সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

হারিয়ে যাওয়া সুফিয়াকে ৩২ বছর পর খুঁজে পেল পরিবার

একুশে সংবাদ প্রকাশিত: ০৬:২৭ পিএম, ২৪ জানুয়ারি, ২০২৩

ছয় বছর বয়সে হারিয়ে যাওয়া বোন সুফিয়া বেগমকে প্রায় ৩২ বছর পর খুঁজে পেয়েছে তার পরিবার। সোমবার (২৩ জানুয়ারি) ঢাকায় পাওয়া যায় তাকে। সুফিয়ার বাড়ি শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলার আলাওলপুর ইউপির ৭ নম্বর ওয়ার্ডের চর জালালপুর বাস্তুফায়ার বাজার গ্রামে। তার বাবার নাম হামিদ ব্যাপারী ও মায়ের নাম আঞ্জুমারা বেগম। ৬ বছর বয়সে ঢাকা একটি বাসা থেকে হারিয়ে যান সুফিয়া। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাকে পায়নি পরিবার।

 

সুফিয়া বেগম বলেন, আমরা চার বোন এক ভাই। আমার যখন পাঁচ বছর বয়স তখন মা মারা যান। মা মারা যাওয়ার পরপরই আমাদের বাড়ি নদীতে ভেঙে যায়। তখন আমরা ছোট তিন বোন আমাদের বড় বোনের শ্বশুর বাড়ি চলে যাই। এক বছর পর সেখান থেকে চাচা সমিদ ব্যাপারী ঢাকাতে একটি বাসায় কাজে লাগিয়ে দেন। ঢাকা যাওয়ার সময় যতটা মনে পড়ে আমরা লঞ্চে গিয়েছি। কিছুদিন পর চাচা জানান আমার বাবাও মারা গেছেন। যেই বাসায় কাজ করতাম তারা আমাকে বাড়িতে যেতে দেয়নি। তখন চাচাকে বলি এখানে কাজ করবো না। কিছুদিন পর চাচা আমাকে বাড়িতে নিয়ে যায়। কয়েকদিন পর গ্রামের মেম্বারের মেয়ে পারুল আক্তার তার বাসা ঢাকা মোহাম্মদপুরে, পারুল তার বাসায় আমাকে কাজের জন্য নিয়ে যায়। পারুলসহ তার পরিবার আমাকে খুব নির্যাতন করতেন। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে ওই বাসা থেকে পালিয়ে মোহাম্মদপুর কবরস্থানে ভিক্ষা করতো এমন এক নারীর সঙ্গে চলে যাই। ওই নারী আমাকে একটি বাসায় কাজ দেয়। আর সেখানেই বড় হই। সেখান থেকে আর ফিরতে পারিনি। খোঁজ করতে থাকি পরিবারের। এগুলো এরশাদের আমলের কথা।

 

তিনি বলেন, আমার যতটা মনে পরে আমাদের এলাকার বাস্তুফায়ার বাজারে যেতে নৌকায় পার হতে হয়। আমাদের বাড়ির উঠান থেকে নদীতে লঞ্চ চলে তা দেখা যেতো। আমার বাবা চাই দিয়ে মাছ ধরতো। বাবা মারা যাওয়ার আগে তার একটি অপারেশন করা হয়েছিল।

 

তিনি আরো জানান, একসময় ঢাকার বাসিন্দা আমিনুরের সঙ্গে বিয়ে হয় তার। সংসার জীবনে তাদের এক ছেলে ও দুই মেয়ে। মুঠোফোনে আরজে কিবরিয়ার ‘আপন ঠিকানা’ অনুষ্ঠানে মানুষের হারিয়ে যাওয়ার গল্প শোনেন তিনি। তখন সেই অনুষ্ঠানে যাওয়ার আগ্রহ দেখিয়ে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এরপর একদিন ডাক পেয়ে নিজের জীবনের গল্প শোনান। দীর্ঘদিন পর ভাই-বোন ও পরিবারের সদস্যদের কাছে পেয়ে সুফিয়া কান্নায় ভেঙে পড়েন।

 

তিনি বলেন, পরিবারের কাছে এতো দিন পর ফিরে আসার আনন্দ বলে বোঝানো যাবে না।

 

সুফিয়াকে এক পলক দেখতে সোমবার ঢাকা আরজে কিবরিয়ার অফিসে ছুটে যান ভাই ইব্রাহিম ব্যাপারী, বোন হাসনু বেগম, ভাগনি সাদিয়া আক্তার, ভাগিনা ইসমাইল, ইউসুফ, চাচাতো ভাই শাহ জালালসহ পরিবারের লোকজন। বোনের জন্মদাগ এবং ঘটনার বর্ণনা শুনে ভাই-বোন নিশ্চিত হন, সুফিয়া তাদেরই।

 

সুফিয়ার বড় ভাই ইব্রাহিম ব্যাপারী বলেন, সুফিয়া হারিয়ে যাওয়ার পর আমরা অনেক খুঁজেছি। তবে বোনকে পাননি। এভাবে কেটে গেল ৩২ বছর। বোনকে খুঁজে পেয়েছি। দীর্ঘ বছরপর বোনকে ফিরে পেয়ে তারা সবাই আনন্দিত। সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।

 

একুশে সংবাদ/আ.হো.প্রতি/এসএপি

সারাবাংলা বিভাগের আরো খবর