সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

তাপদাহে অতিষ্ঠ জীবন, আরও বাড়ার আশঙ্কা

একুশে সংবাদ প্রকাশিত: ১০:২০ পিএম, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

দেশজুড়ে চলমান তাপপ্রবাহ শিগগিরই কমছে না। আগামী অন্তত দু’সপ্তাহ তাপমাত্রা আরও বাড়বে জানিয়ে আবহাওয়া বিভাগ বলছে, পুরো এপ্রিল জুড়েই থাকবে তাপপ্রবাহ। মাঝেমধ্যে সামান্য বৃষ্টির দেখা মিললেও গরমের অস্বস্তি কমার সম্ভাবনা তাপপ্রবাহের তীব্রতা আরও বাড়ার আশঙ্কায় সারাদেশে জারি করা হয়েছে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে না যাওয়ার বার্তা দিয়েছে তারা।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, জলীয়বাষ্প বেশি থাকার কারণে অস্বস্তি বাড়তে পারে। একই সঙ্গে সমুদ্রের লঘুচাপটি পশ্চিমবঙ্গ ও আশেপাশের এলাকায় অবস্থান করার গরম প্রভাব দেখা যাচ্ছে ভূপৃষ্ঠে। এর আগে দেশে ১৫ থেকে ১৩ দিন পর্যন্ত লাগাতার তাপপ্রবাহ থাকার রেকর্ড থাকলেও এবার চলতি মাসেই ১৮ দিনই টানা তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। আগামী পাঁচ দিনেও আবহাওয়ায় পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই।

শুক্রবার নিয়মিত বুলেটিনে সকাল ৯টা থেকে পরের ২৪ ঘণ্টার বার্তায় আবহাওয়া অধিদপ্তর বলেছে, যশোর, বাগেরহাট, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা বজায় থাকতে পারে। এ ছাড়া, দিনাজপুর, রাঙ্গামাটি, চাঁদপুর, খুলনা, সাতক্ষীরা, বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলাসহ ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।

এতে আরও বলা হয়, সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বৃদ্ধি পেতে পারে। তবে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝাড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। অন্যত্র আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।

টানা তিন দিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বইছে চুয়াডাঙ্গায়। তাপদাহের কারণে জেলা প্রশাসন ও জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে জেলায় হিট অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। মাইকিং করে হিট অ্যালার্ট এবং করণীয় তাপদাহ থেকে রক্ষায় করণীয় কি সেই বিষয়ে প্রচার চালানো হচ্ছে। তীব্র তাপদাহের সাথে পাল্লা দিয়ে চলছে বিদ্যুতের লোডশেডিং। ফলে ঘরের মধ্যেও স্বস্তিতে থাকতে পারছেন জেলার বাসিন্দারা।

কাঠফাটা রোদ ও তীব্র গরমে বিপর্যস্ত জনজীবন

গত ১৬ এপ্রিল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল চুয়াডাঙ্গায়, ১৭ এপ্রিল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল চুয়াডাঙ্গা এবং সর্বশেষ বৃহস্পতিবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গা ও যশোরে। তবে পরিবেশগত কারণে অনুভূত তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রির বেশি বলে জানাচ্ছে আবহাওয়ার সংক্রান্ত অ্যাপ আকুয়া ওয়েদার।

কাঠফাটা রোদ ও তীব্র গরমে বিপর্যস্ত খুলনার জনজীবন। সূর্য ওঠার পর থেকেই বাড়তে থাকে তাপমাত্রার পারদ। অসহনীয় তাপদাহে কষ্ট বাড়ছে সব শ্রেণী-পেশার মানুষের। তীব্র গরমে অতিষ্ঠ হয়ে এ অঞ্চলের দিনমজুর, রিকশাওয়ালা, শ্রমজীবী মেহনতি মানুষ ও কৃষকরা পড়েছেন চরম বিপাকে। খুলনা আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ আমীরুল আজাদ জানান, তাপদাহ আরও দু’এক দিন অব্যাহত থাকবে।

বগুড়াসহ আশপাশে অঞ্চলের তাপমাত্রা বাড়ছে প্রতিদিনই। খরতাপে পুড়ছে জনপদ। ভ্যাপসা গরমে কাহিল সব বয়সী মানুষ। বেলা বাড়ার সাথে সাথে জনসমাগম কমে যাচ্ছে শহর ও সড়কে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে মানুষের চলাচল কমে গেছে। শ্রমজীবী ও কৃষিজীবী মানুষের কাজ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। বগুড়ায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৬ দশমিক ৬ সেলসিয়াস। তবে অনুভূত আরও বেশি।

তীব্র তাপদাহে বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ

সারাদেশের মতো রাজধানী ঢাকাতেও একই চিত্র। শুক্রবার ছুটির দিন থাকলেও, দিনের বেলায় মানুষের চলাফেরা ছিলো খুবই সীমিত। সন্ধ্যার পর সামান্য স্বস্তির আশায় অনেক বাড়ি থেকে বের হলেও স্বস্তি পানি গরম ও ঘামের কারণে। নগরীর বিভিন্ন সমাগমস্থলে সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, অন্যান্য ছুটির দিনের তুলনায় শুক্রবার মানুষজনের উপস্থিতি ছিলো একেবারেই কম।

আকাশে মেঘ না থাকায় রোদের তীব্র তাপে বাতাসও উত্তপ্ত থাকছে। এই তীব্র তাপদাহে বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ। শিশু ও বৃদ্ধরা গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। রোদের প্রখর তাপে শরীর জ্বালা শুরু হয়।  প্রচণ্ড গরমে রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে বেড়েছে রোগীর চাপ। শিশুরা ভুগছে শ্বাসকষ্ট বা নিউমোনিয়ায়। চলতি মাসের ১৮ তারিখ পর্যন্ত শিশু হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে ২৪৬টি শিশু।

শিশুদের ব্যাপারে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশ শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক মো. জাহাঙ্গীর আলম। অন্য বছরের এই গরমে শিশুদের মধ্যে ডায়রিয়ার হার বেশি দেখা গেলেও চলতি বছর ডায়রিয়ার প্রকোপ কিছুটা কম বলে জানিয়েছেন এই চিকিৎসক। তারপরও সতর্কতার বিকল্প নেই জানিয়ে তিনি বলেন, এমন গরমে সবচেয়ে বেশি কষ্ট পায় শিশুরা। শিশুদের নানান রকম ঝুঁকি তৈরি হয়।

বিশেষজ্ঞরা চিকিৎসকরা বলছেন, প্রচণ্ড গরমের এই সময় সবাইকে প্রচুর পানি খেতে হবে। সেইসঙ্গে বেল ও তরমুজের শরবত ও ডাবের পানি খেতে হবে। মসলাদার খাবার না খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন তারা। সেইসঙ্গে ঠাণ্ডা পানি না খাওয়ার কথাও বলছেন তারা। অতিরিক্ত ঠাণ্ডা পানি শরীরের জন্য ক্ষতিকর। এছাড়া, বাইরের খাবার এবং সড়কের পাশে বিক্রি হওয়া শরবত না খাওয়ারও পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।

 

একুশে সংবাদ/বিএইচ

পরিবেশ বিভাগের আরো খবর