সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

বহু বছর কেটে গেল কেউ কথা বলেনি ।। আন্দালিব রাশদী

প্রকাশিত: ০৮:০৫ এএম, এপ্রিল ১৯, ২০১৪
nnnnnnnnnnএকুশে সংবাদ : দুজনেই ঘনিষ্ঠ বন্ধু একজন গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ, অন্যজন মারিও বার্গাস য়োসা। দুজনেই সমাজতন্ত্রের সমর্থক। সমর্থক ফিদেল কাস্ত্রোর। কিন্তু ১৯৭৬ সালে মেক্সিকোর একটি সিনেমা হলে বার্গাস য়োসা ডান হাতের একটি প্রচণ্ড ঘুষি বসিয়ে দেন মার্কেজের বাঁ চোখে। তারপর থেকে দুজনেই নির্বাক। ১৯৮২ সালে মার্কেজ নোবেল সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন, ২০১০ সালের নোবেল পুরস্কারটি পেলেন মারিও বার্গাস য়োসা। কিন্তু নীরবতা ভাঙেননি কেউ। কেন? কী ছিল সেই বিবাদের নেপথ্যে? লাতিন আমেরিকা থেকে উঠে আসা ‘শতবর্ষের নির্জনতা’ পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ একটি উপন্যাস। কলম্বিয়ার কথাশিল্পী গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের লেখা এটি। মার্কেজের চেয়ে আট বছরের ছোট মারিও বার্গাস য়োসার হাতেও সৃষ্টি হয়েছে অবিস্মরণীয় কয়েকটি উপন্যাস। তবু মার্কেজের অবস্থান উজ্জ্বলতর একটি মঞ্চে। বার্গাস য়োসাও তা মানেন, মানেন বলেই তিনি মার্কেজের সাহিত্যকর্ম নিয়ে গবেষণা করেছেন এবং অভিসন্দর্ভ রচনা করেছেন। দুজনের মধ্যে বন্ধুত্বের নিবিড় সম্পর্ক। বার্গাস য়োসার ছেলে গ্যাব্রিয়েলের ধর্মপিতা হওয়ার জন্য যখন মার্কেজকে প্রস্তাব দেওয়া হলো, তিনি সানন্দে সম্মতি দিলেন। রাজনৈতিক বিশ্বাসের প্রশ্নে দুজনেরই সাম্যবাদে আস্থা শুরুতে প্রগাঢ় হলেও বার্গাস য়োসা ক্রমেই সরে এসেছেন তাঁর পুরোনো অবস্থান থেকে। রাজনৈতিকভাবে দুজনের পথ দুই দিকে চলে গেছে। কিন্তু সম্পর্কের টানাপোড়েন তা নিয়ে সৃষ্টি হয়নি। তাহলে কী নিয়ে? ১৯৭৬ সালে মেক্সিকোর একটি সিনেমা হলে বার্গাস য়োসা ডান হাতের একটি প্রচণ্ড ঘুষি বসিয়ে দেন মার্কেজের বাঁ চোখে। মার্কেজ পড়ে যান। ঘুষিতে চোখের চারপাশে কালো দাগ পড়ে যায়। ঘুষির আঘাত পাওয়ার দুই দিন পর তোলা সাদাকালো ছবিটিতে মার্কেজ হাসছেন, ছবিটি একই সঙ্গে বার্গাস য়োসার নির্মমতার সাক্ষ্যও দিচ্ছে। এই ঘুষির পর দুজনেই নির্বাক। নিজেদের মধ্যে আর কোনো যোগাযোগ নেই—কথা, ফোন, চিঠি কিছুই না। তারপরও অনেক বড় দুটি ঘটনা ঘটেছে। ১৯৮২ সালে মার্কেজ নোবেল সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন, ২০১০ সালের নোবেল পুরস্কারটি পান মারিও বার্গাস য়োসা। কিন্তু নীরবতা ভাঙেননি কেউ। য়োসা নোবেন পুরস্কার পাওয়ার বছর মার্কেজ লিম্ফোটিক ক্যানসারে আক্রান্ত। বার্গাস য়োসা পেরুর প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য নির্বাচন করে পরাজিত হয়েছেন। বার্গাস য়োসার নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্তিতে মার্কেজ অভিনন্দন জানাননি কিংবা কোনো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেননি। বিভিন্ন সময়ে সাক্ষাৎকার নিতে গিয়ে অনেকবারই দুজনকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, কেন এই ঘুষি? কেন আপনাদের এই কথা না-বলা? দুজনের কেউ মুখ খোলেননি। একটি সাক্ষাৎকারে য়োসা বলেছেন, ‘আমি মার্কেজসংক্রান্ত কোনো কথা বলব না। কোনো প্রশ্নের জবাব দেব না।’ য়োসা কর্তৃক মার্কেজের ঘুষি খাওয়ার পর তোলা সেই ছবি আরেকটি সাক্ষাৎকারে য়োসা বলেছেন, এটা গবেষকেরা খুঁজে বের করবেন। আভাস-ইঙ্গিতে তিনি একবার বলেছেন, ‘মার্কেজ আমার স্ত্রীর দিকে হাত বাড়িয়েছে।’ পল ড্যালেলির একটি প্রতিবেদনে ঈষৎ বিস্তৃত একটি বর্ণনা রয়েছে। উরুগুয়ের যাত্রী ও খেলোয়াড় নিয়ে আন্দিজ পর্বতমালায় একটি বিমান দুর্ঘটনায় পতিত হলে এবং দ্রুত উদ্ধার লাভের কোনো সম্ভাবনা দেখা না দেওয়ায় বেঁচে থাকার জন্য যাত্রীরা মৃত সহযাত্রীর মাংস খেতে শুরু করে। সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত রেনে কার্দোনার এই ছবির প্রিমিয়ার শোর আলো জ্বললে গার্সিয়া মার্কেজ দেখলেন, কয়েক সারি পেছনে বসা বার্গাস য়োসা। লাতিন আমেরিকান আচার অনুযায়ী তিনি বন্ধুকে আলিঙ্গন করতে গেলেন। কাছাকাছি আসতেই বাঁ চোখে খেলেন প্রচণ্ড ঘুষি, বার্গাস য়োসার রাইট হুক। সাদামুখো পেরুভিয়ান বললেন, ‘তুমি বার্সেলোনায় প্যাত্রিসিয়ার সঙ্গে যা করেছ, তার পরও আমার সঙ্গে আলিঙ্গন করার সাহস পেলে কোথায়?’ ঘুষি মারা ও ঘুষি খাওয়ার দৃশ্যটিতে একজন ফটোগ্রাফার তাঁর ক্যামেরা ক্লিক করেছিলেন, কিন্তু এ পর্যন্ত তাঁর সেই ছবি ছাপা হয়নি। মার্কেজ প্যাত্রিসিয়ার সঙ্গে কী করেছিলেন? প্যাত্রিসিয়া য়োসার স্ত্রী। একটি ভাষ্য হচ্ছে, রমণীমোহন বার্গাস য়োসা একজন সুইডিশ বিমানবালার সঙ্গে প্রেমে মজেছিলেন। যাত্রাপথে এই স্ক্যানডিনেভীয় রমণীর সঙ্গে তাঁর পরিচয়। বার্গাস য়োসা একসময় স্ত্রীকে ফেলে স্টকহোমে চলে যান। সে সময় প্যাত্রিসিয়া স্বামীর প্রিয় বন্ধু মার্কেজ ও বন্ধুপত্নী মার্সেদিসের শরণাপন্ন হন, কান্নাকাটি করেন। মার্কেজ ও তাঁর স্ত্রী তাঁকে সান্ত্বনা দেন এবং য়োসাকে তালাক দেওয়ার পরামর্শও দেন। কিন্তু পরে যখন প্যাত্রিসিয়া ও য়োসা আবার এক হয়ে যান, তখন তালাকের পরামর্শের কথাটি স্বামীকে জানান। তখন থেকে মার্কেজের ওপর এই ক্রোধ য়োসার। অন্য একটি সংক্ষিপ্ত বর্ণনা হচ্ছে, মার্কেজই প্যাত্রিসিয়ার দিকে হাত বাড়ান এবং এভাবে প্রিয় বন্ধুর প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করেন। মার্কেজ ঘুষি খাওয়ার পরও যখন কিছু বলেননি, একটি যৌক্তিক সন্দেহের সুযোগ থেকে যায়। একটি কালো চোখ, কিন্তু মুখভর্তি ধ্রুপদ হাসি—মার্কেজের এই ছবিটি তাঁর ৮০তম জন্মবার্ষিকীতে (৬ মার্চ ২০০৮) মেক্সিকোর সংবাদপত্র ‘লা জর্দানা’ প্রচ্ছদ হিসেবে ব্যবহার করে। ছবিটির স্বত্ব ফটোগ্রাফার রড্রিগো মোয়ার। তিনি বলেন, যেকোনোভাবেই হোক, এ রকম একটি ছবির অস্তিত্বের কথা পত্রিকাটি জেনে যায়। ‘আমি তাদের কাছ থেকে একটি ফোনে কল পাই। এই পত্রিকাটিতে আমিও সাময়িকভাবে কাজ করেছি এবং আমার সঙ্গে একটি সুসম্পর্কও রয়েছে। আমি দেখলাম, অনেক দিন তো পার হয়ে গেল, সুতরাং ছবিটি প্রকাশিত হতে পারে।’ মারিও বার্গাস য়োসা ছবিটি কেমন করে তুললেন—এই প্রশ্নের জবাবে রড্রিগো মার্কেজের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্বের কথা বলেন এবং জানান, ঘটনার দুই দিন পর মার্কেজ তাঁর বাড়িতে এসে ছবি তুলতে বলেন। এ রকম চেহারায় ছবি তোলা মুশকিল। আমার কাছে আরও কয়েকটি ছবি আছে সেদিনের। দেখলে মনে হবে, মেক্সিকান পুলিশ তাঁকে পিটিয়েছে। সাহিত্যিকেরাও রক্ত-মাংসের মানুষ। কাজেই নিজের মধ্যে বিবাদ-বিসম্বাদ ও ভুল বোঝাবুঝি হতেই পারে। তলস্তয় তাঁর প্রতিবেশী লেখক তুর্গেনিভকে গুলি করতে গিয়েছিলেন। পল ভ্যালেরি আর্তুর ৠাবোকে গুলি করেছিলেন। মাত্র দুই দিন আগে কেনা বন্দুকের প্রথম ব্যবহারটি করলেন বন্ধুর ওপর। হাতে গুলি লাগে র‌্যাবোর। ভ্যালেরির বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার মামলা দায়ের করা হয়। তাঁর দুই বছরের কারাদণ্ডও হয়। বিবাদ হয়েছে হারমান মেলভিল ও ন্যাথানেইল হথর্নের মধ্যে। দস্তয়ভস্কি তো তুর্গেনিভকে লড়াইয়ে আহ্বান করেছিলেন। দুজন কথা বলেননি ২০ বছর। অ্যালেন গিনেসবার্গ ও জ্যাক ক্যারুয়াক, হেমিংওয়ে ও ফিটজেরাল্ড, টম ওলফ ও জন আপডাইক, নবোকভ ও উইলসন, ট্রুম্যান ক্যাপোর্ট ও গোর ভিডালের বিবাদের এপিসোড অজানা নয়। একুশে সংবাদ ডটকম/এমপি/১৯-০৪-১৪

বিভাগের আরো খবর

You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MySQL server version for the right syntax to use near 'ORDER BY bn_content.ContentID DESC LIMIT 8' at line 1