সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

ফরিদপুরে নাব্যতা সংকটে সিএন্ডবি নৌ-বন্দর 

একুশে সংবাদ প্রকাশিত: ০৫:৫৫ পিএম, ২৪ জানুয়ারি, ২০২১

পদ্মা নদীর পানি দ্রæতহারে কমতে থাকার কারনে নাব্যতা সংকট এবং নদীর মাঝে জেগে ওঠা ছোট-বড় অসংখ্য ডুবোচরের কারনে ফরিদপুরের সিএন্ডবি ঘাট নৌ-বন্দরে ভীড়তে পারছেনা পণ্যবাহী জাহাজ, কার্গো ও ট্রলার। ফলে অচল হতে বসেছে জেলার একমাত্র নৌ-বন্দর হিসাবে পরিচিত সিএন্ডবি ঘাট।

গত একমাস ধরে পানি কমার কারনে নৌ-বন্দরে আসতে বেগ পেতে হচ্ছে পণ্যবাহী নৌযান গুলো। ডুবোচর সৃষ্টি হওয়ায় বড় আকারের কোন জাহাজ ও কার্গো ভীড়তে পারছেনা ঘাটে। 

সিএন্ডবি ঘাট থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার দুরে চরভদ্রাসন উপজেলার এমপি ডাঙ্গী, জাকেরের সূরা এলাকায় জাহাজ গুলো থামতে বাধ্য হচ্ছে। আর এসব জাহাজের পণ্যগুলো সেখান থেকে ছোট কার্গো ও ট্রলারে করে সিএন্ডবি ঘাট নৌ-বন্দরে আনা হচ্ছে। যার কারনে মালামাল লোড-আনলোডে খরচ পড়ছে বেশী। ফলে পণ্যবাহী নৌযানের মালিকগণ ও পণ্য আমদানীকারকেরা চরম বিপাকে পড়েছেন। তাছাড়া নৌ-বন্দর এলাকার প্রায় ৮ হাজার শ্রমিক বেকার হতে বসেছে। এছাড়া দিনের পর দিন অরক্ষিত স্থানে জাহাজ, কার্গো গুলো থাকায় পড়তে হচ্ছে ডাকাতের কবলে। 

সরেজমিনে দেখা গেছে, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ফরিদপুরের সিএন্ডবি ঘাট নৌ বন্দরে ভেরার জন্য পণ্যবাহী এসব নৌযান অপেক্ষা করছে। কিন্তু পদ্মা নদীতে পর্যাপ্ত নাব্যতা না থাকায় নৌযান গুলো বন্দরে ভিড়তে পারছে না। বন্দর হতে ৪ কিলোমিটার দুরে আটকা পড়ে আছে পণ্যবাহী নৌযান গুলো। দেশের বিভিন্ন বন্দর হতে নৌ পথে বোরো মৌসুমের সার, গম, সিমেন্ট, কয়লা, বালু সহ নানান পণ্য নিয়ে এসব নৌযান ফরিদপুর বন্দরের অদুরে গদাধরডাঙ্গিসহ চরভদ্রাসনের হাজিগঞ্জ, এমপি ডাঙ্গী ও জাকেরের সুরা এলাকায় পণ্যসমেত অবস্থান করতে বাধ্য হচ্ছে। 

নারায়নগঞ্জ থেকে সিমেন্ট নিয়ে ঘাটে এসেছেন শেখ ফরিদ-৩ নামের কার্গোর চালক মো. আলাউদ্দিন শেখ। তিনি জানান, বন্দর পর্যন্ত পৌছতে হলে যে পরিমাণ পানি থাকা প্রয়োজন সেই পানি এখন নেই বলে ডুবো চরে বেশ কয়েকবার আটকা পড়েছি। ফলে তেল খরচ বেশী লেগেছে। যেভাবে পানি কমছে তাতে ফেরত যেতে পারবো কিনা জানিনা। আরেক নৌযানের চালক শাহজাহান জানান, অন্তত পক্ষে ১০ হাত গভীর পানি থাকা প্রয়োজন ছিলো কিন্তু সেখানে কোথাও বা দুই-তিন হাত পানি রয়েছে। এভাবে অরক্ষিত স্থানে পন্যসহ কার্গো ভেড়ানোর ফলে তারা স্টাফসহ নিরাপত্তাহীনতায়ও রয়েছেন। এখন পণ্য খালাসে নানারকম হয়রানী ছাড়াও পরিবহন খরচ বেড়ে যাবে বলে জানান তিনি। 

বন্দরের নৌযান শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. হেলালউদ্দিন বলেন, দক্ষিণবঙ্গ সহ বৃহত্তর ফরিদপুরের ব্যবসায়িক পণ্য আনা নেয়ার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এ নৌ বন্দর। বছরের ৫ মাসের মতো সময় এখানে পানি কম থাকে বিধায় বন্দরে পণ্য খালাসে জটিলতা সৃষ্টি হয়। সম্প্রতি গত একমাস যাবত পদ্মার বুকে যেই অসংখ্য ডুবোচরের সৃষ্টি হয়েছে সেজন্য বন্দরমুখি পণ্যবাহী বেশকিছু জাহাজ আটকা পড়েছে। 

নৌ-বন্দর যে ইউনিয়নের অবস্থিত সেই ডিক্রিরচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান বলেন, নাব্যতা না থাকায় বন্দরটি অচল হতে বসেছে। বন্দরটিকে ঘিরে হাজার হাজার শ্রমিক-ব্যবসায়ির কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছিল। বন্দরটি অচল হলে শ্রমিকেরা কাজ হারাবে, ফলে চুরি-ছিনতাই বৃদ্ধি পাবে। তিনি বলেন, স্থানীয় ভাবে দ্রæতই ড্রেজার দিয়ে বালু কাটা হলে ঘাটটি সচল থাকবে।

বিআইডাবিøউটিএ’র (আরিচা ঘাট) উপ পরিচালক মাসুদ পারভেজ বলেন, নাব্যতা সংকট প্রকট আকার ধারন করার বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। আমরা ড্রেজার দিয়ে বালু কাটার কাজ শুরু করবো। যদিও আমাদের একটু সময় লাগতে পারে। স্থানীয়ভাবে ড্রেজার দিয়ে বালু কেটে ক্যানেল তৈরীর বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসকের সাথে কথা বলে সমাধানের চেষ্টা করছি।


একুশে সংবাদ/ কাজল/অমৃ

সারাবাংলা বিভাগের আরো খবর