সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

মেয়েকে সান্তনা দিয়ে বিদায় নিলেন সফিউল আজম

প্রকাশিত: ০৯:১৫ এএম, জুলাই ২৩, ২০১৪
একুশে সংবাদ : 'রমজানের পর দেশে আসবো। আসার সময় তোমার জন্য একটি মোবাইল নিয়ে আসবো, আছাড় দিলেও ভাঙ্গবে না। ইফতারের সময় হয়ে গেছে, এখন রাখো। নামাজের পর আবার কথা হবে।' স্কাইপের মাধ্যমে মেয়েকে সান্তনা দিয়ে বিদায় নিলেন চল্লিশ বছর বয়সি সৌদি প্রবাসী সফিউল আজম। সময়-অসময়ে মুঠোফোন ও স্কাইপে স্ত্রী-সন্তানের খোঁজ খবর নিলেও কে জানতো এবারই ছিলো আজমের শেষ বারের মতো কথা বলা। তথ্য প্রযুক্তির কল্যাণে দূর থেকে বাবাকে শেষ বারের মতো দেখলেও বাবার হাত ধরে ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ হারালো কেজি ওয়ান এ পড়ুয়া উম্মে মাইসা ওয়ার্দী। দু'বছর বয়সি ওসামা আসিম কেও আর ডেকে ঘুম ভাঙ্গাবে না তার বাবা। নামাজ পড়ার পর স্বামীর কণ্ঠস্বর শোনার জন্য আর অপেক্ষা করতে হবে না প্রিয়তমা স্ত্রী রাশেদার। দেড় বছর আগে শেষবারের মতো দেশে এসেছিলেন আজম। করেছেন নিজেদের একটি নতুন বাড়ি। সাজিয়েছেন সুখের সংসার। রমজানের পর আবার দেশে ফেরার কথা থাকলেও বিদেশ থেকে খবর এসেছে 'এবার আজম দেশে ফিরবেই, কিন্তু লাশ হিসেবে'। পিতার মৃত্যুর খবর শুনলেও চোখের সামনে বাবাকে না দেখায় অনুভূতি শূণ্য অবুঝ দুই শিশু। রমজানের পর বাবাকে দেখার যে প্রত্যাশা বুকে বেঁধে ছিলো ওয়ার্দী-ওসামা সেসব ভাবনা আর স্বপ্ন যেন আঁধারে হারিয়ে গেলো। হলো না আর বাবাকে জড়িয়ে ধরা, গায়ে গা লাগিয়ে বসা বা অন্যায় ভাবে করা বাবার কাছে দু-একটি আবদার। কিন্তু বাবার শেষ কথাগুলো এখনো কানে বাজে সাত বছরের উম্মে মাইসা ওয়ার্দীর। বার বার ওয়ার্দীর মুখে বাবার বর্ণনা ও শেষ কথাগুলো শুনে মা, চাচা, দাদীর হূদয়ে যেমনি স্রোতের ন্যায় ঢেউ এসে চোখ ভিজিয়ে দেয় অশ্রু-জলে, তেমনি অশ্রুসজল নয়নে তাকিয়ে থাকতে দেখা যায় পরিবারের অন্য সদস্যদেরও। প্রবাসী আজমের পরিবার ও স্বজনদের মতো সন্তানদের চাপা কান্নায় মুসা মিয়া কমান্ডার বাড়িতে ভারী পরিবেশ। যেন বাঁধা মানে না চোখের জল। ক্ষণে ক্ষণে শোনা যায় কান্নার ধ্বনি-প্রতিধ্বনি। এ কান্নার শুরু গত ৮ জুলাই মঙ্গলবার সৌদি আরবের স্থানীয় সময় রাত ৯টায় থেকে। ওই সময় ওজুর পানিকে কেন্দ্র করে মিশরীয় এক ব্যক্তির হাতে খুন হয় আজম। পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, সেৌদি আরবের মক্কা মিসফালা দাখেলা রোডস্থ নিজস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পাশে ফল্টিার পানি দিয়ে ওজু করার সময় মিশরীয় এক ব্যক্তির সাথে তার কথা কাটাকাটি হয়। বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে মিশরীয় ওই ব্যক্তি চাকু দিয়ে আজমের পিঠে ও পেটে আঘাত করে। রক্তাক্ত আজমকে আইনীর ভয়ে তাত্ক্ষণিক উদ্ধার করেনি ওখানকার কর্মরত স্থানীয় কেউই। অনেকটা সময় অতিবাহিত হয়ে যাবার পর আহত আজমের ছোট ভাই এমরান এসে ঘটনাস্থল থেকে হাসপাতালে নেয়ার পথে অধিক রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়। ভাইয়ের মৃত্যুতে শোকার্ত্ব এমরান বাদী হয়ে ওই মিশরীয় ব্যক্তির বিরুদ্ধে সৌদি আরবের স্থানীয় আদালতে মামলা দায়ের করলেও মামলা তদন্তাধীন ও আসামী গ্রেফতার না হওয়ায় আজমের লাশ দেশে ফেরা নিয়েও সৃষ্টি হয় অনিশ্চিয়তার। লাশ কবে নাগাদ দেশে ফিরতে পারে এমন খবর নিশ্চিত করতে সেৌদি আরবের জেদ্দা কন্সু্যলেটে যোগাযোগ করলে ভারপ্রাপ্ত কনস্যাল জেনারেল মোকাম্মেল হোসেন এর সাথে আলাপ করে গত ২২ জুলাই তিনি জানান, 'আসামীকে এখনও গ্রেফতার করা হয়নি। মামলার গভীর তদন্ত চলছে। শীঘ্রই মামলার তদন্ত শেষে লাশ দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে।' উল্লেখ্য, প্রবাসী সফিউল আজম মীরসরাইয়ের ৭ নং কাটাছড়া ইউনিয়নের মুসা মিয়া কমান্ডার ও আমাতের নূর এর সেজো ছেলে। একুশে সংবাদ ডটকম/আর/২৩-০৭-০১৪:

বিভাগের আরো খবর

You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MySQL server version for the right syntax to use near 'ORDER BY bn_content.ContentID DESC LIMIT 8' at line 1