সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

সমস্যায় জর্জরিত ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা-স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স-কঠিন হয়ে পড়ছে সেবা প্রদান

একুশে সংবাদ প্রকাশিত: ০৫:২৮ পিএম, ২৯ মার্চ, ২০২৪

ময়মনসিংহ জেলার ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ধুঁকে ধুঁকে যেন নিজেই রোগী হয়ে পড়ছে! অপর্যাপ্ত চিকিৎসক, জনবল সংকট, শূন্য পদের ছড়াছড়ি, নিরাপত্তা ঘাটতি, পুরোনো ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যুৎ লাইন, ত্রুটিপূর্ণ সেপটিক ট্যাঙ্কের কারণে দুর্গন্ধসহ বিভিন্ন সংকটের বেড়াজালে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসাসেবা। প্রশাসনিক কাজ সামলাতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। এত এত সীমাবদ্ধতার পরও রোগীদের যথাযথ চিকিৎসা দিতে শতভাগ চেষ্টা চলছে। কর্তৃপক্ষের প্রত্যাশা, সব সমস্যা কাটিয়ে উঠে রোগীদের ভরসাস্থলে পরিণত হতে পারবে ৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালটি। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নানা সমস্যা সত্ত্বেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ঈশ্বরগঞ্জসহ  নান্দাইল, গৌরীপুর ও কেন্দুয়া উপজেলার কিছু অংশের মানুষের সাধারণ স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে আসছে। আন্তরিকভাবে চাইলেও নানামুখী সমস্যার কারণে সাধারণ রোগীদের চাহিদা পুরোপুরি পূরণ করতে পারছে না স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি। সরেজমিন হাসপাতালটির বহির্বিভাগে গিয়ে দেখা যায়, একই রুমে বসে চিকিৎসা দিচ্ছেন কয়েকজন চিকিৎসক। বাইরে প্রচন্ড ভিড় ঠেলে ডাক্তার দেখানোর জন্য উদগ্রিব হয়ে রয়েছেন সেবাপ্রত্যাশীরা। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, আবাসিক মেডিকেল অফিসার, চক্ষু চিকিৎসক, চর্ম ও যৌন চিকিৎসক, ইএনটি কনসালট্যান্টসহ বেশ কয়েকটি পদ খালি রয়েছে বেশ কয়েক দিন ধরে। 

অন্যদিকে হাসপাতাল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য নেই পর্যাপ্ত লোকবল। তিনজন ক্লিনার ও দুজন ওয়ার্ড বয়ের পদ শূন্য রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। এর বাইরে দাফতরিক কাজের জন্যও বিভিন্ন পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য থাকায় প্রশাসনিক কাজ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। হাসপাতালের বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন অনেক পুরোনো হয়ে যাওয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন স্থানে ঝুলে আতঙ্কে থাকেন সেবা দাতা গ্রহীতারা। হাসপাতালের কোয়ার্টারগুলো আধুনিক মানের না হওয়ায় ডাক্তাররা সেসব স্থানে বসবাসের আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। এ ছাড়া হাসপাতাল প্রাঙ্গণে নিরাপত্তা ঘাটতিও রয়েছে। এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে সিকিউরিটি গার্ড নিয়োগ দেওয়া খুবই জরুরি বলে জানান অফিস প্রধান। হাসপাতালের হিসাব অনুযায়ী গত ফেব্রুয়ারি মাসে বহির্বিভাগে ৭ হাজার ৩৯ জন রোগী সেবা নিয়েছেন। ইমার্জেন্সি বিভাগে ৩ হাজার ৭৫৯ জন ও ইনডোরে ভর্তি হয়েছেন ৬২২ জন। 

সিজারিয়ান ব্যবস্থা চালু থাকায় ৮টি সিজার ও ৬৯টি নরমাল ডেলিভারি হয়েছে। একই সময়ে মেজর সার্জারি হয়েছে ১১টি। রোগীদের অভিযোগ, তাদের নিত্যদিনের সঙ্গী হিসেবে রয়েছে হাসপাতালে ওষুধ না পাওয়া এবং দালালের দৌরাত্ম্য। প্রতিনিয়তই তারা বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন হাসপাতালের অটোস্ট্যান্ডের জন্য। বাউন্ডারি উঁচু না থাকার কারণে বিকালের পর থেকে বাড়তে থাকে বখাটেদের উৎপাত। ত্রুটিপূর্ণ সেপটিক ট্যাঙ্কের অবস্থা এতটাই খারাপ যে, কয়েক দিন পরপরই ময়লা 

বের করতে হয়। এ সময় দুর্গন্ধে হাসপাতাল এলাকায় চলাফেরা করা দায় হয়ে যায়। সেবাপ্রত্যাশীরা জানান, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ইমার্জেন্সি বিভাগে রোগী আসার সঙ্গে সঙ্গে সামান্য চিকিৎসাসেবা দেওয়ার পরই ময়মনসিংহ মেডিকেলে কলেজে রেফার করা হয়। রোগীদের প্রায়ই ঝামেলায় পড়তে হয়ে ময়মনসিংহে গিয়ে। সবচেয়ে বেশি ঝামেলায় পড়তে হয় দালালদের কারণে।

এ ছাড়া দুপুর ২টার পর ল্যাব বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সেবা নিতে আসা বেশিরভাগ রোগীকেই উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসাররা বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানোর জন্য বাইরের বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাঠিয়ে দেন। হাসপাতালের এতসব সমস্যার সঙ্গে প্রতিনিয়ত যুক্ত হয় নতুন নতুন আরও অভিযোগ। তারপরও সাধারণ মানুষের চাহিদা পূরণের আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন প্রতিষ্ঠান প্রধান। হাসপাতালের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.লোপা চৌধুরী বলেন, রোগীদের বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে আমরা সজাগ রয়েছি। শত সীমাবদ্ধতার মধ্যেও আমরা সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি। রোগীর অবস্থা ক্রিটিক্যাল হলেই কেবল ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে প্রেরণ করা হয়ে থাকে। তবে এ ক্ষেত্রে আরও আন্তরিক হওয়ার জন্য চিকিৎসকদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া দুপুর ২টার পর আসা সাধারণ রোগীদের বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে তিনি বলেন, জনবল কম থাকায় এ সময় ল্যাব খোলা রাখা সম্ভব হয় না। 

 

একুশে সংবাদ/বিএইচ

সারাবাংলা বিভাগের আরো খবর