সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের সনদ জালিয়াতি চক্রের ৭ সদস্য গ্রেফতার 

একুশে সংবাদ প্রকাশিত: ০৩:২৫ পিএম, ২৮ আগস্ট, ২০২১

ঢাকা মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে তথ্য পরিবর্তনের মাধ্যমে জাল সনদ তৈরির অভিযোগে সাত সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ এর গোয়েন্দা সাইবার এন্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ।

গ্রেফতারকৃতরা হলো নূর রিমতি, মোঃ জামাল হোসেন, এ. কে. এম মোস্তফা কামাল, মোঃ মারুফ, ফারুক আহম্মেদ স্বপন, মাহবুব আলম ও মোঃ আবেদ আলী।  

            

পুলিশ জানায় একজন ভুক্তভোগীর অভিযোগের ভিত্তিতে ডিএমপির গোয়েন্দা ডিবি-সাইবার এন্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ শরীফুল ইসলাম ও অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার জনাব ফজলুর রহমান এর সার্বিক তদারকীতে ওয়েব বেইজড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিমের টিম ইনচার্জ অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার জনাব আশরাফউল্লাহ এর নেতৃত্বে গতকাল ২৭ আগস্ট শুক্রবার রাজধানীর মোহাম্মদপুর, রমনা ও চকবাজার থানা এলাকা অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশ।

গ্রেফতারের সময় তাদের হেফাজত হতে বেশ কিছু এ্যাডমিট কার্ড, এ্যাকাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট,মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, ঢাকা লেখা একটি খাঁকি রংয়ের বড় সাইজের খামের ভিতর হতে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে নাম, বয়স সংসোধনীয় এ্যাপলিকেশন পূরণ করা ৫ টি ফর্ম। ওয়েব
বেইজ রেজাল্ট পাবলিক সিস্টেম ফর ইডুকেশন বোর্ড লেখা অনলাইন রেজাল্ট শিট ২ কপি। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, ঢাকা লেখা খাঁকি রংয়ের মাঝারি সাইজের খাম ৮ টি উদ্ধার করা হয়।

           

আজ শনিবার ২৮ আগস্ট দুপুর সাড়ে বারোটায় ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সংবাদ
সম্মেলনে ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, ভিকটিম নূর তাবাসসুম সুলতানা ২০১৯ সালে ধানমন্ডি কামরুননেছা গভঃ গার্লস হাই স্কুল থেকেএসএসসি পাশ করে। জরুরি প্রয়োজনে যোগাযোগ করার জন্য শিক্ষা বোর্ডে দেয়া মোবাইল নাম্বারে গত ২১ আগস্ট একটি ক্ষুদে বার্তা আসে। ওই বার্তায় তার রোল ও রেজিস্ট্রেশন নাম্বার ঠিক থাকলেও শিক্ষার্থীর নাম ও পিতা-মাতার নামসহ জন্ম তারিখ পরিবর্তিত দেখতে পায়। তখন তারা স্কুল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে যোগাযোগ করে পরিবর্তনের বিষয়ে সত্যতা পায়। এ ঘটনায় ধানমন্ডি মডেল থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা রুজু হয়। এর পর মামলার তদন্ত শুরু করে গোয়েন্দা পুলিশ।

ভিকটিমের অভিযোহগর ভিত্তিতে গোয়েন্দা পুলিশ ঘটনার রহস্য উন্মোচন ও জালিয়াতির সাথে জড়িতদের গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃদের সম্পর্কে ডিবির এই কর্মকর্তা আরো বলেন, গ্রেফতারকৃত নূর রিমতি ২০১৯ সলে অনুষ্ঠিত এসএসসি পরীক্ষায় রাজধানীর সিটি মডেল কলেজ হতে
অংশগ্রহণ করে অকৃতকার্য হয়। কিন্তু তার ইতালি যাওয়ার জন্য এসএসসি পাশের সার্টিফিকেট প্রয়োজন।

সেই জন্য জাল সনদ তৈরির জন্য সে তার মামা জামাল হোসেনের মাধ্যমে এ. কে. এম মোস্তফা কামাল এর সাথে সাড়ে তিন লক্ষ টাকায় চুক্তিবদ্ধ হন। চুক্তি অনুযায়ী মোস্তফা কামাল শিক্ষা বোর্ডের দালাল চক্র সদস্য মারুফ, মাহবুব আলম, ফারুক আহম্মেদ স্বপন, আবেদ আলীদের সাথে চুক্তি
করে। তাদের সমন্বয় করে নূর তাবাসসুম, পিতাঃ মোঃ নূর উদ্দিন, মাতাঃ রোকেয়া সুলতানা এর সার্টিফিকেট সংক্রান্ত জেএসসি এবং এসএসসি পাসের সকল তথ্য সংগ্রহ করে। 

এরপর তারা প্রথমে শিক্ষার্থীর নাম, পিতার নাম, মাতার নাম সংশোধনের জন্য শিক্ষা বোর্ডের নির্ধারিত ফরমেটে আবেদন করেন।

শিক্ষা বোর্ডের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারীদের টাকার বিনিময়ে শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটের রেজাল্ট আর্কাইভে নির্ধারিত ফরমেটে সংরক্ষিত কৃতকার্য প্রকৃত শিক্ষার্থী নূর
তাবাসসুম এর তথ্য পরিবর্তন করে অকৃতকার্য শিক্ষার্থী নুর রিমতির তথ্যসমূহ আপলোডের মাধ্যমে জাল সনদ তৈরি করে। পরবর্তীতে জন্ম তারিখও পরিবর্তন করে নেয় তারা। এমনকি শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইট সমূহেও পরিবর্তিত শিক্ষার্থীর সংযোজিত তথ্যসমূহ প্রদর্শন করে। 

             উক্ত প্রতারক চক্র ঢাকা শিক্ষা বোর্ডসহ অন্যান্য শিক্ষা বোর্ডের বিভিন্ন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের নাম, পিতার নাম, মাতার নাম, জন্ম তারিখসহ অন্যান্য তথ্য পরিবর্তন করে
অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের তথ্য সংযোজন করে জাল সনদ তৈরির মাধ্যমে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে
নেয় বলে জানান গোয়েন্দার এই কর্মকর্তা।

তিনি আরো বলেন শিক্ষার্থী ও সম্মানিত অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে ইতোপূর্বে যারা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন শিক্ষাবোর্ড হতে কৃতকার্য হয়েছে তাদেরকে শিক্ষা বোর্ডের রেজাল্ট আর্কিইভে প্রবেশ করে ফলাফল যাচাই করে কোন পরিবর্তন দেখতে পেলে সংশ্লিষ্ট বোর্ড কর্তৃপক্ষ বা পুলিশকে অবহিত করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন।

একুশে সংবাদ/বেলাল 

অপরাধ বিভাগের আরো খবর