সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পেলেন দুই কিংবদন্তী বাউল করিম ও কবি দিলওয়ার

প্রকাশিত: ০৬:১২ এএম, আগস্ট ১৩, ২০১৪
একুশে সংবাদ : প্রতিভা আর সৃষ্টিকর্মের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পেলেন সিলেটের দুই কিংবদন্তী বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিম ও গণমানুষের কবি দিলওয়ার। উচ্চ মাধ্যমিকের বাংলা পাঠ্য বইয়ে এবার স্থান পেয়েছে দু্জনের কবিতা। এরমধ্যে শাহ আব্দুল করিমের বিখ্যাত গান- আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম ও কবি দিলওয়ারের ‘রক্তে আমার অনাদি অস্থি ’ কবিতা রয়েছে। শাহ আবদুল করিমের ‘আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম’ পদ্য হিসেবে উচ্চ মাধ্যমিকের পাঠ্যবইয়ে স্থান দেওয়া প্রসঙ্গে বিশিষ্ট কবি ও লেখক শুভেন্দু ইমাম বলেন, এটা খুব ভালো উদ্যোগ। এর মাধ্যমে বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিমের সৃষ্টি কর্মের প্রতি শিক্ষার্থীরা উৎসাহিত হবে। তাঁর অসাধারণ প্রতিভার সাথে ছাত্রছাত্রীদের পরিচিতি ঘটবে। এরকম একটি ভালো উদ্যোগ নেয়ার জন্য তিনি জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক কবি জফির সেতুর মতে, একজন কবির জন্য রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি খুব জরুরি নয়। পাঠকের স্বীকৃতিই তাঁদের কাছে প্রধান হয়ে ওঠে। শাহ আব্দুল করিম ও কবি দিলওয়ার’র সৃষ্টিকর্ম বাংলা সাহিত্যের জন্য অমূল্য সম্পদ। তারপরও উচ্চমাধ্যমিকের পাঠ্যপুস্তককে তাঁদের কবিতা স্থান পাওয়ায় নতুন প্রজন্ম শাহ আব্দুল করিম ও কবি দিলওয়ার সম্পর্কে জানার সুযোগ পাবে। একুশে পদকপ্রাপ্ত বাউলসম্রাট শাহ আব্দুল করিম ও কবি দিলওয়ার’র সৃষ্টিকর্ম পাঠ্যবইয়ে স্থান দেওয়ার জন্য সিলেটসহ সারা দেশে সভা সেমিনারের মাধ্যমে দাবি জানানো হলেও জীবিত অবস্থায় এ স্বীকৃতি দেখে যেতে পারেননি তারা। তারপরও সিলেটের সব মহলের পক্ষ থেকে সরকারকে অভিনন্দন জানানো হয়েছে। বাউল গানের কিংবদন্তী শাহ আবদুল করিম ১৯১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সুনামগঞ্জের দিরাই থানার উজানধল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। দরিদ্রতা ও জীবন সংগ্রামের মাঝে বড় হওয়া বাউল শাহ আবদুল করিমের সঙ্গীত সাধনার শুরু ছেলেবেলা থেকেই। ভাটি অঞ্চলের মানুষের জীবনের সুখ প্রেম-ভালোবাসার পাশাপাশি তার গান কথা বলে সকল অন্যায়, অবিচার, কুসংস্কার আর সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে। তিনি তাঁর গানের অনুপ্রেরণা পেয়েছেন ফকির লালন শাহ, পুঞ্জু শাহ এবং দুদ্দু শাহ এর দর্শন থেকে।   বাউল শাহ আবদুল করিমের এ পর্যন্ত ৬টি গানের বই প্রকাশিত হয়েছে। বইগুলো হলো- আফতাব সংগীত, গণ সংগীত, কালনীর ঢেউ, ভাটির চিঠি, কালনীর কূলে এবং ধলমেলা। বাউল শাহ আব্দুল করিম ২০০১ সালে একুশে পদক লাভ করেন। বাংলা একাডেমি তাঁর দশটি গানের ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশ করে। ২০০৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর তিনি মৃত্যু বরণ করেন। অন্যদিকে বাংলা কবিতার বরপুত্র কবি দিলওয়ার সাহিত্যের প্রায় সকল শাখায় বিচরণ করেছেন। কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ প্রভৃতি ক্ষেত্রে ছিল তাঁর অসাধারণ পাণ্ডিত্য। দেশের সাহিত্যিকদের মধ্যে অন্যতম এ কবি সিলেটে অবস্থান করেও দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণে অবিরত লিখে গেছেন। সিলেট নগরীর পাশ দিয়ে প্রবহমান সুরমার তীরে হেঁটে আর সুরমার বুকে সাঁতার কেটে বেড়ে উঠেছেন কবি দিলওয়ার। সুরমা তাঁর শৈশবের নদী। সুরমা তাঁর খেলার সাথী। খেলার সাথী সুরমার সাথে তিনি পেয়েছেন জন্মস্থান ভার্থখলা গ্রামের অবাধ প্রকৃতি। প্রকৃতিকে তিনি খুব ভালবাসতেন। গণমানুষের কবি দিলওয়ার-এর ‘পদ্মা-মেঘনা সুরমা যমুনা গঙ্গা কর্ণফুলী, তোমাদের বুকের আমি নিরবধি গণমানবের তুলি’ এই শাশ্বত উচ্চারণের মাধ্যমে সিলেটের প্রাণ ইতিহাস-ঐতিহ্যের অন্যতম সাক্ষী লর্ডক্বীন কর্তৃক নির্মিত ক্বীনব্রীজকে নিয়ে লেখা তার কবিতা ‘ক্বীনব্রীজের সূর্যোদয়’ এবং তাঁরই লেখা ‘তুমি রহমতের নদীয়া’ গানটি সারাদেশে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলো। সুরমা নদীর দক্ষিণ পারে ভার্থখলা গ্রামে একটি রক্ষণশীল পরিবারে ১৯৩৭ সালের ১ জানুয়ারি কবি দিলওয়ার জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৭ সালে তিনি দৈনিক সংবাদ-এর সহকারী সম্পাদক হিসাবে যোগদান করেন। সেখানে দু’বছর কাজ করার পর ফিরে আসেন সিলেটে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি চলে যান ঢাকায়। ১৯৭৩-৭৪ সালে দৈনিক গণকন্ঠের সহকারী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৪ সালে তিনি ঢাকাস্থ রুশ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র থেকে প্রকাশিত মাসিক উদয়ন পত্রিকার সিনিয়র অনুবাদক হিসেবে প্রায় দুই মাসের মতো কাজ করেন। কবি দিলওয়ার’র কাব্যগ্রন্থগুলো হলো- ঐকতান, পুবাল হাওয়া ,উদ্ভিন্ন উল্লাস, স্বনিষ্ঠ সনেট, রক্তে আমর অনাদি অস্থি, নির্বাচিত কবিতা। ২০০৮ সালে তাঁকে একুশে পদক প্রদান করা হয়। ২০১৩ সালের ১০ অক্টোবর তিনি মৃত্যুবরণ করেন। একুশে সংবাদ ডটকম/আর/১৩-০৮-০১৪:

বিভাগের আরো খবর

You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MySQL server version for the right syntax to use near 'ORDER BY bn_content.ContentID DESC LIMIT 8' at line 1