও সিয়াম নামে হত্যাকণ্ডে জড়িত আরও দুই জন সেখানে ছিল। দুপুর ২টা ৫১ মিনিটে এমপি আনার ওই বাসায় যান। প্রবেশের আধাঘণ্টার মধ্যে হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়।

হত্যাকারীরা পরিকল্পনার অংশ হিসেবে শুরু থেকেই বিষয়টিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছিল জানিয়ে ডিবি কর্মকর্তা বলেন, ঘটনার পর একজন বাসা থেকে বের হয়ে আসে। বিষয়টিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে সে এমপি আনারের ফোন ব্যবহার করে ফোন ও মেসেজ করে।

হত্যাকাণ্ড বাস্তবায়নকারী আমানুল্লাহ ছদ্মনাম, তার নাম শিমুল ভূঁইয়া। তিনি পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টির নেতা। বর্তমানে আমানুল্লাহ ও পরিকল্পনাকারী শাহিনের গার্লফ্রেন্ড শিলাস্তি রহমান ডিবির হাতে আটক রয়েছে। তাদের থেকেই হত্যাকাণ্ডের পুরো ঘটনা জানা গিয়েছে বলে জানান হারুন অর রশীদ।

ডিবির এই কর্মকর্তা দাবি করেন, প্রথমে বাংলাদেশে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। তবে ডিবি পুলিশের তৎপরতার কারণে ঢাকায় হত্যাকাণ্ড ঘটাতে সাহস করেনি তারা। এ কারণে ভারতে তাকে হত্যার পরিকল্পনা হয়।

 

একুশে সংবাদ/স.চ.প্র/জাহা 
 

জাতীয় বিভাগের আরো খবর