সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

পরাশক্তিই মেটাতে পারে ফিলিস্তিনি সমস্যা

প্রকাশিত: ০৬:০২ এএম, জুলাই ২৪, ২০১৪
একুশে সংবাদ : বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিংয়ের প্রতিক্রিয়া নিয়েই আলোচনা শুরু করা যাক। বিশ্বরাজনীতি নিয়ে আমাদের করুণ উপলব্ধি হচ্ছে, আজকের বিশ্বে পীড়িত, নির্যাতিত-দুর্বলের পক্ষে জোরালো প্রতিবাদী সমর্থন নিয়ে এগিয়ে আসবে তেমন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা রাষ্ট্র প্রায় নেই বললেই চলে। ক্বচিৎ এক-আধটি উদাহরণ চোখে পড়ে। ন্যায়ের পক্ষে বলিষ্ঠ প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর হিসেবে যে চমস্কির এত বিশ্বজোড়া সুনাম, তাকেও একটি ক্ষেত্রে নির্বাক থাকতে দেখি। বিশ্ববিবেক এখন ন্যায়ের পক্ষে প্রায় প্রতিবাদহীন, বরং অন্যায়ের পক্ষে নীরব সমর্থন জানিয়ে চলেছে। অথচ বিশ্ববিবেকের পক্ষে দাঁড়িয়ে রঁলা এক সময় বলেছিলেন, 'নীরবতার অর্থ পাপ'। এ কালের সংখ্যাগরিষ্ঠ বুদ্ধিজীবী সেই পাপই করে চলেছেন। এর মধ্যে মাঝে মাঝে ব্যতিক্রমী ঘটনা চোখে পড়ে। যেমন স্টিফেন হকিং ফিলিস্তিনে অর্থাৎ গাজায় লাগাতার ইসরাইলি হামলার প্রতিবাদে জেরুজালেম বিশ্ববিদ্যালয়ের আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেছেন। সেইসঙ্গে প্রত্যাখ্যানের কারণও স্পষ্ট ভাষায় প্রকাশ করেছেন। ধন্যবাদ হকিংকে। একইসঙ্গে অবাক হয়ে ভাবছি, এমন বর্বরতার মুখেও ন্যায়বাদী চমস্কির নীরবতার কারণ কি তার ইহুদি সত্তা? এবং তা এমনই যে, ইসরাইলের অন্যায়কে মেনে নিতে, নীরব সমর্থন জানাতে হবে? যাই হোক, ইসরাইলের বিরুদ্ধে স্টিফেন হকিংয়ের এ বলিষ্ঠ ভূমিকা প্রকৃতপক্ষে উদ্ধত ইসরাইলের গালে নান্দনিক চপেটাঘাতের মতোই ঘটনা। কারণ হকিংয়ের সিদ্ধান্তের পক্ষে সমর্থন জানিয়ে আরও কয়েকজন বিজ্ঞানী ওই জেরুজালেম সম্মেলন বর্জন করেছেন। অরাজনৈতিক চেতনার একজন বিজ্ঞানী যদি অন্যায়ের বিরুদ্ধে এভাবে প্রতিবাদ জানাতে পারেন, সেক্ষেত্রে রাজনৈতিক নেতারা নীরব কেন? গণতন্ত্রী নামে পরিচিত শক্তি, পরাশক্তিদের তো এ ব্যাপারে অর্থাৎ গাজায় লাগাতার ইসরাইলি হামলায় প্রধানত নারী, শিশু ও বৃদ্ধ হত্যার প্রতিবাদে সোচ্চার হতে দেখা যাচ্ছে না? ইসরাইল কি এমনই শক্তিধর যে, ওয়াশিংটন, লন্ডন, মস্কো, বেইজিং ভয়ে স্তব্ধ? জাতিসংঘ নামক একটি সর্বজাতিক সংগঠনের বিবেকে ঘা পড়ছে না ইসরাইলি গণহত্যায়? কী করছেন নিরাপত্তা পরিষদের কর্তাব্যক্তিরা? কিছুই না। তারা শুধু চেয়ে চেয়ে দেখছেন কতদিনে গাজা আরব-জনতাশূন্য হয়। তার চেয়ে বড় কথা তেলসমৃদ্ধ আরব রাষ্ট্রগুলো তথা আরব লিগ দায়সারা গোছের প্রতিবাদ জানিয়েই ক্ষান্ত। অথচ তাদের চোখের সামনে 'গাজা জ্বলছে, ঝরছে প্রাণ'। এ সম্পর্কে ছোট্ট একটি পরিসংখ্যান লক্ষ করার মতো। গাজায় ইসরাইলের সাম্প্রতিক হামলায় '১৭৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত' (এদের মধ্যে ১৩০ জনই বেসামরিক)। অথচ ইসরাইলের দাবি, তারা শুধু হামাসের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে হামলা চালাচ্ছে, সাধারণ নাগরিক হত্যা তাদের উদ্দেশ্য নয়। ওই একই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ হামলায় আহত ১ হাজার ২৬০ জন, বাস্তুচ্যুত আরবের সংখ্যাও ৫ হাজার ৬০০ এবং মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির সংখ্যা ৯৪০টি। এ পরিসংখ্যান থেকেই ছোটখাটো বসতি গাজার হালহকিকত বুঝতে পারা যাবে। আরও একটি খবর রয়েছে এখানে। প্রাণের ভয়ে ১৭ হাজার মানুষ জাতিসংঘের উদ্বাস্তু শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে। অর্থাৎ ফিলিস্তিনি বাড়িগুলো সব ফাঁকা পড়ে আছে। আমরা অবাক হব না যদি ইসরাইলি সন্ত্রাসীরা ওইসব বাড়ি দখল করে নেয়। একটি দৈনিকের প্রতিবেদনে প্রকাশ, গাজা উপত্যকায় একতরফা ইসরাইলি নৃশংসতার বিরুদ্ধে নিন্দার ঝড় উঠেছে আন্তর্জাতিক মহলে। আমরা তেমন ঝড়ের আলামত দেখছি না। অবশ্য হামলা বন্ধের জন্য ইসরাইলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। কিন্তু ইসরাইল সব আহ্বান উপেক্ষা করে অভিযান অব্যাহত রেখেছে। স্বভাবতই প্রশ্ন_ ছোট্ট ইসরাইল রাষ্ট্র কি এতই শক্তিমান যে, বাঘা বাঘা পরাশক্তির আহ্বান সে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেয়? বিশেষ করে ওয়াশিংটনের? না, আসলে ওয়াশিংটন কিছুই বলছে না, অর্থাৎ জোর দিয়ে এমন কিছু বলছে না, এমন সঙ্কেত দিচ্ছে না, যে বার্তা ইসরাইল সমীহ না করে পারবে না। নখদন্তহীন জাতিসংঘ যেমন নামকাওয়াস্তে অভিযান বন্ধের আহ্বান জানাচ্ছে, একইরকম ভূমিকা পেট্রো-ডলার শক্তির আরব রাষ্ট্রগুলোরও। অথচ তাদের সংঘবদ্ধ হুমকি ইঙ্গ-মার্কিন পরাশক্তিকে ফিলিস্তিন সম্পর্কে দ্বিতীয় চিন্তায় বাধ্য করত। কিন্তু না, বাস্তবে তেমন কিছুই ঘটছে না। ইঙ্গ-মার্কিন তাঁবেদার রাষ্ট্র সৌদি আরব, কুয়েত কেন নিজ স্বার্থ, মুরুবি্ব স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে ভ্রাতৃপ্রতিম ফিলিস্তিনি আরবদের পাশে দাঁড়াতে যাবে? এরা কোনোদিন তেমন ভূমিকা নেয়নি, নেয়ার কথাও নয়। আমরা বরং ভাবছি, শান্তির জন্য নোবেল পুরস্কার আস্তিনে পুরেও প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা শান্তির জন্য গাজায় লাগাতার রক্তঝরা বন্ধ করতে সামান্য উদ্যোগ নিতে পারছেন না কেন? সে কি ইসরাইলি 'লবি'র ভয়ে? তার তো তৃতীয়বার প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তাহলে কিসের ভয়, কেন ভয়? শেষ মেয়াদের শেষ পর্বে শান্তির জন্য প্রদত্ত মেডেলটির মর্যাদা রক্ষার জন্য কিছু করলে অন্তত বিবেকের কাছে জবাবদিহি করতে হতো না। অবশ্য বিবেক যদি রাজনীতির কাছে বিকিয়ে গিয়ে থাকে, তাহলে আলাদা কথা। ফিলিস্তিনিদের এ দুর্দশায় রাশিয়া ও চীনই বা কী করছে, তারাও কি এ গণহত্যার বিরুদ্ধে নিরাপত্তা পরিষদে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে একটি প্রস্তাব তুলতে, অন্ততপক্ষে সম্মানজনক অস্ত্রবিরতির পক্ষে প্রস্তাব তুলতে অপারগ? অবশ্য এরই মধ্যে ওয়াশিংটনের আরেক তাঁবেদার রাষ্ট্র মিসর যুদ্ধবিরতির যে প্রস্তাব রেখেছে, ইসরাইল তা মানলেও হামাস মানছে না। তাদের মতে, এ প্রস্তাব ইসরাইলের কাছে আত্মসমর্পণের সমান। তাই তারা প্রতিরোধ ও পাল্টা হামলা চালিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর। কিন্তু তা কতটা সম্ভব? এখানে কয়েকটি বিষয় নিয়ে ভাবনা ও বিবেচনার অবকাশ রয়েছে। প্রথমত, সরষের মধ্যে ভূতের অবস্থান। অর্থাৎ হামাস ও ফাতাহর আত্মদ্বন্দ্ব আর সে দুর্বলতার ফায়দা ভালোভাবেই তুলছে ইসরাইল। তাছাড়া ইসরাইল চায় না হামাস-ফাতাহর মধ্যে কোনো ধরনের রাজনৈতিক সমঝোতা হোক, ফিলিস্তিনি আরবদের শক্তি সংহত হোক। অর্থাৎ সাম্রাজ্যবাদীদের চিরাচরিত অস্ত্র_ ভাগ কর ও শাসন কর (ডিভাইড অ্যান্ড রুল) নীতির কূট-চতুরতায় যে কাজটি ভালোভাবেই চালাচ্ছে ইসরাইল। দ্বিতীয়ত, আত্মঘাতী বিভাজনের পরিপ্রেক্ষিতে হামাসেরও ভেবে দেখা উচিত, ইসরাইলের সঙ্গে লড়াই করার মতো ক্ষমতা তার কতটুকু? ইসরাইলের দিকে ঢিল মারলে পাটকেল নয়, বোমা-বারুদের আগুনে পুড়ে মরতে হবে, সে বোধ কি হামাসের শীর্ষ নেতাদের নেই? তারা কি কোমরে পিস্তল গোঁজা ইয়াসির আরাফাতের পরিণতি থেকেও শিক্ষা নেবেন না? ইসরাইল যখন নমনীয়, সমঝোতায় ইচ্ছুক তখন ফিলিস্তিনি যোদ্ধা বা আরাফাতের কোমরে পিস্তল গোঁজা। আবার শান্তি চুক্তির মাধ্যমে আরাফাত যখন বেশ কিছুটা নমনীয়, তখন ইসরাইল একরোখা। তখনও জেরুজালেমের ওপর কর্তৃত্ব বড় সমস্যা হয়ে থেকেছে। তাছাড়া স্বীকৃতির প্রশ্ন তো ছিলই। কোনো পরাশক্তিই সমস্যার ন্যায়সঙ্গত সমাধানে তখনও এগিয়ে আসেনি। এখনও আসছে না। তারা কি ফিলিস্তিনি সমস্যা জিইয়ে রাখতে চায়? রেখে কোন উদ্দেশ্য সিদ্ধ হবে তাদের? ইহুদিরা যদি বাস্তুহারা হয়ে থাকে তবে তা ঐতিহাসিক কারণে, যে কারণ তাদের হাতে তৈরি। আর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ থেকে ফিলিস্তিনিরা যে স্বভূমি থেকে বিতাড়িত হলো, বিকল্প কোনো ব্যবস্থা ছাড়াই? সেটাও তো তৈরি বিশ্বশক্তির হাতে। বিনা অপরাধে শাস্তি। আর জাতিসংঘ তার কর্তব্য পালন না করে গাজায় ইসরাইলকে আগ্রাসনে উৎসাহ দিতে যে শরণার্থী শিবির খুলে রেখেছে সেটা যেমন হাস্যকর, তেমনি ফিলিস্তিনের প্রতি উপহাসের মতো দেখায়। আসলে বর্তমান পরিস্থিতিতে ফিলিস্তিনি সমস্যার সমাধান আটকে আছে আন্তর্জাতিক পরাশক্তির হাতে। শান্তি চুক্তির পর তাদের সদিচ্ছার অভাবে সমস্যার জট খোলেনি। ১৯৪৮-এ যেমন ইহুদিদের রাষ্ট্র তৈরি করে দেয় তারা নিছক মানবিক সহানুভূতির টানে, এবং অন্যের মাথায় কাঁঠাল ভেঙে, এরপর দরকার ছিল সেই মানবিক বোধেরই, দরকার ফিলিস্তিনিদের জন্য স্বাধীন রাষ্ট্র তৈরি করে দেয়া। তাতে ইসরাইলের মাথায় কাঁঠাল ভাঙার প্রয়োজন হয় না। তারা এখন আপন শক্তিতে বলীয়ান হয়ে বেশ সহি-সালামতেই আছে। আর এ প্রসঙ্গে হামাসের উদ্দেশে বলি, ক্ষমতাহীনের আস্ফালন একেবারেই মানায় না, যুক্তির ধারে-কাছেও নেই। তাতে বৃথা প্রাণহানি, নিজের শরীর থেকে রক্ত ঝরানো। একে বলে 'আত্মঘাতী মূঢ়তা'। এ মূঢ়তা শুরু থেকে দেখিয়ে এসেছে ফিলিস্তিনি নেতৃত্ব তাদের অদূরদর্শী 'যুদ্ধংদেহী' মনোভাবে; অথচ যুদ্ধজয়ের শক্তি তাদের নেই। সেক্ষেত্রে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান শ্রেয়। কিন্তু কোনো পক্ষই যুক্তিতে নেই। এ দায় পুরোপুরি আন্তর্জাতিক পরাশক্তিসহ জাতিসংঘের। কবে তাদের ঘুম ভাঙবে? একুশে সংবাদ ডটকম/আর/২৪-০৭-০১৪:

বিভাগের আরো খবর

You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MySQL server version for the right syntax to use near 'ORDER BY bn_content.ContentID DESC LIMIT 8' at line 1