সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

সংস্কারের অভাবে মন্দিরটি এখন ধ্বংসের পথে

প্রকাশিত: ০৫:০২ পিএম, ১৯ অক্টোবর, ২০২০

প্রায় সাত শ’ বছর আগে গাজীপুরের কাপাসিয়া-শ্রীপুর ইউনিয়ন পরিষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান প্রসন্ন কুমার বসু হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পূজা-অর্চনার জন্য প্রায় সাড়ে তিন একর জমির উপর শ্রীপুরের তেলিহাটি ইউনিয়নের বেকাসহারা গ্রামে দৃষ্টিনন্দন একটি মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। মন্দিরের পাশেই রয়েছে ঘাট বাঁধানো পুকুর। মন্দিরটির গাঁ জুড়ে রয়েছে সিরামিকের দৃষ্টিনন্দন কারুকার্য।

কিন্তু অযত্ন, অবহেলা ও সংস্কারের অভাবে কালের সাক্ষী এ মন্দিরটি এখন ধ্বংসের পথে। যেকোন মুহূর্তেই তার অন্তিম সমাপ্তির আশঙ্কা রয়েছে। তাই হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের দাবি-অচিরেই পুনঃসংস্কার করে তাদের পূজা-অর্চনার জন্য মন্দিরটি উপযোগী করার ব্যবস্থা করে দেয়া হোক।

কিন্তু দীর্ঘদিন পার হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত ওই মন্দিরটি সংস্কারের কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। যার কারনে এবছরও ওই মন্দিরে পূজা উদযাপন করতে পারছেন না হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। তাই হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের দাবি-অচিরেই পুনঃসংস্কার করে তাদের পূজা-অর্চনার জন্য মন্দিরটি উপযোগী করার ব্যবস্থা করে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।

প্রসন্ন কুমার বসুর উত্তরসূরী মন্দিরের সেবায়েত নিহার চন্দ্র বসু বলেন, আমার বয়স যখন ছোট তখন দেখতাম, উপজেলার পাঁচটি গ্রামের হিন্দু ধর্মের অনুসারীদের ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের একমাত্র ভরসা ছিল এই শ্রী শ্রী কৃষ্ণ চন্দ্র জিউর মন্দির। বিভিন্ন পূজার সময় উপজেলার বিভিন্ন প্রান্তের হিন্দু ধর্মের অনুসারীরা আসায় এখানে প্রাণের জোয়ার তৈরি হতো। পূণ্যার্থীদের আগমনে মুখরিত হয়ে থাকত চারপাশ। কিন্তু এখন আর সে পরিবেশ নেই। প্রায় বিশ-পঁচিশ বছর আগ থেকেই মন্দিরটি সংস্কারের অভাবে পরিত্যক্ত। বর্তমানে মন্দিরের বিভিন্ন অংশ ধসে পড়ার উপক্রম হয়েছে। প্রাণনাশের ভয়ে এখন আমরা ওই ভবনের পাশে একটি টিনের ছাপড়া নির্মাণ করে পূজা-অর্চনার কাজ চালাচ্ছি।

তিনি জানান, ১৩৩৬ সালে মন্দিরটি প্রতিষ্ঠার পর ২১৭ নাম্বারের একটি দলিলের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠাতা প্রসন্ন কুমার বসু শ্রীপুরের বিভিন্ন মৌজা থেকে প্রায় শতাধিক বিঘা জমি ও ঢাকার একটি বাড়ি মন্দিরের নামে রেজিস্ট্রি করে দেন। কিন্তু কালের পরিক্রমায় এর অধিকাংশ ভূমি বেদখল হয়ে গেছে। বিভিন্ন ভূমিদস্যুরা জাল কাগজপত্র তৈরি করে ভূমির মালিকানা দাবি করছে। এছাড়া প্রসন্ন কুমার বসুর কয়েকজন উত্তরসূরি মন্দিরের ভূমি দাবি করে আদালতে মামলা করেছেন। নানা জটিলতায় মন্দিরের শতাধিক বিঘা ভূমি বেহাত হয়ে গেছে।

মন্দিরের পুরোহিত নারায়ণ চন্দ্র ব্যানার্জি জানান, মন্দিরের ভেতর থেকে প্রায় সময়ই পলেস্থরা খসে শরীরে পড়ত, মন্দিরটি ভেঙে পড়ার আশঙ্কায় আমরা পাশেই একটি ছাপড়া ঘর নির্মাণ করে পূজা-অর্চনা করছি। কিন্তু তাতে নিরাপত্তাজনিত সমস্যায় ভুগছি। আমাদের ধর্মীয় অনুসারীদের ধর্মীয় কাজ চালানোর জন্য মন্দিরটি পুনঃসংস্কারের জন্য সরকারের নিকট দাবি জানাচ্ছি।

পূজা উদ্যাপন কমিটির সভাপতি চিত্তরঞ্জন কর বলেন, আমরা বিভিন্ন সময়ে এ মন্দিরটি সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছিলাম। কিন্তু অবস্থা এতই জরাজীর্ণ যে, সংস্কার করলেও কোন কাজ হবে না, এটা পুনঃনির্মাণ করতে হবে। তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।

শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাসলিমা মোস্তারি বলেন, এ বিষয়ে মন্দির কর্তৃপক্ষ আমাকে জানায়নি। মন্দির কর্তৃপক্ষ আমাকে জানালে বিষয়টি সরেজমিনে গিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিব। এবং মন্দির সংস্কারের জন্য একটি আবেদন দিতে হবে। তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে বিষয়টি বিবেচনার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠানো হবে।

একুশে সংবাদ/এআরএম

সারাবাংলা বিভাগের আরো খবর