সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

দুই উপজেলার লাখো মানুষের দুর্ভোগ 

একুশে সংবাদ প্রকাশিত: ১১:০৮ এএম, ২০ জানুয়ারি, ২০২১

নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার আড়িয়াল খাঁ নদে সেতু না থাকায় দুই উপজেলার লাখো মানুষের দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। মাত্র একটি সেতুর অভাবে বাঁশের সাঁকোতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দুই উপজেলার মানুষ পারাপার হচ্ছেন। 

নদের পূর্ব প্রান্তে রায়পুরা উপজেলার ২৪ ইউনিয়নের আদিয়াবাদ ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী রাধাগঞ্জ বাজার সংযোগ ও পশ্চিম প্রান্তে একই ইউনিয়নের সিরাজনগর উম্মুল কুরা ফাযিল (ডিগ্রী) মাদ্রাসা ও সিরাজ নগর বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয়সহ শিবপুর উপজেলা।

প্রতিদিন রায়পুরা উপজেলা ও শিবপুর উপজেলার প্রায় ২০ টি গ্রামের মানুষের চলাচল এ বাঁশের সাঁকোতে। শত বছরের স্বপ্ন এই সেতু দিয়ে রাধাগঞ্জ বাজারসহ দুই পাড়ের মানুষের সংযোগ সেতুটি মানুষের জীবন যাত্রাকে ব্যাহত করেছে। সেতুটি না থাকায় স্কুল কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা নদ পারাপারে জীবনের ঝুকি নিয়ে যাতায়াত করছে।

এলাকায় বিষমুক্ত সবজি চাষ হওয়ায় বিভিন্ন হাট-বাজারসহ দেশের জেলা শহরে এই নদে পারাপার এর মাধ্যমে গ্রামের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী, নারী-পুরষ ও শিশুসহ সব বয়সের মানুষের চলাচলের একমাত্র ভরসা আড়িয়াল খাঁর বুকে নির্মিত প্রায় ৪শ ফুট দৈর্ঘ্য একটি নড়বড়ে বাঁশের শাকো দিয়ে ঝুকি নিয়ে নদ পাড়াপার করছেন।

আড়িয়াল খাঁ নদীর দুই পাড়ের হাজার হাজার মানুষের নিত্যদিনের দুর্ভোগ আর দুর্দশার কথা। শত বছরের ঐতিহ্যবাহী রাধাগঞ্জ বাজারটি নদীর ঐ পাড়ের মানুষের নিকটবর্তী হওয়ায় গ্রামগুলোর মানুষের সেতুবন্ধন হিসেবে যাতায়াতের অন্যতম অবলম্বন ওই বাঁশের সাঁকো।

প্রতিনিয়তই ঐসব গ্রামের কৃষক, ব্যবসায়ীগন মালামাল মাথায় নিয়ে এই ঝুকিপূর্ণ সাঁকো দিয়ে চলাচল করতে দেখা যায়। বাঁশের সাঁকোর নিচ দিয়ে খেয়া পারাপারের জন্য বর্ষাকালে নৌকায় এবং পানি হ্রাস পেলে বাঁশের সাঁকোটি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। একটি সেতুর অভাবে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসাগামী ছাত্র-ছাত্রীসহ নদীর দুই পাড়ের গ্রামগুলোর হাজার হাজার বাসিন্দা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঐ বাঁশের সাঁকোটির ওপর দিয়েই প্রতিদিন চলাচল করছে।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে ব্রিজ নির্মাণ করার জন্য এলাকাবাসী  দাবি করে আসছে। আড়িয়াল খাঁ নদের ওপর সেতু না থাকায় রায়পুরার আদিয়াবাদ এবং পাশের শিবপুরের যোশর ও বাঘাব ইউনিয়নের নয়াচর, সৈকারচর, যোশর, মাখাল্লা, কামালপুর, জানখারটেক, লেটাব, দক্ষিণ কামালপুর, কাজিয়ারা, শ্রীরামপুরসহ ২০ গ্রামের লাখো মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

শুকনো মৌসুমে তাদের বাঁশের সাঁকো পেরিয়ে রাধাগঞ্জ বাজারসহ অন্য স্থানে যাতায়াত করতে হয়। বর্ষায় নদে পানি বেড়ে গেলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার করতে হয় ছোট নৌকায়। দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয়রা এ নদের ওপর একটি সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসলে জনপ্রতিনিধিরা কোনও উদ্যোগ নেননি। সম্প্রতি সাবেক মন্ত্রী স্থানীয় সংসদ সদস্য রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু সেতু নির্মাণের আশ্বাস দিলেও তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। 

আদিয়াবাদ ইউপি চেয়ারম্যান প্রার্থী ইফতেখার হোসেন রাসেল বলেন, আড়িয়াল খা নদের উপর একটি ব্রিজ নির্মাণ করার জন্য এলাকাবাসীর দির্ঘদিনের দাবি করে আসছে তা বাস্তবায়ন না হওয়ায় মানুষ এখন হতাশ। উন্নয়নের জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই ব্রিজটি যেন দ্রত নির্মাণ করার ব্যবস্থা করেন এটাই এলাকাবাসীর দাবি।

এ ব্রিজ নিয়ে টিভি, পত্রিকা ও বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রতিবেদনসহ বক্তব্য বিবৃতি দেয়ার পরেও কোন কাজ হচ্ছে না। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে ব্রিজটি নির্মাণের দাবি করে আসছে। এমনকি একই ইউনিয়নে নদীর উপর আরো দুটি ব্রিজ জনগুরত্ব কম। কিন্তু জনগুরত্ব এই সেতুটি না থাকায় প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে।

নয়াচর গ্রামের বাসিন্দা শিক্ষাবিদ অছিউদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘সাঁকো ও ছোট নৌকায় শিশুদেরও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে হয়। এতে আমাদের দুর্ভোগের শেষ নাই। স্থানীয় সংসদ সদস্য সেতুটি হবে বলে এলাকাবাসীকে আশ্বাস দিয়েছেন। এখনো কোন বাস্তবায়ন হচ্ছে না।

নয়াচর উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বর্ষকালে নৌকায় পারপার হতে গিয়ে ক্লাসে পৌঁছাতে দেরি হয়ে যায়। বাঁশের সাঁকোটাও প্রায়ই ভেঙে পড়ে। অনেক সময় মানুষ পড়ে গিয়ে আহত হয় এবং মারা যায়।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর নরসিংদীর নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ আবু মো. জাকির সেকান্দার বলেন, বি ক্যাটাগরির নদীতে ডিজাইন করতে একটু সময় নিবে। এখানে (আড়িয়াল খাঁ নদে) একটি সেতু নির্মাণের প্রস্তাবনা প্রক্রিয়াধীন আছে। এরই মধ্যে প্রয়োজনীয় সার্ভে করা হয়েছে, এখন ডিজাইন পাওয়ার পর দরপত্র আহ্বান করা হবে। আশা করছি, সেতুটি নির্মাণ হলে এলাকাবাসীর দুর্ভোগ লাগব হবে।

একুশে সংবাদ/সাইরু/এস

 

সারাবাংলা বিভাগের আরো খবর