সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

পুলিশ সেজে পুলিশেরই জালে প্রতারক !

প্রকাশিত: ০৬:৪৩ এএম, আগস্ট ১৮, ২০১৪
একুশে সংবাদ : বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে রয়েছেন উর্দি পরা তরুণ পুলিশ অফিসার। কী কারণে যেন অপেক্ষা করছেন। কলকাতা পুলিশের চিরপরিচিত সাদা ঝকঝকে উর্দি, কাঁধে দু’টি তারা, বুকে নাম লেখা ব্যাজ দেখে সমীহই হচ্ছিল আশপাশের লোকজনের। হঠাৎই কয়েক জন আগন্তুক চড়াও হয়ে ঘিরে ধরলেন ওই উর্দিধারীকে। তার পর তাঁকে পুলিশের গাড়িতে চাপিয়ে সোজা রওনা দিলেন থানার উদ্দেশে। শনিবার রাতে ঘটনাটি ঘটে দক্ষিণ শহরতলির তিলজলার ৪২ নম্বর বাসস্ট্যান্ডে। তল্লাটের লোকজন অবাক। পুলিশকে আবার কে ধরে নিয়ে গেল? আচমকা কী ঘটে গেল, বুঝে উঠতে পারছিলেন না কেউই। পরে পরিষ্কার হল গোটা বিষয়টা। পুলিশ জানায়, আচমকা চড়াও হওয়া লোকজন আসলে সাদা পোশাকের পুলিশ। আর উর্দি পরা ওই তরুণ মোটেই পুলিশ নন। বাজার থেকে উর্দি কিনে পরে পুলিশ পরিচয়ে প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। শনিবার রাতেই সৈয়দ মহম্মদ আরশি নামে বছর তেইশের ওই তরুণকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার বাড়ি তিলজলারই রাইচরণ ঘোষ লেনে। পুলিশ সূত্রের খবর, শনিবার রাতেই তিলজলা থানায় প্রতারণার অভিযোগ জানিয়েছিলেন আশিস ঘোষ নামে বাগুইআটির এক ব্যবসায়ী। তাঁর অভিযোগ, ব্যবসা সূত্রেই তাঁর সঙ্গে আরশির পরিচয়। নিজেকে কলকাতা পুলিশের প্রশিক্ষণরত সাব-ইনস্পেক্টর বলে পরিচয় দিয়েছিলেন ওই তরুণ। আশিসবাবুর শ্যালককে পুলিশে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নামে ছ’লক্ষ টাকা চেয়েছিলেন আরশি। তার মধ্যে কয়েক হাজার টাকা আরশিকে দেওয়াও হয়েছে বলে অভিযোগ। পুলিশ বলছে, ওই টাকা নিয়েও চাকরি দিতে পারেননি আরশি। উল্টে বাকি টাকা দেওয়ার জন্য আশিসবাবুর উপরে চাপ সৃষ্টি করছিলেন বলে অভিযোগ। পুলিশ সূত্রে খবর, তিলজলা থানায় অভিযোগ দায়ের করার পরেই তদন্তকারীদের পরামর্শ মতো আশিসবাবু নিজের মোবাইল ফোন থেকে আরশিকে ফোন করেন। জানান, তিনি ছ’লক্ষ টাকার বাকিটুকুও দিতে চান। ওই টাকা নিতে পুলিশের পরামর্শ মতো আরশিকে তিলজলার ৪২ নম্বর বাসস্ট্যান্ডে আসতে বলেন আশিসবাবু। এর পরে আশিসবাবুকে ওই বাসস্ট্যান্ডে পাঠিয়ে সাদা পোশাকে চারপাশে ছড়িয়ে পড়েন তদন্তকারীরা। উর্দি পরে আরশি বাসস্ট্যান্ডে আসতেই তাঁকে পাকড়াও করা হয়। পুলিশ সেজে আরশি আর কাউকে প্রতারণা করেছে কি না, তা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। ধৃতকে জেরা করে পুলিশ জেনেছে, লেনিন সরণির একটি দোকান থেকে কলকাতা পুলিশের পোশাক কিনেছিলেন তিনি। পুলিশ সূত্রের খবর, লেনিন সরণি, বিবাদী বাগের কয়েকটি দোকানে পুলিশের উর্দি-টুপি-বেল্ট, এমনকী কাঁধে পদমর্যাদার পরিচায়ক রিবন এবং স্টার-ও বিক্রি হয়। শুধু পুলিশ নয়, ওই দোকানগুলিতে সেনা ও আধা-সেনাদের উর্দি-টুপিও বিক্রি হয়। দোকানগুলি থেকে পুলিশ, সেনা ও আধা সেনারা সকলেই উর্দি-টুপি কেনেন। কিন্তু উপযুক্ত সরকারি কর্মী ছাড়াও যে কোনও লোকই ওই দোকানে গিয়ে উর্দি-টুপি-বেল্ট কিনতে পারেন। প্রশ্ন উঠেছে, সরকারি উর্দি এ ভাবে বিক্রি করা হলে যদি যে কোনও লোক, এমনকী দুষ্কৃতীরাও সেই উর্দি-টুপি কিনতে পারে, তবে এই ধরনের দোকানগুলির উপর নজরদারি চালানো হচ্ছে না কেন? কেনই বা কেবল উপযুক্ত ব্যক্তি ছাড়া অন্য কাউকে পুলিশের পোশাক বিক্রির ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা নেই? পুলিশের একাংশের মতে, পুলিশের উর্দি-টুপি বিক্রি করার ক্ষেত্রে আইনত কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই। তা ছাড়া, এগুলি খোলা বাজারেই তৈরি হয়। ফলে, নির্দিষ্ট দোকান ছাড়াই এগুলি মিলতে পারে। সিনেমা-নাটকের লোকেরাও ওই দোকান থেকে উর্দি কেনেন। তা হলে এ ভাবে পুলিশি উর্দি বিক্রি চলতেই থাকবে? লালবাজারের কর্তাদের একাংশের মতে, উর্দি এ ভাবে বিক্রি হওয়ায় দুষ্কৃতীদের, বিশেষত প্রতারক ও জালিয়াতদের সুবিধা হচ্ছে। এ ব্যাপারে নজরদারি না বাড়ালে বিপদ বাড়ার আশঙ্কা করছেন তাঁরা। যদিও লালবাজারের এক পদস্থ কর্তার মতে, আইনি বাধা না থাকায় ব্যবসায়ীদের উপরে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা সম্ভব নয়। “উর্দি কিনে পুলিশ সেজে কেউ প্রতারণা করছে কি না, তার উপরে শেষমেশ পুলিশকেই নজরদারি চালাতে হবে।”মন্তব্য ওই কর্তার। একুশে সংবাদ ডটকম/আর/১৮-০৮-০১৪:

বিভাগের আরো খবর

You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MySQL server version for the right syntax to use near 'ORDER BY bn_content.ContentID DESC LIMIT 8' at line 1