সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

এম্বুলেন্স এর যাত্রা শুরু যেভাবে ...

প্রকাশিত: ০৮:২৯ এএম, আগস্ট ২৪, ২০১৪
একুশে সংবাদ : অসুস্থ রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য যে বাহনটি সারা বিশ্বব্যাপী প্রচলিত সেটি হচ্ছে এম্বুলেন্স। এটি এমন একটি বাহন যাতে করে মারাত্মক অসুস্থ কোনও রোগীকে খুব দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে আসা যায়। পূর্বে যখন এই বাহনের প্রচলন ছিল না তখন কোনও ব্যক্তি মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়লে সাধারণ যানবাহনে করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে অনেক সময় রোগী মারা যেত। পথে কোথায় দুর্ঘটনা বা পরিবেশ বিপর্যয় জাতীয় কোনও ঘটনা ঘটলে সেখানে মানুষদের উদ্ধারের জন্য সতর্ক সংকেত দিতে দিতে দ্রুত হাজির হয় এম্বুলেন্স। আজকালকের সময়ে এম্বুলেন্সে রোগী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া খুবই সহজ কিন্তু একটা সময় এমনটা ছিল না। এম্বুলেন্স না থাকার কারণে অনেক রোগী হাসপাতালে নেয়ার আগেই মারা যেত। আজকে আমরা যে এম্বুলেন্স দেখে থাকি প্রথম দিকে এম্বুলেন্স এমন ছিল না। কালের বিবর্তনে আজ এম্বুলেন্স এমন আধুনিক হয়েছে। এম্বুলেন্স (Ambulance) শব্দটি ল্যাটিন শব্দ ambulare থেকে এসেছে। যার শাব্দিক অর্থ হাটা বা সামনে আগানো। দ্রুত বাহন হিসেবে এম্বুলেন্স এর যাত্রা শুরু হয় ১৪৮৭ সালে স্পেনে। তবে এম্বুলেন্স এর প্রাথমিক যাত্রা শুরু হয় সেই প্রাচীন আমলে। ইতিহাস অনুযায়ী ৯০০ খ্রিস্টাব্দের দিকে প্রথম এম্বুলেন্স এর যাত্রা শুরু হয়। প্রথম পর্যায়ে এম্বুলেন্স তৈরি করা হয় চট বা দড়ির চাদর দিয়ে বিছানা নির্মাণ করার মাধ্যমে। এরপর এই চাদরকে দুই চাকার ঘোড়ার গাড়ির সাথে সংযুক্ত করে দ্রুত গতির এম্বুলেন্স তৈরির চেষ্টা করা হয়। প্রথম এই এম্বুলেন্স তৈরির কারিগর ছিলেন এঙ্গলো স্যাকসন। ১১ শতাব্দীর ক্রুসেডের সময়ে আহত সৈনিকদের এমন ঘোড়ার তৈরি এম্বুলেন্সে করে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হতো। এম্বুলেন্সকে জরুরী কোনও কাজে লাগানোর প্রথম ইতিহাসটি জানা যায় ১৪৮৭ সালে স্পেনে রানী ইসাবেলা এর সময়ে। এই সময়ে কোনও যুদ্ধে স্পেন বাহিনীর সৈনিকরা আক্রান্ত হলে তাদের যুদ্ধ বিরতির আগ পর্যন্ত হাসপাতালে নেয়া হতো না। যুদ্ধ বিরতির আগ পর্যন্ত আহত সৈনিকদের এম্বুলেন্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হতো। এই সময় এম্বুলেন্সের আকার আকৃতির প্রথম বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হয়। আর পরিবর্তনটি সম্পাদন করেন নেপোলিয়ন বোনাপার্টের চিকিৎসক জেন ল্যারি। তার সময়ে এম্বুলেন্সে দুই চাকার বদলে চার চাকা ব্যবহার শুরু হয়। বোনাপার্টের যুদ্ধের সময় জেন ল্যারি তাদের সাথে থাকতেন, যখন কোনও সৈনিক আহত হতো তখন তাকে মাঠে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হতো এবং পরে একাধিক সৈনিককে এক সাথে চিকিৎসা কেন্দ্রে নেয়া হতো। লন্ডনে কলেরার প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে রোগীদের দ্রুত চিকিৎসা কেন্দ্রে নেয়ার জন্য ১৮৩২ সালে প্রথম সেখানে এম্বুলেন্স এর ব্যবহার শুরু হয়। ১৮৬১ সালে আমেরিকায় যুদ্ধ চলাকালে জোসেফ বার্নেস ও জনাথান লেটারম্যান এম্বুলেন্সের উন্নতির জন্য আরও কিছু নতুন বৈশিষ্ট্য সংযোগ করেন। তারা এম্বুলেন্স এর ভিতরে রোগীদের চিকিৎসা প্রদানের জন্য বিশেষ নতুন কিছু যন্ত্রপাতি সংযুক্ত করেন। তাদের তৈরি কৃত দুই চাকা বা চার চাকার গাড়িতে একসাথে দুই থেকে তিন জন রোগী একসাথে বহন করা যেত। বাণিজ্যিকভাবে হাসপাতাল কেন্দ্রিক এম্বুলেন্স সার্ভিসের যাত্রা শুরু হয় ১৮৬৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ওহেওতে। ১৮৬৭ সালে যুক্তরাজ্যের লন্ডন মেট্রোপলিটন বোর্ড ছয় ঘোড়া বিশিষ্ট এম্বুলেন্স এর প্রচলন করে। এই বাহনে রোগীদের আরামে শোয়ার ব্যবস্থা করা হয় এবং এই বাহন ছিল দ্রুত গতির। নতুন এই ব্যবস্থা দেখাদেখি ১৮৮৯ সালে নিউইয়র্কের বেললোভি হাসপাতালে চার চাকা বিশিষ্ট ঘোড়ার গাড়ির এম্বুলেন্স বানিজ্যিকভাবে যাত্রা শুরু করে । ১৯১০ সালে আয়ারল্যান্ডে রয়্যাল ডাবলিন সোসাইটির পক্ষ থেকে সর্বপ্রথম সাধারণ জনগণের জন্য এম্বুলেন্স সেবার ব্যবস্থা করা হয়। ১৯ শতকের দিকে অটোমোবাইল গাড়ির প্রচলন বৃদ্ধি পেলে চার চাকার গাড়িকে এম্বুলেন্স তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়। রোগীদের আরও দ্রুত চিকিৎসা কেন্দ্রে পৌঁছানোর জন্য ১৮৯৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে শিকাগোর মাইকেল রিসি হাসপাতাল প্রথম অটোমোবাইল এম্বুলেন্স ক্রয় করে। এই এম্বুলেন্সটি ক্রয় করতে হাসপাতালকে আর্থিক অনুদান দিয়েছিল শিকাগোর ৫০০ বিশিষ্ট ব্যবসায়ী। প্রথম দিকের অটোমোবাইল এম্বুলেন্স চলতো বিদ্যুৎ শক্তিতে এবং গাড়ি গুলোর শক্তি ছিল দুই হর্স পাওয়ার। গ্যাসোলিন দ্বারা চালিত প্রথম এম্বুলেন্স এর প্রচলন হয় সর্বপ্রথম কানাডায় ১৯০৫ সালে। ১৯০৯ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কানিনগাম কর্তৃক একটি আধুনিক এম্বুলেন্স সার্ভিস চালু হয়। সে সময় তাদের অটোমোবাইল গাড়িটির গতি ছিল ৩২ হর্স পাওয়ার। মূলত এই সময়ের পর থেকে এম্বুলেন্স সার্ভিসের দ্রুত আধুনিকায়ন ও বিকাশ ঘটতে থাকে। প্রত্যেক দেশে দেশে এম্বুলেন্স এর প্রচার ও প্রচলন বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং একই সাথে বিভিন্ন দেশে এম্বুলেন্স এর উন্নয়ন ঘটতে থাকে। ১৯১৪ সালের ১ম মহাযুদ্ধ ও ১৯৪১ সালের ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় সমগ্র বিশ্ব যুদ্ধে অবতীর্ণ হলে এই সময়গুলোতে এম্বুলেন্স এর চাহিদা আরও বৃদ্ধি পায়। ফলে এই সময়গুলোতে এম্বুলেন্স এর উত্তরোত্তর আরও উন্নয়ন সাধিত হতে থাকে। ১৯২৮ সালে অস্ট্রেলিয়া এম্বুলেন্স সেবায় নতুন যুগের সূচনা করে। ঘোড়ার গাড়ি ও অটোমোবাইল এম্বুলেন্স সার্ভিসের পর রোগীকে আরও দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছানোর জন্য এয়ার এম্বুলেন্স বা বিমান এম্বুলেন্স এর সূচনা করে। এই সার্ভিসের চিন্তা প্রথম মাথায় এসেছিল অস্ট্রেলিয়ার এক মেডিকেল ছাত্র ক্লিফফোর্ড পিল এর মাথায়। বর্তমান আধুনিক সময়ে এসে এম্বুলেন্স সার্ভিসের আরও ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। বর্তমানে সড়ক, নৌ ও আকাশ পথের দ্রুততর এম্বুলেন্স সার্ভিস রয়েছে। সরকারি, বেসরকারি, প্রাতিষ্ঠানিক, ব্যক্তিগত সহ বিভিন্ন ধরনের এম্বুলেন্স সার্ভিস এখন দেখতে পাওয়া যায়। বর্তমানের এম্বুলেন্সগুলোতে সংযুক্ত করা হয়েছে রোগীকে এম্বুলেন্সের ভিতরে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার নানা ধরনের উপকরণ ও যন্ত্রপাতি। এম্বুলেন্সকে বিপদের সময় দ্রুত কাছে পাওয়ার জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা সরকারিভাবে হট লাইনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যুদ্ধ ক্ষেত্রে সৈনিকদের নিরাপদে দ্রুত চিকিৎসা কেন্দ্রে পৌঁছানোর জন্য বর্তমানে প্রত্যেক দেশের সামরিক বাহিনীতে সংযুক্ত করা হয়েছে বুলেট প্রুফ, বোমা প্রুফ ও শক্তিশালী এম্বুলেন্স সার্ভিস। দ্রুত চিকিৎসা কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য বর্তমান সময়ে যে বাহনটি সবচেয়ে বেশী উপকারী সেটি হচ্ছে এম্বুলেন্স। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে এম্বুলেন্স সার্ভিসও বর্তমানে হয়েছে আধুনিক। ফলে সমাজের উচ্চ শ্রেণী থেকে শুরু করে নিম্ন শ্রেণীর সবাই এম্বুলেন্স এর সেবা গ্রহণ করে থাকে। আর তাই এম্বুলেন্স এখন বিপদের বন্ধু। একুশে সংবাদ ডটকম/এফরান/২৪.০৮.০১৪:

বিভাগের আরো খবর

You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MySQL server version for the right syntax to use near 'ORDER BY bn_content.ContentID DESC LIMIT 8' at line 1