সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

মেডিকেলে চান্স পেলেন কৃষক পরিবারের সন্তান অসীম 

একুশে সংবাদ প্রকাশিত: ০৩:০০ পিএম, ৮ এপ্রিল, ২০২১

অসীম দাশ সাধারণ এক কৃষক পরিবারের সন্তান। কৃষক বাবা সহ পরিবারের সবার মুখ উজ্জ্বল করেছেন তিনি। ছোটবেলা থেকে অসীমের মেডিকেলে পড়ার স্বপ্ন এখন বাস্তবে রূপ নিয়েছে। 

নিজের চেষ্টায় ও পরিবারের সদস্যদের অনুপ্রেরণায় অদম্য মেধাবী এ শিক্ষার্থী নিজেকে নিয়ে গেছেন এক অনন্য উচ্চতায়। কোন বাঁধাই যেন দমিয়ে রাখতে পারেনি অসীমের শিক্ষা জীবনের পথ চলাকে।

অদম্য সেই অসীম এবার মেডিকেলে চান্স পেয়েছেন। তিনি দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। অসীম মৌলভীবাজার জেলার জুড়ী উপজেলার পশ্চিমজুড়ী ইউনিয়নের আমতৈল গ্রামের এক আলোকিত সাধারণ পরিবারের সন্তান। বাবা পেশায় কৃষক বিপুল দাস ও মা গৃহিনী প্রণতি রানী দাস।

জানা গেছে, অসীমের বাবা বিপুল দাশ একজন সাধারণ কৃষক। চাচা দীপক চন্দ্র দাশ পার্শ্ববর্তী বড়লেখা উপজেলার হাকালুকি উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। অসীম মেডিকেলে চান্স পাওয়ার পেছনে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছেন দিপক চন্দ্র দাস। সেই ছোটবেলা থেকেই অসীম দাশ কে তিনি আগলে রেখেছেন। তিন ভাইয়ের মধ্যে অসীম সবার ছোট। ছোটবেলা থেকেই তিনি অদম্য মেধাবী ছিলেন। তিনি গ্রামের একটি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এ্যালফাবেট কিন্ডারগার্টেন থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। এরপর  নিরোদ বিহারী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি পাশ করেন। এসএসসি পাশ করার পর সিলেট সরকারি কলেজে ভর্তি হয়েও তিনি জিপিএ-৫ পান। এছাড়াও তিনি শিক্ষাজীবনে সরকারি বৃত্তি সহ বিভিন্ন মেধা নির্বাচনী পরীক্ষায় কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফল অর্জন করে।

অসীমের সাফল্যের পিছনের গল্প শুনতে গিয়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি তথ্য বেরিয়ে আসে। অসিম তথ্যপ্রযুক্তির যুগে ফেসবুক থেকে ছিলেন অনেকটা ধরে। যেদিন মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল দিয়েছিল সেদিনও ছিল না তার কোন ফেসবুক আইডি। অবশেষে বন্ধু ও প্রতিবেশীদের অনেকের আবদার মেটাতে গিয়ে তিনি তার নিজের ফেসবুক আইডি খুলেন। এ ব্যাপারে অসীম বলেন, ইন্টারনেটে ফেইসবুকিং ও  দীর্ঘ সময় ধরে গেইমস খেলা এগুলো আমাদের কে সাময়িক আনন্দ দেয়। কিন্তু এগুলো থেকে দূরে থেকে আমি যে সরকারি মেডিকেলে চান্স পেয়েছি এটা আমাকে সারা জীবনের আনন্দ দেবে। তাই আমি ইন্টারনেটের অপব্যবহার থেকে অনেকটাই দূরে ছিলাম।

জুড়ী উপজেলায় একমাত্র মেডিকেলে চান্স পাওয়া শিক্ষার্থী অসীমের পরিবারে বইছে আনন্দের বন্যা। মেডিকেল কলেজে উপজেলার একমাত্র শিক্ষার্থী হিসেবে চান্স পাওয়ায় পুরো উপজেলার সচেতন মহল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অভিনন্দন জানাচ্ছেন তাকে।

অসীম বলেন, ছোটবেলা থেকেই আমার স্বপ্ন ছিল ডাক্তার হওয়ার। আর সেই লক্ষ্যে আমি লেখাপড়া চালিয়ে গিয়েছি।সরকারি মেডিকেলে চান্স পেয়ে সত্যিই খুব ভালো লাগছে।সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন, আমি যাতে একজন আদর্শবান ডাক্তার হয়ে আমাদের নিজ উপজেলার দরিদ্র অসহায় মানুষের কল্যাণে কাজ করতে পারে। 

অসীমের যে প্রতিষ্ঠানে হাতেখড়ি হয়েছিল সেই এ্যালফাবেট কিন্ডারগার্টেনের প্রধান শিক্ষক বিকাশ দাস বলেন,পরপর দু'বছর আমাদের মত অবহেলিত বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ২ জন শিক্ষার্থী মেডিকেলে চান্স পেয়েছে। তাদের সাফল্যে সত্যিই আমরা গর্ববোধ করছি। 

নিরোদ বিহারী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মৃনাল কান্তি দাশ বলেন, অসীম খুবই মেধাবী ছাত্র। সে জেএসসি এবং এসএসসি পরীক্ষায় আমাদের প্রতিষ্ঠান থেকে জিপিএ ৫ পেয়েছিল। তার কৃতিত্বে আমরা গর্বিত। গত বছর এ বিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র পল্লব দাশ মেডিকেল কলেজে চান্স পেয়েছিল। সে বর্তমানে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজে অধ্যয়নরত। 

চাচা দিপক চন্দ্র দাশ বলেন, ছোটবেলা থেকেই অসীম লেখাপড়ায় ছিল অদম্য মেধাবী। অবশেষে আমাদের পরিবারের সকলের প্রচেষ্টা, অনুপ্রেরণা ও সর্বোপরি অসীমের নিজ প্রচেষ্টায় সে মেডিকেলে চান্স পেয়েছে। 

একুশে সংবাদ/জ/আ

শিক্ষা বিভাগের আরো খবর