সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

মকবুল মৃধার রোযা ও ঈদ

প্রকাশিত: ০৫:০০ এএম, জুলাই ২৩, ২০১৪
একুশে সংবাদ : সকালে অফিসে বেরুনোর সময় মকবুল মৃধাকে তার স্ত্রী মাজেদা বলল, আজ ইফতারিতে লাইজুর শ্বশুর-শাশুড়িদের আমাদের বাসায় আসতে বলেছি। মনে আছে তো? মকবুল হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ায়। তুমি অফিস থেকে একটু আগে বেরিয়ে প্রভিন্সিয়াল রেস্টুরেন্ট থেকে হালিম আর বটি কাবাব নিয়ে আসবা। দেখো আবার দেরি যেন না হয়। হালিম আর বটি কাবাব আনতে প্রভিন্সিয়াল এ যেতে হবে কেন? তুমি পরীকে দিয়ে মোড়ের দোকান থেকেই তো আনিয়ে নিলে পারো। মাজেদা স্বামীর উপর রেগে গিয়ে বললো যা বোঝ না তা নিয়ে কথা বলতে এসো না। প্রভিন্সিয়াল আর মোড়ের দোকান কি এক হোল? মকবুল হার মেনে বেরিয়ে যায়। সে ছোট মেয়ে রুবা, স্ত্রী আর কাজের মেয়ে পরীকে নিয়ে মোহাম্মদপুরে ফ্লাট বাড়িতে থাকে। বড় দুই মেয়ে লাইজু আর রোজীর বিয়ে হয়ে গেছে। বিকেলে হালিম আর বটি কাবাব নিয়ে বাসায় ফিরতেই রুবা জিজ্ঞেস করে- বাবা এত দেরি করে ফিরলে যে? আমরা তো চিন্তায় অস্থির। প্রভিন্সিয়াল রেস্টুরেন্টে লাইন ঠেলে ইফতার কিনতে দেরি হয়ে গেল। রুবা অভিযোগের সুরে বলে, একটা ফোন করে তো অন্তত জানাতে পারতে -আমার কি মোবাইল ফোন আছে যে তোদেরকে জানাবো। -আচ্ছা যাও বাবা তোমাকে একটা মোবাইল ফোন কিনে দেবো। মকবুল মেয়ের উপর রেগে যান। বলেন, তুই মোবাইল ফোন কেনার টাকা পাবি কোথায়? তুই কি চাকরি করিস? রুবা কেঁদে কেটে তার মাকে গিয়ে সব বললো । মাজেদা এসে মেয়ের পক্ষ নিয়ে তাকে গালমন্দ করলো। ইফতারের আগে আগে লাইজুর শ্বশুর বাড়ির পুরা পরিবার চলে এলো। সবাই একসঙ্গে ইফতার শুরু করলো। লাইজুর শ্বশুর আমজাদ আলী বলে, বেয়াই সাহেব আমাদের মৌলভীবাজারের হোল সেল ব্যবসাই তো হয় রমজান মাসে। সারা বছরের আয় আমরা এই এক মাসেই বানিয়ে নেই। এই মাসটায় একটু বুদ্ধি খাটাতে পারলেই কেল্লা ফতে। হা হা হা। তারপর বেয়াই সাহেব রোযা কেমন কাটছে। মকবুল হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ালো। আপনার চাকুরিতে অবসর যেন কবে? আগামী মার্চে। তারপর কি করবেন ভেবেছেন; ব্যবসা-বাণিজ্য? ঢাকায় ফ্ল্যাট কেনার কথা কিছু ভাবছেন? আমার এক পরিচিত ডেভেলপার আছে। বললে আপনার জন্য পানির দামে ফ্লাটের বন্দোবস্ত করে দিবে। মকবুল সাহেব মনে মনে ভাবে পাওনা পেনসন আর গ্রাচুইটির সব টাকা আগে ভাগে তুলে দুই মেয়ের বিয়ে দিতে হয়েছে। বাকি যা অবশিষ্ট আছে তা ছোট মেয়ের বিয়ের জন্য তুলে রাখতে হবে। সুতরাং চাকুরি শেষে গ্রামের ভিটে বাড়িতেই ফেরত যেতে হবে। ওই এক ভিটেবাড়ি ছাড়া মাথা গোঁজার ঠাৎই নাই। আর বাপের আমলের যে কয়েক কানি জমি ছিল তা বিক্রির টাকাও তো মেয়েদের পড়ালেখার পেছনে ব্যয় হয়েছে। পরের সপ্তাহে মাজেদা যখন জিজ্ঞেস করে, তোমার ঈদের বেতন বোনাস কবে হবে? লাইজু আর রোজীর শ্বশুর বাড়ীর সবাইকে ঈদের কাপড় চোপড় পাঠাতে হবে। তুমি কি ছেলেদের পায়জামা পাঞ্জাবিগুলো কিনতে পারবে? সিল্ক আদ্দি অথবা গরদের আজকাল খুব সুন্দর ডিজাইনের পাঞ্জাবি বেরিয়েছে। উত্তরে মকবুল সাহেব বলে, আমি সুতি পায়জামা পাঞ্জাবি চিনি। -তুমি যে কি ছোটলোকের মতো কথা বলো না। মেয়েদের শ্বশুর বাড়ির আত্মীয়দের কি সুতি কাপড় দেয়া যায়? ঠিক আছে আমি আর রুবা গিয়েই সব কেনাকাটা করবো। তোমাকে আর এ নিয়ে কষ্ট করতে হবে না। কয়েকদিন পর রোজির শ্বশুর বাড়িতে ইফতারের দাওয়াত। মকবুল অনিচ্ছা সত্ত্বেও যেতে রাজি হলো। যাওয়ার আগে আগে রুবা তাকে বললো, বাবা কোথাও বেড়াতে গেলে তুমি রোবটের মতো মুখ করে বসে থাকো কেন? স্বাভাবিক থাকবে। তোমাকে দেখলে মনে হয় আমরা জোর করে ধরে নিয়ে গেছি। মকবুল বিরক্ত গলায় বলে, মা’রে কথাটা তো আর মিথ্যা না। রোজীর শ্বশুর মঞ্জুর হোসেন ভোজন রসিক মানুষ। ইফতারের টেবিলে বসে তিনি বলেন, বেয়াই সাহেব সেই মোঘল আমলের খানাপিনা তো এখন আর অবশিষ্ট নাই। তবে চেষ্টার যে ত্রুটি করেছি তা কিন্তু নয়। আছে চক বাজারের পিয়াজু, ঘুগনি, বেগুনি, আলুর চপ আর তেহারি। ঠাটারি বাজারের স্টার হোটেল থেকে আনিয়েছি টিকিয়া, শামি, দম, শিক আর বোটি কাবাব। রায়সাহেব বাজার থেকে এসেছে দই বড়া আর চটপটি। মামা হালিম এসেছে কলাবাগান থেকে। জবাবে মকবুল শুধু দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে। ঈদের আগের দিন রাত থেকেই মকবুলের শরীরটা ভাল যাচ্ছিল না। গরম আর বয়সের ভার তাকে কাহিল করে ফেলেছে। ঈদের নামাজ পরে এসে সে একটু মিষ্টি মুখে দিয়েই বিছানায় শুইয়ে পড়লো। দুপুরের দিকে রুবা এসে তাকে ডেকে তুললো। বসার ঘরে গিয়ে দেখে রোজীর শ্বশুর পুরা ফ্যামিলি নিয়ে বেড়াতে এসেছে। অনিচ্ছা সত্ত্বেও শরীর খারাপ নিয়ে তাদের সাথে খেতে বসতে হোল। খাওয়া দাওয়া শেষে রোজীর জামাই সবার সামনে মকবুলকে সালাম করলে সে খুব লজ্জিত ভঙ্গিতে পাঞ্জাবির পকেটে টাকা খুঁজতে লাগলো। সবাই তার দিকে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ পেছন থেকে পরী এসে তার পকেটে এক হাজার টাকার একটা নোট গুঁজে দিয়ে বলে, চাচাজি টাকাটা তার বিছানায় ফেলে এসেছিলো। আমি বিছানা গুছাতে গিয়ে পেয়েছি। সেই টাকা জামাইয়ের হাতে তুলে দিয়ে তার ইজ্জত রক্ষা পেল। সন্ধ্যার আগে আগে মকবুলের পেট মুচড়িয়ে বমি আসতে লাগলো। মাজেদা আর রুবা স্যালাইন বানিয়ে খাটের পাশের টেবিলে রেখে সাজ-সজ্জা করে বেরিয়ে পড়ে। কাজের মেয়ে পরীরও এই ফাঁকে বড় বোনের সঙ্গে দেখা করতে পাশের বস্তিতে যাওয়ার কথা। কিছুক্ষণের মধ্যেই মকবুল হর হর করে বমি করে সারা বিছানা ভাসিয়ে ফেলে। পরী পরম সযত্নে চাচাজির মাথা তার কোলে তুলে নিয়ে পানি ঢালতে লাগলো। বমি করা বন্ধ হলে সে বিছানা মেঝে সব পরিষ্কার করে চাচাজির কাপড় বদলে মাথায় আর পেটে ঠাণ্ডা তেল-পানি মালিশ করে দিলো। একটু সুস্থ হয়ে মকবুল জিজ্ঞাসা করে, আচ্ছা পরী, আমি বেতন আর বোনাসের সব টাকা তো তোর চাচির হাতে তুলে দিলাম। তুই আমার বিছানায় টাকা পেলি কিভাবে? আরে চাচাজি দেহি কিছুই বুজে না। আপনারে সবার সামনে লজ্জায় পড়তে দেইখা আমি একটা পাট লইলাম। আমার বেতনের টেকা আপনার পকেটে গুঁইজা দিছিলাম। জানেন চাচাজি জন্মের আগে বাপ আর পরে মায়রে হারাইয়া তাদের আদর সোহাগ কহনও পাই নাই। তয় আপনাদের সংসারে কাজে আইসা আফনে হেইডা আমারে বুঝবার দেন নাই। মকবুল ভাবে জগত সংসারে হাড় ভাঙ্গা খাটুনি আর রোজগারের সবটুকু দিয়েও অতি আপনজনদের এতটুকু খুশি করা যায় না। অথচ প্রকৃতি এই এতীম মেয়েটাকে কত অল্পতেই তুষ্ট হতে শিখিয়েছে। একুশে সংবাদ ডটকম/আর/২৩-০৭-০১৪:

বিভাগের আরো খবর

You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MySQL server version for the right syntax to use near 'ORDER BY bn_content.ContentID DESC LIMIT 8' at line 1