সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

রমজান ও কুরআন শিক্ষা

প্রকাশিত: ০৮:২৪ এএম, জুলাই ১৯, ২০১৪

একুশে সংবাদ ডেস্ক : ইসলাম হলো একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা যাতে আমরা সমাজ, সংস্কৃতি, রাষ্ট্র, ধর্ম প্রভৃতি সকল কিছুরই রূপায়ন দেখতে পাই। কোনো জীবনব্যবস্থা পরিচালনার জন্য সুনির্দিষ্ট বিধি-বিধান ও আইন-কানুন অত্যাবশ্যক। পবিত্র কুরআন এ জীবনব্যবস্থা পরিচালনার মৌলিক আইন-কানুন ও বিধি-বিধান ব্যতীত আর কিছুই নয়।

  সাধারণ জীবনব্যবস্থা পরিচালনা ছাড়াও কুরআনের একটি বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। প্রতিদিন পাঁচবার নামাজে পবিত্র কুরআনের অংশ বিশেষ মূল আরবীতে পাঠ করতে হয়। এ জন্য ইসলাম যেখানেই গিয়েছে, আরবীতে গ্রন্থিত এর কোষগ্রন্থটি আর এর ভাষাকে সঙ্গে নিয়ে গেছে। ফলে, বিভিন্ন দেশে মানবগোষ্ঠীকে ইসলাম কেবল ধর্মান্তরিতই করেনি বরং সেখানকার ভাষাকেও দারুণভাবে প্রভাবিত করেছে। কুরআনের প্রভাবেই আফ্রিকা মহাদেশের এক তৃতীয়াংশ লোক আরবীভাষীতে পরিণত হয়েছে। তদুপরি এশিয়া ও আফ্রিকার বহু ভাষা, যথা : ফুলানী, হাউসা, উলফ, সোয়াহিলী, উর্দু, ফার্সী, পশতু, সিন্ধি, পাঞ্জাবী প্রভৃতি আজও আরবী বর্ণমালায় লেখা হয়। এ থেকে একটি বিষয় স্বচ্ছ হয় যে, কুরআন সর্বতভাবে প্রভাব তৈরী করে। এই কুরআনের সাথে রমজানের রয়েছে গভীর সম্পর্ক। দেহের সঙ্গে পোশাকের যেমন নিবিড় সম্পর্ক, রমজানের সঙ্গে কুরআনের সর্ম্পকটা তেমনি গভীর। মানবজাতির ইহ ও পরকালীন সর্বাঙ্গীন কল্যাণের জন্য আল্লাহ্‌ প্রদত্ত এই মহাগ্রন্থ রহমত, বরকত মাগফিরাতের পবিত্র রমজান মাসে অবতীর্ণ হয়েছে।   পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, রমজান হলো এমন একটি মাস যাতে কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে। এতে রয়েছে মানুষের জন্য হেদায়াত এবং পথ চলার নির্দেশিকা ও সত্য-মিথ্যা পার্থক্য করার সুস্পষ্ট দলীল প্রমাণ।[সুরা বাকারা : আয়াত-১৮৫]   কুরআন ও রমজান বান্দার জন্য আল্লাহ্‌র দরবারে সুপারিশ করবে। রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, রমজান এবং কুরআন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। রোজা বলবে, হে রব! সারাদিন আমি তাকে খাবার এবং বৈধ উপভোগ থেকে বিরত রেখেছি। সুতরাং তুমি তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল করে নাও। কুরআন বলবে, হে রব! আমি তাকে রাতের ঘুম থেকে বিরত রেখেছি। রাতের ঘুম ছেড়ে দিয়ে সে তারাবীহ এবং তাহাজ্জুদে আমায় তিলাওয়াত করেছে। সুতরাং তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ তুমি কবুল করে নাও। রাসূল (সা.) বলেন, রোজা এবং কুরআনের সুপারিশ আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কবুল করে নিয়ে বান্দাকে মাগফিরাত এবং ক্ষমার পুরস্কারে ভূষিত করবেন।[মিশকাত শরীফ : খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-১৭৩]   সুতরাং আসুন আমরা কুরআন পাঠ ও এর গবেষণায় মনোযোগ দিই। কুরআনের কারণে যেমন রমজানের মর্যাদা, তেমনি অন্যান্য কয়েকটি আসমানী কিতাবও এই রমজান মাসে নাজিল হয়েছে, এদিক থেকে রমজানের মর্যাদার উৎস একাধিক।   মুসনাদে ওয়াসেল বিন আসকা থেকে বর্ণিত, রাসূল [সা.] বলেছেন, রমজানের প্রথম রাতে হজরত ইবরাহীম (আ.)-এঁর সহীফা, ৬ই রমজান হজরত মূসা (আ.)-এঁর ওপর তাওরাত, ১৩ই রমজান ঈসা (আ.)-এঁর উপর ইঞ্জিল এবং ২৪শে রমজান (দিবাগত রাত) কুরআন নাজিল হয়েছে। কথিত আছে যে, ১৮ই রমজান হজরত দাউদ (আ.)-এঁর নিকট যাবূর কিতাব নাজিল হয়।   এই রমজান মাসেই অতীতের উম্মতগুলোর কাছেও আল্লাহ্‌র হেদায়াতের বাণী এসেছিল। এদিক থেকে রমজান হচ্ছে, মহাকল্যাণ, পুরস্কার ও হেদায়াতে ভরা মওসুম। তাইতো রমজানে কুরআন পড়া ও শেখা আরও বেশী উত্তম।   কুরআন এসেছে মানুষকে সহজ-সরল পথ দেখাতে। কুরআন হচ্ছে অন্তরের চিকিৎসা ও আলো এবং জ্ঞান ও দলীল। কুরআন হচ্ছে সৌভাগ্য ও সওয়াবের বিষয়। কুরআন হচ্ছে আল্লাহ্‌র শিক্ষা ও চিরন্তন শাসনতন্ত্র। তাই কুরআনকে সেই দৃষ্টিকোণ থেকে গ্রহণ ও অনুধাবনের চেষ্টা চালাতে হবে।   রমজানে কুরআন বুঝার জন্য আমাদের অতীত নেক পূর্বপুরুষরা যা করে গেছেন তাও আমাদের জন্য উৎসাহের কারণ হতে পারে। হজরত ওসমান (রা.) প্রতিদিন একবার কুরআন খতম দিতেন। ইমাম মালেক (র.) রমজান আসলে কুরআন পড়া ছাড়া বাকী সব কাজ বন্ধ করে দিতেন। তিনি শিক্ষা দান, ফতওয়া ও লোকজনের সাথে বসা বন্ধ করে দিয়ে বলতেন এটা হচ্ছে কোরআনের মাস।   ইমাম আবু হানিফা ও ইমাম শাফিয়ী (র.) রমজানে তারাবীর সালাত ছাড়াই ৬০বার কুরআন খতম করতেন। আবু হানিফা (র.) রমজানে শুধু কুরআন নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন। তিনি দিনে এক খতম, রাতে এক খতম পড়তেন। রমজানে খুব কমই কেউ তার সাথে কথা বলতে পারত।   রমজান এলে ইমাম জুহরী বলতেন, রমজান হচ্ছে কুরআন তিলাওয়াত ও খানা খাওয়ানোর মাস। ইমাম মালেক (রা.) রমজান এলে হাদীস অধ্যয়ন ও জ্ঞানীদের আসর ত্যাগ করতেন এবং শুধু কুরআন অধ্যয়নে ব্যস্ত থাকতেন। তাঁরা এ মাসকে সৃষ্টির সাথে বয়কট এবং স্রষ্টার সাথে সম্পর্কের মাস বলে অভিহিত করতেন।   এখানে আমরা পয়েন্ট আকারে কুরআন শিক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে দৃকপাত করছি—   কুরআন শিক্ষার গুরুত্ব   ১. কুরআন শিক্ষা ফরয : প্রত্যেক মুসলিমকে কুরআন পড়া জানতে হবে। যে নিজেকে মুসলিম হিসেবে দাবী করবে তাকে অবশ্যই কুরআন শিক্ষা করতে হবে। এ বিষয়ে আল্লাহ্‌র ঘোষণা :   ﴿ ٱقۡرَأۡ بِٱسۡمِ رَبِّكَ ٱلَّذِي خَلَقَ ١ ﴾ [العلق: ١]   অর্থ : ‘পড় তোমার রবের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন’ [সূরা আলাক : ১]।   কুরআন শিক্ষায় কোন প্রকার অবহেলা করা যাবে না। উম্মাতকে কুরআন শিক্ষার নির্দেশ দিয়ে ইবন মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,   تَعَلَّمُوا الْقُرْآنَ ، وَاتْلُوهُ�   অর্থ : ‘তোমরা কুরআন শিক্ষা কর এবং তিলাওয়াত কর’ [মুসান্নাফ ইবন আবী শাইবাহ : ৮৫৭২]।   ২. সালাত আদায়ের জন্য কুরআন শিক্ষা :   আল্লাহ তা’আলা ঈমানদার বান্দাহদের উপর প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয করেছেন। কুরআন তেলাওয়াত ছাড়া সালাত আদায় হয় না। সালাত আদায় করার জন্যও কুরআন শিখতে হবে। কুরআনে বলা হয়েছে,   ﴿ فَٱقۡرَءُواْ مَا تَيَسَّرَ مِنَ ٱلۡقُرۡءَانِۚ ﴾ [المزمل: ٢٠]   অর্থ : ‘অতএব তোমরা কুরআন থেকে যতটুকু সহজ ততটুকু পড়’ [সূরা আল-মুযযাম্মিল : ২০]।   এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,   �لاََ صَلاَةَ لِمَنْ لَمْ يَقْرَأْ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ�.   অর্থ : ‘যে ব্যক্তি সূরা ফাতেহা পড়ে না তার সালাতই হয় না’। [সহীহ বুখারী : ৭৫৬]   ৩. কুরআন প্রচারের জন্য শিক্ষা করা :   কুরআন মাজীদে কুরআন প্রচারের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সে নির্দেশের আলোকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কিরাম কুরআন প্রচার-প্রসারে নিজেদের নিয়োজিত করেছেন। যে ব্যক্তি কুরআন পড়তে জানে না, সে কীভাবে তা প্রচার করবে?সুতরাং কুরআন প্রচার-প্রসারে ভূমিকা পালন করার জন্য তা শিক্ষা করা একান্ত প্রয়োজন। কুরআনে বলা হয়েছে,   ﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلرَّسُولُ بَلِّغۡ مَآ أُنزِلَ إِلَيۡكَ مِن رَّبِّكَۖ ﴾ [المائ‍دة: ٦٧]   অর্থ : হে রাসূল, তোমার রবের পক্ষ থেকে তোমার নিকট যা নাযিল করা হয়েছে, তা পৌঁছে দাও [সূরা মায়িদাহ : ৬৭]।   ৪. কুরআন শিক্ষা অন্তরের প্রশান্তি :   মানব জীবনে অর্থ বা অন্যান্য কারণে জাগতিক তৃপ্তি আসলেও প্রকৃত তৃপ্তি ও শান্তি কুরআন শিক্ষার মাধ্যমেই সম্ভব। এ জন্য কুরআনে বলা হয়েছে,   ﴿ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَتَطۡمَئِنُّ قُلُوبُهُم بِذِكۡرِ ٱللَّهِۗ أَلَا بِذِكۡرِ ٱللَّهِ تَطۡمَئِنُّ ٱلۡقُلُوبُ ٢٨ ﴾ [الرعد: ٢٨]   অর্থ : ‘যারা ঈমান আনে, বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তাদের অন্তর আল্লাহর জিকির দ্বারা শান্তি লাভ করে। জেনে রাখ, আল্লাহর জিকির দ্বারাই অন্তরসমূহ শান্তি পায়’ [সূরা আর-রা‘দ : ২৮]।   ৫. হেদায়াত লাভের জন্য কুরআন শিক্ষা :   কুরআনের মাধ্যমেই হেদায়াতের সন্ধান পাওয়া যাবে। সে জন্য কুরআন থেকে হেদায়াত পাওয়ার জন্য কুরআন শিক্ষা করতে হবে। কুরআনে বলা হয়েছে,   ﴿ إِنَّ هَٰذَا ٱلۡقُرۡءَانَ يَهۡدِي لِلَّتِي هِيَ أَقۡوَمُ ﴾ [الاسراء: ٩]   অর্থ : ‘নিশ্চয় এ কুরআন এমন পথ-প্রদর্শন করে, যা সর্বাধিক সরল ও সঠিক’।   [সূরা বনি-ইসরাঈল : ০৯]   ৬. জান্নাতে যাওয়ার জন্য কুরআন শিক্ষা :   প্রত্যেক মু’মীনের সর্বোচ্চ কামনা হলো জান্নাতে যাওয়া। তাই জান্নাতে যাওয়ার জন্য কুরআন শিক্ষা করতে হবে। হাদীসে এসেছে,   �اَلصِّيَامُ وَالْقُرْآنُ يَشْفَعَانِ لِلْعَبْدِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يَقُولُ الصِّيَامُ أَيْ رَبِّ مَنَعْتُهُ الطَّعَامَ وَالشَّهَوَاتِ بِالنَّهَارِ فَشَفِّعْنِي فِيهِ وَيَقُولُ الْقُرْآنُ مَنَعْتُهُ النَّوْمَ بِاللَّيْلِ فَشَفِّعْنِي فِيهِ قَالَ فَيُشَفَّعَانِ�.   অর্থ : সিয়াম ও কুরআন কিয়ামাতের দিন মানুষের জন্য এভাবে সুপারিশ করবে যে, সিয়াম বলবে হে আমার রব, আমি দিনের বেলায় তাকে (এ সিয়াম পালনকারীকে) পানাহার ও যৌনতা থেকে বিরত রেখেছি। তাই তার ব্যাপারে তুমি আমার সুপারিশ কবুল কর। অনুরূপভাবে কুরআন বলবে, হে আমার রব, আমাকে অধ্যয়নরত থাকায় রাতের ঘুম থেকে আমি তাকে বিরত রেখেছি। তাই তার ব্যাপারে তুমি আমার সুপারিশ কবুল কর। তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, অতঃপর উভয়ের সুপারিশই কবুল করা হবে [মুসনাদ আহমাদ : ৬৬২৬]।   আসুন আমরা প্রত্যেকে বাকী যে ক’টা দিন রমজানের রোজা রয়েছে এর প্রত্যেকটি দিন হেলা না করে কাজে লাগাই। বেশী বেশী কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে নিজের কামাই হাসিল করি। সামগ্রিক জীবনে কুরআনের শিক্ষাটাকে কাজে লাগাই। আল্লাহ্‌ আমাদের সেই তওফিক এনায়েত করুন। আমীন।  

বিভাগের আরো খবর

You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MySQL server version for the right syntax to use near 'ORDER BY bn_content.ContentID DESC LIMIT 8' at line 1