সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

চা নয়, বাগান হয়ে উঠছে মূল্যবান

প্রকাশিত: ০৮:১১ এএম, এপ্রিল ১৩, ২০১৪
iiiiiiiiiiiiiiiiএকুশে সংবাদ : চা বাগানের একরপ্রতি সর্বশেষ ইজারা মূল্য ২০১১ সালে নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০০ টাকা। ২০ বছরের ইজারা থাকলে এতে সরকারের প্রাপ্তি মাত্র ১০ হাজার টাকা। ৩৫ বছর হলে ১৭ হাজার ৫০০ টাকা। আর শত বছর হলে ৫০ হাজার টাকা। কিন্তু কয়েক হাত ঘুরে ইজারকৃত এ বাগান হস্তান্তর মূল্য ৫০০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ছে। চা বাগানের লেনদেন নিয়ে বড় বিতর্ক ও আলোচনার সূত্র তৈরি হয় ২০০৬ সালে; যখন ব্রিটিশ কোম্পানি জেমস ফিনলে তাদের চা বাগান স্থানীয় কয়েক উদ্যোক্তার কাছে ২৮০ কোটি টাকায় বিক্রি করে। এরপর একে একে দেশের শীর্ষস্থানীয় সব করপোরেট গ্রুপ চা বাগানের প্রতি ঝুঁকতে থাকে। যদিও চা রফতানি থেকে বাংলাদেশের এখন আর তেমন কোনো আয় নেই। স্থানীয় চাহিদা পূরণের জন্য বরং শুরু হয়েছে আমদানি। বাগান উন্নয়নে কেউ বিনিয়োগ না করায় চায়ের মানও দিনে দিনে পড়ে যাচ্ছে। ফলে বাগান মূল্যবান হলেও ক্রমেই পড়ে যাচ্ছে চায়ের দাম। সর্বশেষ কয়েকটি নিলামে চায়ের ক্রেতা পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যায়নি। সংশ্লিষ্টদের মতে, দেশের নব্য ধনিকশ্রেণীর আগ্রহের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে চা বাগান। এজন্য প্রায়ই তারা বিনা কারণে কোটি কোটি টাকায় কিনছেন বাগান। তবে নামমাত্র মূল্যে ইজারা দেয়ায় আয়বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। বণিক বার্তার চট্টগ্রাম ও মৌলভীবাজার প্রতিনিধি জানান, গত এক যুগে সরকারের কাছ থেকে ইজারা নেয়া বহু বাগান বারবার মালিকানা হস্তান্তর হয়েছে। সরকারের কাছ থেকে ইজারা না পেলেও চট্টগ্রামের কাইয়াছড়া-ডলু টি গার্ডেন (৬৮৮ হেক্টর), কর্ণফুলী-ঠাণ্ডাছড়ি টি গার্ডেন (২৬৬ হেক্টর), চাঁদপুর-বেলগাঁও টি গার্ডেন (১ হাজার ৪০৫ হেক্টর), রামগড় টি গার্ডেন (৫৬৬ হেক্টর) মূল ইজারাদারদের কাছ থেকে আবার ইজারা নিয়েছে বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) ব্র্যাক। ব্র্যাকের কেনার আগে কর্ণফুলী টি গার্ডেন ছিল আবদুল কাদের চৌধুরী অ্যান্ড সন্সের মালিকানায় আর বাঁশখালী টি গার্ডেনের মালিক ছিলেন রাগিব আলী। মালিকানায় নিয়ে বাগানগুলোর নাম পরিবর্তন করে ব্র্যাক। এসব বাগানের মধ্যে চাঁদপুর বেলগাঁও বাগানের নামকরণ করা হয়েছে ব্র্যাক-বাঁশখালী টি কোম্পানি লিমিটেড, কর্ণফুলী টি গার্ডেনের নাম দেয়া হয়েছে ব্র্যাক কর্ণফুলী টি কোম্পানি লিমিটেড আর কাইয়াছড়া-ডলু টি গার্ডেনের নামকরণ হয়েছে ব্র্যাক কাইয়াছড়া-ডলু টি কোম্পানি লিমিটেড। ঠিক একইভাবে মৌলভীবাজারের রহমানিয়া টি এস্টেট কিনেছে প্যারাগন গ্রুপ ও হামিদিয়া টি এস্টেট কিনেছে আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের অর্থবিষয়ক পরিচালক মাহতাবুর রহমান। এছাড়া মৌলভীবাজারেরই ২ হাজার ৯৮১ একরের শাহবাজপুরের চা বাগান কিনেছে স্কয়ার গ্রুপ আর ২ হাজার ২০০ একরের রত্না চা বাগান কিনেছে ভাইটালেক্স গ্রুপ। অন্যদিকে হা-মীম গ্রুপ কিনেছে ৪০০ একরের হলিচর চা বাগান ও ১ হাজার ৭০০ একরের লোহাইনি চা বাগান। ২০১০ সাল থেকে এসব বাগানের মালিকানা হস্তান্তর হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০০০ সালের পর থেকে বাগানের মালিকানা পরিবর্তনের চিত্র দেখলেই চা বাগানের প্রতি ধনকুবেরদের আগ্রহের বিষয়টি দেখা যায়। চা থেকে এখন আর সে পরিমাণ আয় হচ্ছে না জেনেও চা বাগানে আগ্রহী ব্যবসায়ীরা। চা ব্যবসায় থাকলে সামাজিক মর্যাদার পাশপাশি কম সুদে কৃষিঋণ সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে। ঋণ সুবিধা পেলেও চা শিল্পে বিনিয়োগের পরিবর্তে অন্য ব্যবসায় বিনিয়োগ নিয়ে যাচ্ছে। ফলে বিশ্বে চা উৎপাদনকারী দেশগুলোর তুলনায় হেক্টরপ্রতি অর্ধেক উৎপাদন করতে পারছে বাংলাদেশ; যার কারণ চা এখন আর ব্যবসা নয়। বরং ব্যবসায়ীদের অলঙ্কারে পরিণত হয়েছে। তবে এর সঙ্গে কিছুটা ভিন্নমত পোষণ করেন চা বাগান মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ চা সংসদের সভাপতি সাফওয়ান চৌধুরী। তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, অন্য শিল্প খাতের মতো চা শিল্পে চাইলেই বিনিয়োগ করা সম্ভব নয়। যত্রতত্র চা বাগান গড়ে তোলা যায় না। চা বাগানের জন্য একটি নির্দিষ্ট জায়গা প্রয়োজন। দেশে নতুন নতুন চা বাগান সৃজনের মতো উপযোগী ভূমিও নেই। ফলে চা শিল্পের ব্যবসায়ীরা নতুন করে বিনিয়োগ করছেন না। তাই চা বাগান হাতবদল হচ্ছে। এদিকে বিক্রি হয়ে যাওয়া বেশ কয়েকটি চা বাগানের ব্যবস্থাপকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শ্রমিক মজুরি বৃদ্ধি, তেল, বিদ্যুৎ ও কীটনাশকের মূল্যবৃদ্ধির কারণে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় চা চাষ লাভজনক হচ্ছে না। আমাদানি বেড়ে গিয়ে নিলামে দেশী চা অবিক্রীত থেকে যাচ্ছে। এসব কারণেই বাগানগুলো বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করে নাম প্রকাশ না করার শর্তে চা বোর্ডের ঊর্ধ্বতন একাধিক কর্মকর্তা বলেন, শর্টস পরে ঘুরে বেড়ানো এবং অবকাশযাপনের জন্য চা বাগান বর্তমানে ব্যবসায়ীদের অন্যতম অকর্ষণে পরিণত হয়েছে। সরকারিভাবে প্রতি একর চা বাগান নামমাত্র মূল্যে ইজারা দেয়া হলেও ব্যবস্থাপনা পরিবর্তনে কোটি টাকায় এর হাতবদল হচ্ছে। একদিক থেকে সরকারের জমি ইজারা বাবদ রাজস্ব আয় কম হচ্ছে, অন্যদিকে প্রকৃত বিনিয়োগকারীর অভাবে চা শিল্পের উন্নয়ন থমকে গেছে। এদিকে ইজারামূল্য কম হওয়ায় চা চাষের জন্য বরাদ্দকৃত বেশির ভাগ জমি ব্যবহার হচ্ছে অন্যান্য কাজে। বাংলাদেশ চা বোর্ডের তথ্যানুযায়ী দেশে বিভিন্ন জেলার চা বাগানগুলোয় মোট জমির পরিমাণ ১ লাখ ১১ হাজার ৮৭৬ দশমিক ৫৩ হেক্টর (পঞ্চগড়ের ক্রয়কৃত জমি ছাড়া)। এর মধ্যে চাষ হয় মাত্র ৫১ হাজার ৮৯৩ দশমিক ৮৪ হেক্টর জমিতে; যা মোট জমির মাত্র ৪৫ শতাংশ। বাকি ৫৫ শতাংশ জমি রয়ে গেছে চা উৎপাদনের বাইরে। দীর্ঘদিন ধরে চা শিল্প নিয়ে কাজ করছে সোসাইটি ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট (সেড)। প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক ফিলিপ গাইন বলেন, বর্তমানে চা বাগানে একরপ্রতি গড় উৎপাদন ৪১২ কেজি। অর্থাৎ এক একর জমির যে ইজারামূল্য, তা মাত্র দুই কেজি চায়ের দামের সমান। এটা হাস্যকর। সরকার যাতে ন্যয্যমূল্য পায়, সেজন্য সংশ্লিষ্টদের মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন। আর বাগানগুলোকে ছোট ছোট অংশে ভাগ করে কৃষকদের মধ্যে বরাদ্দ দিতে হবে। একুশে সংবাদ ডটকম/এমপি/১৩-০৪-১৪

বিভাগের আরো খবর

You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MySQL server version for the right syntax to use near 'ORDER BY bn_content.ContentID DESC LIMIT 8' at line 1