সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

মানুষ হওয়ার শিক্ষা চাই

প্রকাশিত: ০৫:০৪ এএম, আগস্ট ৩০, ২০১৪
একুশে সংবাদ : শিক্ষা মানুষের মৌলিক চাহিদার একটি। পৃথিবীর সঙ্গে তাল মিলিয়ে উন্নয়নশীল বাংলাদেশেও প্রতিনিয়ত বাড়ছে শিক্ষিতের হার, বাড়ছে পাসের হার। উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত এমনকি নিম্নবিত্ত শ্রেণীর মানুষও নিজের সন্তানকে শিক্ষিত করে তুলতে চালিয়ে যাচ্ছেন নিরন্তর প্রচেষ্টা। মোমবাতির আলোতে পড়াশোনা করেও দরিদ্র কোনো শিক্ষার্থীর জিপিএ-৫ অর্জন কিংবা দুপুর-বিকালে কারখানায় কাজ করে হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমের মধ্য দিয়েও কারও গোল্ডেন ৫ পাওয়ার সংবাদ পড়ে গভীর আনন্দে আমাদের চোখে পানি চলে আসে। এ তো গেল দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসরত শিক্ষার্থীদের সাফল্যের কাহিনী। কোনোরকম টিউটরের সাহায্য ছাড়াই স্কুলের গৎবাঁধা পাঠদান আর নিজের আপ্রাণ প্রচেষ্টাই বিজয়মালা পাওয়া সম্ভব হয়েছে। অপরদিকে উচ্চবিত্ত আর মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানদের নিয়ে অভিভাবকদের যুদ্ধের গল্পও কম নয়। সারা দিন স্কুল, সারা বিকাল প্রাইভেট-কোচিং, সারা সন্ধ্যা টিউটর, মাঝরাত যাবৎ সব পড়া তৈরি করতে করতে হিমশিম খাচ্ছে ছাত্রছাত্রীরা। আর তাদের মা-বাবাও অকস্নান্ত পরিশ্রমের মানচিত্র এঁকে যাচ্ছেন। অভিভাবক এবং সন্তানের যৌথ প্রচেষ্টায় বছর শেষে স্কুলের রিপোর্ট কার্ডে উঠে সর্বোচ্চ নম্বর। সফলতার এ খবর আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী, সহকর্মীসহ পরিচিতজনের মাঝে ঘুরপাক খায় চমচম-রসগোল্লার খোলা প্যাকেটে। বর্তমানে বাংলাদেশে চারটি বোর্ড পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের উত্তীর্ণ হতে হয়। পূর্বপদ্ধতির দ্বিগুণ এ পরীক্ষার ধারা কালক্রমে যেন বোঝা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। কেননা মা-বাবার আহ্লাদ পূর্ণ করতে রাত-দিন প্রচেষ্টায় মগ্ন সন্তানরা। তবুও যেন অভিভাবকরা অতৃপ্তই থেকে যান। সন্তানদের প্রতিটি আনন্দ-উচ্ছ্বাসের গন্ডি থেকে দূরে রেখে তাদের বানিয়ে রাখেন একঘরে কুনোব্যাঙের মতো। সন্তানদের লেখা গল্প-ছড়া, রঙ বুননে শিল্পকর্ম, বাহারি সামগ্রীতে চারু-কারু এসব গুণমন্ডিত কর্মকা-ই সময়ের অপব্যবহার বলে মনে করেন তারা। বন্ধুর সঙ্গে পাঁচ-দশ মিনিটের বেশি সময় ধরে ফোনে কথা বললে কিংবা বেড়াতে গেলেই অভিভাবকের মনে বাসা বাঁধে সন্দেহ। কেউ কেউ শুরু করেন গোয়েন্দাগিরিও। সন্তানদের ডায়েরি, ড্রয়ার, বেডিংয়ের আদ্যোপান্ত খুঁজে বেড়ান, যদি হাতেনাতে পাকড়াও করা যায় উঠতি বয়সের কিশোর-কিশোরীকে। সন্তানের প্রতি এত বিধিনিষেধের কারণ হলো তারা যেন 'এইম ইন লাইফ' থেকে ছিটকে না পড়ে, ডাক্তার -ইঞ্জিনিয়ার হতে যেন বাধাগ্রস্ত না হয়ে পড়ে। নেপোলিয়ন বলেছিলেন, 'আমাকে একজন শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাদের একটি শিক্ষিত জাতি উপহার দেব।' শিক্ষার অসীম গুরুত্ব এ একটি বাক্যেই ফুটে ওঠে। তবে প্রশ্ন হলো, তা কেমন শিক্ষা ব্যবস্থা? মূলত আমাদের দেশে যে পাঠ্যপুস্তকনির্ভর শিক্ষা পক্রিয়া, তাতে এ শিক্ষার্থীরা নিজেকে ওতপ্রোত প্রস্তুত করতেই হ-য-ব-র-ল অবস্থায় নিমজ্জিত হয়। অথচ পাঠ্যপুস্তক হওয়া উচিত বাস্তবনির্ভর, চারু-কারুতে ভরপুর। শিক্ষার্থীবৃন্দ যেন শুধুই মুখস্থনির্ভর লেখাপড়ার চাকায় পিষ্ট না হয়ে পড়ে। পাশাপাশি তাদের হাতে-কলমে বিভিন্ন বিষয়ে পাঠদানের সুযোগ দিতে হবে। আর তাদের সৃজনশীলতা বাড়াতে হবে, খুলে দিতে হবে চিন্তাশক্তির জানালা। তবেই তারা 'আই ওয়ান্ট টু বি এ ডক্টর' এর পরিবর্তে 'আই ওয়ান্ট টু বি এ লিডার' নামক ভিন্নধর্মী রচনা উপস্থাপন করতে সক্ষম হবে। শুধু গাড়ি-ঘোড়ার স্বপ্নে সন্তানদের নিমজ্জিত না রেখে তাদের কল্পপাখির ডানা সুদূরপ্রসারী করার সুযোগ দিতে হবে। ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ারসহ নানা উচ্চপদস্থ পদবি তাদের মাথার ওপর চাপিয়ে না দিয়ে তাদের পছন্দ অনুযায়ী জীবিকার প্রতি উৎসাহিত করতে হবে। যেমন কেউ হয়তো হাঁস-মুরগি পালনে ইচ্ছুক কিংবা কেউ হয়তো সুরেলা কণ্ঠের অধিকারী। তাই সন্তানকে তার পছন্দ ও দক্ষতা অনুযায়ী গড়ে তোলা উচিত। তবেই সে নিজের পছন্দের মূল্যায়ন করবে এবং প্রাণোচ্ছলভাবে তাতে সম্পৃক্ত থাকবে। নেপালে একটি বিখ্যাত গল্প প্রচলিত রয়েছে। একবার এক নেপালি কৃষককে তার শিক্ষিত ছেলে বিদেশ বিভূঁইয়ে যাওয়ার আকুতি জানায়। কৃষকের প্রশ্ন ছিল বিদেশে গিয়ে সে কী করবে? উত্তরে ছেলে বলে, যেহেতু সে শিক্ষিত সেহেতু সে বিদেশে চাকরি করবে এবং বাড়ি-গাড়িতে আরামে থাকবে। তখন বাবা কঠোর কণ্ঠে গর্জে উঠে বললেন, আমি তোমাকে শিক্ষিত করার একমাত্র কারণই ছিল তুমি যেন তোমার অর্জিত শিক্ষা প্রয়োগের মধ্য দিয়ে উন্নতমানের ফসল উৎপাদন করতে পার। বাংলাদেশের সব অভিভাবকের প্রতি আন্তরিক অনুরোধ থাকবে যে, সন্তানদের মনের সবুজ বৃক্ষ উপড়ে না ফেলে যদি তাদের বন্ধু হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করতে পারেন তাহলেই পরিবার হবে শান্তিময়। সন্তানকে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ব্যাংকার বানানোর অাঁটসাঁট উদ্যোগের চেয়ে তাদের 'মানুষ' বানানোর প্রয়াসই উপহার দেবে একটি সত্যিকারের সুন্দর প্রজন্ম। একুশে সংবাদ ডটকম/আর/৩০-০৮-০১৪:

বিভাগের আরো খবর

You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MySQL server version for the right syntax to use near 'ORDER BY bn_content.ContentID DESC LIMIT 8' at line 1