সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

চেনা জগতের অচেনা মানুষ হিমু

প্রকাশিত: ০৭:০৮ এএম, জুলাই ২০, ২০১৪
একুশে সংবাদ : লেখার অপেক্ষা রাখে না, হুমায়ূন আহমেদের সৃষ্ট চরিত্রসমূহের মধ্যে হিমু সবচেয়ে বেশি আলোচিত এবং জনপ্রিয়। অন্যদিকে হিমুকে নিয়ে রহস্য আর অলৌকিকতারও শেষ নেই। লেখক নিজেই এই রহস্যময়তা সচেতনভাবেই রেখেছেন বলে মনে হয়। এক অর্থে হিমুকে আমাদের প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থায় ‘আউটসাইডার’ মনে হয়। এই আগুন্তুক চারপাশের বস্তুতান্ত্রিকতা, বাস্তবতাকে শুধু অস্বীকারই করে না, ক্ষেত্রবিশেষে চ্যালেঞ্জও করে। প্রচলিত নিয়ম মানা, ‘চলো নিয়ম মতে’ রীতিতে চলা হিমুর ধাঁচে নেই। তার বয়সের প্রতিটি নাগরিক তরুণ যখন ক্যারিয়ার আর কর্পোরেট স্বপ্নে বিহ্বল, হিমু তখন নেহাতই পকেটবিহীন হলুদ পাঞ্জাবি গায়ে, খালি পায়ে হাঁটা এক পরিব্রাজক। ‘হিমু’ উপন্যাসে নিজেকে সে পরিচয় দেয় ‘আমি একজন পরিব্রাজক।’ তাকে বেকার বললেও সে বলে, ‘ঘুরে বেড়ানো তার কাজ’। আবার ‘হিমুর হাতে কয়েকটি নীল পদ্ম’ উপন্যাসেও মারিয়া যখন জানতে চায়- আপনি কে? হিমু বলে, ‘মারিয়া, আমি কেউ না। I am nobody.’ আমরা সবাই যখন কেউ একটা কিছু হয়ে ওঠার প্রতিযোগিতায় উদগ্রীব হিমু তখন নিজেকে কেউ না বলে সুখী হয়। হয়তো অনুমান শক্তি, হয়তো ইএসপি কিংবা তীব্র যৌক্তিক ব্যাখ্যার সূত্র ধরেই হিমু অনেক সময়ই অনেক তাক লাগানো কাণ্ড করে ফেলে। তার চারপাশের অনেকেই তাকে অলৌকিক কিছু মনে করে। ধর্মপ্রচারকের মতো তারও রয়েছে ভক্তকুল। কিন্তু নিজেকে হিমু কখনোই মহাপুরুষ দাবী করে না, অলৌকিক কোন কিছু করা সম্ভব বলেও দাবী করে না। আবার কখনো বা কিছু রহস্য সে ইচ্ছা করেই রেখে দেয়। সব মিলিয়ে সমকালের সমবয়সী তরুণদের সাথে হিমুর ফারাকটা অনেক বেশি। হয়তো এই কারণেই সমকালের তরুণ সমাজের কাছে ‘হিমু’ এক আইকন। মাসুদ রানা’র পরে এ দেশের তরুণদের সামনে হিমু যথার্থ অনুসরণীয় আদর্শ চরিত্র। মনে মনে প্রতিটি তরুণ, মানুষের ভালো করতে চায়, জোছনা, বৃষ্টি কিংবা রূপার মতো অধরা কোন সুন্দরীকে নিয়ে জীবন কাটানোর স্বপ্ন দেখে। অথচ জীবনের পারিপার্শ্বিক চাপে তা পারে না। হিমু পারে। নিজেদের এই না-পারাটা যার মধ্যে অবলীলায় ঘটতে দেখে পাঠক তো তাকেই আদর্শ ভাববে। তাই হিমু স্বপ্নের, অলীক জগতের চরিত্র হয়েও তরুণদের কাঙ্ক্ষিত চরিত্র হয়ে ওঠে। হুমায়ূন আহমেদ তার হিমু সিরিজের ‘পারাপার’ উপন্যাসে যথার্থই বলেন, ‘পৃথিবীর সব নারীই রূপা এবং সব পুরুষই হিমু।’ সাহিত্যের জটিল রীতি-কাঠামো আর বড় বড় তত্ত্বের ধার ধারেন না হুমায়ূন আহমেদ। সরল আবেশে তিনি হিমুকে তৈরি করেন মহাপুরুষ হিসেবে। হিমুর বাবা চেয়েছিল হিমুকে মহাপুরুষ বানাতে। সেই চাওয়া এবং হওয়ার প্রক্রিয়াটিও স্বাভাবিক নয়। ‘হিমু’ উপন্যাসে হিমু নিজেই মনোবিশেষজ্ঞ ইরতাজুল করিমের সামনে স্বীকারোক্তি করে, ‘ডাক্তার সাহেব, আমার বাবা ছিলেন একজন অসুস্থ মানুষ। সাইকোপ্যাথ। এবং আমার ধারণা খুব খারাপ ধরনের সাইকোপ্যাথ। তার মাথায় কী করে যেন ঢুকে গেল- মহাপুরুষ তৈরি করা যায়। যথাযথ ট্রেনিং দিয়েই তা করা সম্ভব। তার যুক্তি হচ্ছে- ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ডাকাত, খুনি যদি শিক্ষা এবং ট্রেনিং দিয়ে তৈরি করা যায়, তাহলে মহাপুরুষ কেন তৈরি করা যাবে না? অসুস্থ মানুষদের চিন্তা হয় সিঙ্গেল ট্র্যাকে। তার চিন্তা সে রকম হলো। তিনি মহাপুরুষ তৈরির খেলায় নামলেন। আমি হলাম তার একমাত্র ছাত্র। তিনি এগুলেন খুব ঠাণ্ডা মাথায়। তার ধারণা হলো, আমার মা বেঁচে থাকলে তিনি তাকে এ জাতীয় ট্রেনিং দিতে দেবেন না। কাজেই তিনি মাকে সরিয়ে দিলেন।’ কিন্তু এই হিমু তার বাবার ধারণা ও শিক্ষাকেই ধারন করে চলে। ‘হিমুর হাতে কয়েকটি নীল পদ্ম’ উপন্যাসে সে বলে, ‘আমার বাবা কি আসলেই অপ্রকৃতিস্থ? কাদের আমরা প্রকৃতিস্থ বলবো? যাদের চিন্তা-ভাবনা স্বাভাবিক পথে চলে তাদের? যারা একটু অন্যভাবে চিন্তা-ভাবনা করে তাদের আমরা আলাদা করে ফেলি- তা কি ঠিক? আমার বাবা তার পুত্রকে মহাপুরুষ বানাতে চেয়েছিলেন। তার ইচ্ছার কথা শোনামাত্রই আমরা তাকে উন্মাদ হিসাবে আলাদা করে ফেলেছি। কোন বাবা যদি বলেন, আমি আমার ছেলেকে বড় ডাক্তার বানাবো তখন আমরা হাসি না, কারণ তিনি চেনা পথে হাঁটছেন। আমার বাবা তার সমগ্র জীবনে হেঁটেছেন অচেনা পথে। আমি সেই পথ কখনো অস্বীকার করিনি। আমরা সবাই কমবেশি কিছুক্ষণের জন্য হলেও মহাপুরুষ হতে চাই। তখন জাগতিক কদর্য, নোংরামিগুলো অনেক বেশি করে আমাদের ভাবায়। হিমুর ক্ষেত্রেও তাই ঘটে। মহাপুরুষ অথবা মহাপুরুষ হওয়ার চেষ্টায় রত এই বোহেমিয়ান তরুণ তখন চারপাশের বাস্তবিকতাকে ভিন্ন চোখে দেখে। আমার মনে হয়, হুমায়ূন আহমেদ অতি সচেতন এবং সূক্ষ্মভাবেই হিমুকে ‘আউটসাইডার’ করেছেন যাতে করে আমাদের সমকালের ব্যাখ্যাটি তার চোখ দিয়ে করা যায়। লক্ষ্য করি, সমকালের বাংলাসাহিত্যে হিমু এমন কিছু বিষয় ও বক্তব্য রাখে যা যথার্থ সাহসী ও দূর্লভ। বুদ্ধিজীবির অবক্ষয়, রাজনৈতিক দৈন্য, মানবাধিকার লঙ্ঘন, দুর্নীতি এমনি সব বিষয় আমরা হিমু সিরিজের উপন্যাসে উঠে আসতে দেখি। ‘হিমুর মধ্যদুপুর’ উপন্যাসে আমরা পাই, ‘সবচে সহজ পণ্য হলো মানুষ। মানুষ কেনা কোনো সমস্যাই না। মানুষদের মধ্যে সবচেয়ে সহজে কেনা যায় বুদ্ধিজীবিদের। তারা খুব আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করেন কখন বিক্রি হবেন।’ এই সাহসী উক্তির সঙ্গে আমাদের টকশো আর রাজনীতির ইশারায় বিবৃতি দেয়া অনেকের কথাই মনে পড়ে যেতে পারে। হিমু সিরিজের প্রথম উপন্যাস ময়ুরাক্ষীতে লক্ষ্য করি থানার ওসি’র ঘুষ খাওয়ার বিষয়টি হিমু তুলে ধরে এভাবে : ‘থানার ওসি সাহেবের চেহারা বেশ ভালো। মেজাজও ভালো। চেইন স্মোকার। ক্রমাগত বেনসন অ্যান্ড হেজেস টেনে যাচ্ছে। বাজারে এখন সত্তর টাকা করে প্যাকেট যাচ্ছে। দিনে তিন প্যাকেট করে হলে মাসে কত হয়? দুশোদশ গুণণ তিরিশ। ছ-হাজার তিনশ’। একজন ওসি সাহেব বেতন পান কত, এক ফাঁকে জেনে নিতে হবে।’ এই অংশে হিমুর সামাজিক দায়বদ্ধতা সুপ্রকট। একজন ঘুষখোর ওসির চরিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন খুবই সরল অংকের মাধ্যমে। বাংলাদেশের পুলিশের ঘুষ খাওয়ার বিষয়টি এখানে তীব্র শ্লেষের সঙ্গে উঠে এসেছে। সমকালের অনেক ওসি’র জন্যই হিমুর এই প্রশ্নবাণ বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। আমরা যারা সাধারণ মানুষ এবং সমাজের ভেতরে থেকে সমাজের সব কাঠামো ও রীতি মেনে চলি তাদের কাছে একজন ওসির বেনসন সিগারেট খাওয়াটা গা সওয়া হয়ে গেছে। চাই কি তার সঙ্গে বেনসন পানের সঙ্গীও হতে পারি। কিন্তু হিমু আউটসাইডার বলেই হাসতে হাসতেই ঘুষ আর দুর্নীতির চিত্রটি তুলে ধরে অবলীলায়। হিমুর মুখে এইসব প্রশ্ন বা মন্তব্য কখনোই বেমানান ঠেকে না। কেননা, সে কারো ধার ধারে না। যেহেতু হিমুকে ক্যারিয়ারের কথা ভাবতে হয় না, যেহেতু জাগতিক কোন কিছুরই মূল্য হিমুর কাছে নেই, সেহেতু অনাচার-অন্যায় নিয়ে সে অনায়াসে জাগলিং করতে পারে। হিমুর হাত থেকে তাই অতি ক্ষমতাধর রাজনৈতিক সমাজও ছাড় পায় না। হিমু অবলীলায় বলে, ‘কিছু কিছু লোক মন্ত্রী-কপাল নিয়ে জন্মায়। জিয়া, এরশাদ যেই থাকুক, এরা মন্ত্রী হবেই। জহিরের বাবা এরকম ভাগ্যবান একজন মানুষ।’ ‘দরজার ওপাশে’ উপন্যাসের এই উদ্ধৃতির মাধ্যমে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সময় সময় দল-পাল্টানোর বিষয়টি উঠে আসে। আমাদের মন্ত্রীদের সম্পর্কে সাধারণ মানুষের ধারণাও এ উপন্যাসের রফিকের মন্তব্যের মাধ্যমে ফুটে ওঠে, ‘তুই কোন মন্ত্রী চিনিস না, তাই না? চেনার অবশ্য কথা না। ভালো মানুষদের সঙ্গে মন্ত্রীর পরিচয় থাকে না। বদগুলির সঙ্গে থাকে।’ সমকালের রাজনৈতিক নেতাদের চরিত্রের দলিল হয়ে থাকবে হিমু সিরিজের একাধিক উপন্যাস। হিমুর কোন দল নেই। তাই তার কাছ থেকে কেউ রেহাই পায় না। আমাদের জনবিচ্ছিন্ন দুই প্রধান রাজনৈতিক দল নিয়ে হিমু অবলীলায় বলে, ‘আমার ধারণা নিন্ম শ্রেণীর পশুপাখী মানুষের কথা বোঝে। অতি উচ্চ শ্রেণীর প্রাণী মানুষই শুধু একে অন্যের কথা বোঝে না। বেগম খালেদা জিয়া কী বলছেন তা শেখ হাসিনা বুঝতে পারছেন না। আবার শেখ হাসিনা কী বলছেন তা বেগম খালেদা জিয়া বুঝতে পারছেন না। আমরা দেশের মানুষ কী বলছি সেটা আবার তারা বুঝতে পারছেন না। তারা কী বলছেন তাও আমাদের কাছে পরিষ্কার না।’ ‘হিমুর হাতে কয়েকটি নীল পদ্ম’ উপন্যাসের এই সংলাপ যেন মনে করিয়ে দেয়, লাল টেলিফোনের যোগাযোগহীনতার গল্প। রাজনৈতিক নির্বুদ্ধিতার সবচেয়ে বড় পরিচয় ধারাবাহিক হরতাল। উন্নয়নশীল এই রাষ্ট্রের জন্যে টানা হরতাল কতো লক্ষ কোটি টাকার ক্ষতি করে সে হিসাব সত্যিই ভয়াবহ। কিন্তু এই নিয়ে যেন কারো বিকার নেই, একমাত্র হিমুই বিকারগ্রস্থের মতো একই উপন্যাসে প্রশ্ন করে- ‘আজ হরতালের কতদিন চলছে? মনে হচ্ছে সবাই দিন-তারিখের হিসেব রাখা ভুলে গেছে। নগরীর জন্ডিস হয়েছে। নগরী পড়ে আছে ঝিম মেরে। এ রোগের চিকিৎসা নেই। বিশ্রামই একমাত্র চিকিৎসা। নগরী বিশ্রাম নিচ্ছে।’ অসুস্থ এই ঢাকা নগরীর আরোগ্য নিয়ে হিমুর মনে যে সন্দেহ দেখা দেয় তা অনেকের মনেও ছড়িয়ে পড়ে- ‘এখনকার অবস্থা সে রকম না, এখন অন্য রকম পরিবেশ। জন্ডিসে আক্রান্ত নগরী রোগ সামলে গা-ঝাড়া দিয়ে উঠতে পারবে তো- এটাই সবার জিজ্ঞাসা। নাকি নগরীর মৃত্যু হবে? মানুষের মতো নগরীরও মৃত্যু হয়।’ হুমায়ূন আহমেদই পারেন ‘হলুদ হিমু কালো র‌্যাব’, ‘হিমু রিমান্ডে’ নামে উপন্যাস লিখতে। হিমুকে র‌্যাবের হাতে ধরিয়ে দিয়ে অন্যায়ভাবে মানুষ হত্যার প্রসঙ্গটি লেখক তুলে ধরেন নিখুত দক্ষতায়। র‌্যাবের মতো বিশেষ বাহিনী গঠন এবং ক্রসফায়ারে বিনাবিচারে মানুষ মারা নিয়ে একাধিক প্রবন্ধ ও কলাম লেখা হয়েছে। কিন্তু সৃষ্টিশীল সাহিত্যে তার একমাত্র দলিলনামা আমরা শুধু ‘হলুদ হিমু কালো র‌্যাব’ উপন্যাসেই দেখেছি। হিমুর সঙ্গে র‌্যাবের কর্মকর্তার কথোপকথন উদ্ধৃতিযোগ্য : ‘আপনি কেন আমাদের কর্মকাণ্ড সমর্থন করেন না বলুন তো? আপনার যুক্তিটা শুনি। আপনি কি চান না ভয়ঙ্কর অপরাধীরা শেষ হয়ে যাক? ক্যান্সার সেলকে ধ্বংস করতেই হয়। ধ্বংস না করলে এই সেল সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। আমি বললাম, ‘স্যার মানুষ ক্যান্সার সেল না। প্রকৃতি মানুষকে অনেক যত্নে তৈরি করে। একটা ভ্রুণ মায়ের পেটে বড় হয়। তার জন্য প্রকৃতি কী বিপুল আয়োজনই না করে! তাকে রক্ত পাঠায়, অক্সিজেন পাঠায়। অতি যত্নে তার শরীরের একেকটা জিনিস তৈরি হয়। দুইমাস বয়সে হাড়, তিন মাসে চামড়া, পাঁচমাস বয়সে ফুসফুস। এতো যত্নে তৈরি একটা জিনিস বিনাবিচারে ক্রস ফায়ারে মরে যাবে- এটা কি ঠিক?’ হিমুর এই প্রশ্ন মানবিকতার ভিন্ন দূয়ার খুলে দেয়। মানব সৃষ্টি ও মানব জন্মের এমন জয়গান যথার্থই দূর্লভ। এই একই উপন্যাসে বাংলাদেশের রাজনীতির পরিবারতন্ত্রের বিষয়টি সমালোচিত হয়। ‘আজ হিমুর বিয়ে’ উপন্যাসে আমাদের পরনির্ভরশীলতা ও রাষ্ট্রীয় দূর্বলতার একটা দিক উঠে আসে। ‘ভিক্ষাবৃত্তিকে আমাদের সমাজে খুব খারাপভাবে দেখা হয় না। আমরা সবাই কোন না কোনভাবে ভিক্ষা করি। আমাদের রাষ্ট্রও ভিক্ষুক রাষ্ট্র। দাতা দেশের ভিক্ষায় আমরা চলি।’- এই কয়েকটি বাক্যের মাধ্যমে হিমু যেন আমাদের রাজনৈতিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় চরিত্রে কষাঘাত হানেন কুশলী প্রহসন শিল্পী হয়ে। প্রহসনের সুরটি হিমু চরিত্রে বড়ই প্রকট। সে পুলিশ, র‌্যাব, মাস্তান, ব্যবসায়ী কাউকেই খোঁচা না দিয়ে যায় না। কর্পোরেট ও বিজ্ঞাপন জগতের অসারতা ধরা পড়ে যায় ‘হিমু রিমান্ডে’ উপন্যাসে। হিমু টিভি দেখতে দেখতে বলে, ‘বিজ্ঞাপন শুরু হলো। মনে হচ্ছে আজ আবুল হায়াত দিবস। প্রতিটি বিজ্ঞাপনই তার। প্রথমে লিপটন তাজা চায়ের গুণগান করলেন। তারপর তাকে দেখা গেলো নাসির গ্লাসের গুণগান করতে। নাসির গ্লাসের পর সিংহ মার্কা শরীফ মেলামাইন। আবুল হায়াত দর্শকদের সাবধান করলেন কেউ যেন সিংহ মার্কা না দেখেই শরীফ মেলামাইন না কেনেন। সিংহ মার্কার পরেই তিনি চলে এলেন গরু মার্কায়। জানা গেল গরু মার্কা ঢেউ টিন ছাড়া অন্য কোন ঢেউ টিন তিনি ব্যবহার করবেন না।’ কর্পোরেট চাহিদা গরু থেকে সিংহ মার্কায় অদল-বদলের এই চিত্র যেন শঙ্খঘোষের ‘মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞপনে’ কবিতার কথা মনে করিয়ে দেয়। হিমু নিজে কে, কেমন মানুষ তা সুনির্দিষ্ট নয়। কেননা, সে রহস্যময়। সাধারণ মানুষ নয়, মহামানব বানানোর এক নীরিক্ষার ফসল সে। হিমুর বাবার হিমুকে মহাপুরুষ বানানোর নীরিক্ষা সফল হয়েছে কি হয়নি তা নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়। তবে এটুকু বলা যায় আমাদের চেনা জগতকে এক অচেনা আগুন্তুকের চোখে দেখে সে। সত্যজিৎ এর আগুন্তুক মনমোহন মিত্র কিংবা ক্যামুর আউটসাইডারের মার্সেল থেকে হিমু অনেক বেশি রহস্যময়, অচেনা, তবু বাস্তব। হয়তো কোথাও আমাদের চেনা জগতেই চেনা রাস্তাতেই অচেনা হিমু হেঁটে যাচ্ছেন প্রতিদিন। হিমুর স্রষ্টা হুমায়ূন তাকে চিনতে পেরেছেন, আমরা পারিনি, কোনদিন হয়তো পারবো। একুশে সংবাদ ডটকম/আর/২০-০৭-০১৪:

বিভাগের আরো খবর

You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MySQL server version for the right syntax to use near 'ORDER BY bn_content.ContentID DESC LIMIT 8' at line 1