সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

পরিচয় গোপন বিভিন্ন পেশার সাথে যুক্ত, ৯ বছর পর গ্রেফতার

একুশে সংবাদ প্রকাশিত: ০১:৪৪ পিএম, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২

২০১৪ সালে চাঞ্চল্যকর রমনা থানা ছাত্রলীগের তৎকালীন সহ-সভাপতি মাহবুবুর রহমান রানা হত্যাকাণ্ডের অন্যতম প্রধান পলাতক আসামি মো. ইকবাল হোসেন তারেককে (৩৮) গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৩।

 

শুক্রবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।

 

তিনি বলেন,  মো. ইকবাল হোসেন তারেক হত্যাকাণ্ডের পর চাঁদপুরে গিয়ে গা ঢাকা দেন। তার গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর হলেও বেড়ে ওঠা যশোরে। যে কারণে নিজ এলাকার মানুষ খুব একটা চিনতো না। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়েই সে চাঁদপুরে অবস্থান করে। তিনি চাঁদপুরে নিজ এলাকায় নিজের নাম পাল্টে তাহের নাম ধারণ করেছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত নিজেকে গোপন রাখতে পারলেন না। ধরা পড়লেন র‌্যাবের হাতে।

 

আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, পলাতক আসামি চাঁদপুরে নিজের নাম-পরিচয় গোপন রাখে। সেখানে চাষাবাদ শুরু করে, কিন্তু চাষাবাদের কোনো অভিজ্ঞতা না থাকায় সে পুনরায় যশোর চলে যায়। সেখানেও কিছুদিন পরিবহন শ্রমিক হিসেবে কাজ করে। তারপর মাদক ব্যবসা শুরু করে।

 

এই র‌্যাব কর্মকর্তা আরও জানান, ২০১৯ সালে আবারও ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় নিজেকে আব্দুর রহিমের ছেলে তাহের পরিচয় দিয়ে বসবাস শুরু করে। শুরুতে গার্মেন্টস থেকে পরিত্যক্ত কার্টন সংগ্রহ করে বিক্রি করতো। এ ব্যবসার আড়ালে ছিল মাদক ব্যবসা। সে ঘন ঘন বাসস্থান পরিবর্তন করতো। সর্বশেষ দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ এলাকায় মাদক ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে তার প্রকৃত পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর) র‌্যাবের গোয়েন্দা দলের তাকে গ্রেফতার করে।

 

তিনি বলেন, আসামি তৎকালীন সুইফ ক্যাবল লিমিটেড নামক ডিস ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতো। ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক ছিলেন কামরুল ইসলাম এবং তানভিরুজ্জামান রনি। তাদের সাথে ছাত্রলীগ নেতা মাহবুবুর রহমান রানার ব্যবসায়িক বিরোধ ছিল। ওই বিরোধ নিয়ে এক পক্ষ অন্য পক্ষের ডিস ক্যাবল সংযোগ কেটে দিতো। এ নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে মাঝেমধ্যেই মারামারি হতো।

 

ওই ঘটনার জেরে ২০১৪ সালের ২৩ জানুয়ারি সন্ধ্যায় রানা মোটরসাইকেলযোগে মগবাজার চৌরাস্তা সংলগ্ন মসজিদের পাশের গলিতে প্রবেশ করলে বাটার গলির মুখে তার গতিরোধ করে এলোপাতাড়ি তাকে কোপানো হয়। এতে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান।

 

আরিফ মহিউদ্দিন বলেন, ২০১১ সাল থেকে হত্যাকাণ্ডের ঘটনার আগ পর্যন্ত আসামি তারেক তৎকালীন সুইফ ক্যাবল লিমিটেড নামক ডিস ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করতো। এসময় সে গাঁজা ছেড়ে ইয়াবায় আসক্ত হয়ে পড়ে এবং চাকরির পাশাপাশি মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে।

 

২০১১ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর তাকে মাদকসহ রমনা থানা পুলিশ গ্রেফতার করে। ওই সময় সে নিজেকে মো. ইকবাল হোসেন তারেক পরিচয় দেয়। তাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরিয়ে দেওয়ায় রানা গ্রুপের লোকদের হাত ছিল। সে থেকেই রানা গ্রুপের প্রতি তার ক্ষোভ তৈরি হয়। ব্যক্তিগত ক্ষোভ ও ডিস মালিকের নির্দেশে হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয় সে। মাদকসহ এর আগেও সে একাধিকবার গ্রেফতার হয়। তবে পরিচয় গোপন রাখায় হত্যা মামলার দায় থেকে সে বারবারই রেহাই পেয়ে যায়।

 

এ হত্যা মামলায় সুইফ ক্যাবল লিমিটেডের মালিক কামরুল ইসলাম অস্ত্রসহ গ্রেফতার হন। মামলার তদন্ত শেষে তদন্তকারী কর্মকর্তা ১৪ জন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন। এরমধ্যে ১০ জন গ্রেফতার এবং চারজন পলাতক ছিলেন। পলাতক আসামিদের মধ্যে মো. ইকবাল হোসেন তারেক অন্যতম। তার নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলেও আত্মগোপনে ছিলেন তিনি।

 

র‌্যাব জানায়, গ্রেফতার তারেকের বিরুদ্ধে হত্যা ও মাদকসহ চারটি মামলা রয়েছে। তাকে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তরের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

 

একুশে সংবাদ.কম/জা.হা

 

জাতীয় বিভাগের আরো খবর