সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

এনবিআরের সামনে জ্বালানি তেলের শুল্ক-কর প্রত্যাহারে তরুণরা

একুশে সংবাদ প্রকাশিত: ০২:১৯ পিএম, ১০ আগস্ট, ২০২২
ছবি: একুশে সংবাদ

বুলবুলিতে ধান খেয়েছে, খাজনা দিবো কিসে ? জ্বালানি তেলে ৩৭% খাজনা মওকুফ করো,গরীব-মধ্যবিত্তদের বাঁচতে দাও বলে স্লোগান নিয়ে জ্বালানি তেলে বিদ্যমান ৩৭ শতাংশ শুল্ক ও কর প্রত্যাহার চেয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সামনে মানববন্ধন করেছেন ‘দেশের দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত জনতা’র ব্যানারে বেশ কিছু তরুণ। হাতে থালা-গামলা নিয়ে সেখানে অবস্থান নেন তারা।

বুধবার (১০ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১১ টায় তারা এনবিআরের প্রধান ফটকের পাশে মানবন্ধন শুরু করেন। কিছুক্ষণ পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনুরোধে তারা সেখান থেকে চলে যান।

করোনা-লকডাউন, বন্যা, ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে এমনিতেই দেশের অর্থনীতি ভালো নেই।  সব কিছুর দাম বাড়তি।  গরীবরা ঠিক মত খেতে পায় না, মধ্যবিত্তরা খাবার কম খায়।  সংসার চালাতে মা তার সন্তানকে বিক্রি করে, বাবা কিডনী বিক্রি করে মেয়ের বিয়ে দেয়।  ঋণের চাপে আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটছে দেশে।  মূল্যস্ফিতিতে দেশের প্রতিটি জনগণ দিশেহারা।  কিন্তু এর মধ্যে হঠাৎ করে মড়ার উপর খাড়ার ঘা’র মত খবর অতি উচ্চ হারে বৃদ্ধি করা হলো জ্বালানি তেলের মূল্য।  নতুন দামে ডিজেল ১১৪ টাকা, অকটেন ১৩৫ টাকা,  পেট্রোল ১৩০ টাকা করা হলো।  আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে সমন্বয়ের কথা বলা হয়েও এই মূল্য প্রকৃতমূল্য নয়, সরকারের নানা প্রকার শুল্ক ও কর সহকারে মূল্য।  এই মুল্যের মধ্যে শুল্ক ১০%, ভ্যাট ১৫%, অগ্রীম আয়কর ৫%, অগ্রীম ভ্যাট ৫% সহ মোট শতকরা ৩৭% হচ্ছে সরকারী শুল্ক ও কর।  এ যেন রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে এক বিরাট লাভজনক ব্যবসা। 

ডিজেল: প্রকৃত মূল্য ৮৩ টাকা  + শুল্ক ও কর ৩১ টাকা = নতুন মূল্য ১১৪ টাকা
পেট্রোল: প্রকৃত মূল্য ৯৪ টাকা + শুল্ক ও কর ৩৬ টাকা = নতুন মূল্য ১৩০ টাকা
অকটেন: প্রকৃত মূল্য ৯৮ টাকা + শুল্ক ও কর ৩৭ টাকা = নতুন মূল্য ১৩৫ টাকা

জ্বালানি তেলের এ অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির কারণে ব্যাপক হারে বেড়েছে পরিবহণ ভাড়া।  আর যেহেতু পরিবহণের সাথে দৈনন্দিন সকল মৌলিক খাত জড়িত, তাই জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির সাথে সাথে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসাসহ সকল জীবন ব্যয় কয়েকগুন বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা দেশের ৯৯% জনগণের জন্য সামাল দেয়া কোনভাবেই সম্ভব নয়।  এভাবে মূল্যবৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে দেশের দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মৃত্যু ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না।

জনগণের জন্যই রাষ্ট্র, জনগণের জন্যই সরকার।  সেই জনগণকে পেষণ করে রাষ্ট্র তার লাভজনক ব্যবসা অব্যাহত রাখতে পারে না।  আজকে যদি কোন সাধারণ ব্যবসায়ী ১০০ টাকায় ৩৭ টাকা লাভ করতো, তবে সেটাকে অতি উচ্চ লাভ হিসেবে দেখা হতো।  ম্যাজিস্ট্রেট ঐ ব্যবসায়ীর ব্যবসা সিলগালা করতো, পুলিশ তাকে গ্রেফতার করতো।  একজন সাধারণ ব্যবসায়ীর ১০০ টাকায় ৩৭ টাকা লভ্যাংশকে যদি অনৈতিক হিসেবে দেখা হয়, তবে রাষ্ট্র কিভাবে কোটি কোটি জনগণের থেকে ৩৭% লাভে ব্যবসা করে ? এ ব্যবসা চলতে থাকলে দেশে দুর্ভিক্ষ সুনিশ্চিত, যেখানে কোটি কোটি দরিদ্র ও মধ্যবিত্তের মৃত্যু অবধারিত।

তাই দেশের দরিদ্র ও মধ্যবিত্তকে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষার একমাত্র উপায় হলো- জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে এ অতি লাভজনক ব্যবসা থেকে সরে আসা।  জ্বালানি তেল থেকে ৩৭% খাজনা সদৃশ্য আয়কর ও শুল্ক বাদ দেয়া।  সরকার অনেক পণ্যের থেকে শুল্ক বা কর মওকুফ করে। তাহলে জ্বালানি তেলের মত জনগণের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় থেকে জোরজবরদস্তি করে ৩৭% শুল্ক ও কর নিতে হবে ? 

বর্তমান পরিস্থিতিতে তাই আমাদের গরীর ও মধ্যবিত্ত’র বাঁচা-মরার দাবী হলো, জ্বালানি তেল শতভাগ কর ও শুল্কমুক্ত করে প্রকৃত মূল্য হিসেবে ডিজেল ৮৩ টাকা, পেট্রোল ৯৪ টাকা এবং অকটেন ৯৪ টাকা নির্ধারণ করার দাবী জানান তরুনরা। 

একুশে সংবাদ/রাফি/বাবু

জাতীয় বিভাগের আরো খবর