সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

মহাকর্ষ তরঙ্গের সন্ধান লাভ

প্রকাশিত: ১০:১১ এএম, এপ্রিল ১২, ২০১৪
একুশে সংবাদ : ঠিক কী থেকে সৃষ্টি হলো এই ব্রহ্মাণ্ড বা মহাবিশ্বের? কতটা সময় লেগেছিল গ্রহ-নক্ষত্র-ছায়াপথে ভরা মহাবিশ্ব তৈরি হতে? মহাজাগতিক ঘর্ষণ বা বিগব্যাং ঠিক কত বছর আগে হয়েছিল? এসব নিয়ে আছে নানা জল্পনা-কল্পনা। বিগব্যাংয়ের পরে মহাকাশ থেকে মহাকর্ষের যে তরঙ্গ প্রবাহিত হয়, তা এবার প্রথমবারের মতো আবিষ্কৃত হয়েছে। এর থেকে মহাবিশ্বের সৃষ্টিতত্ত্ব সম্পর্কে অনেক অজানা রহস্যের সমাধান সম্ভব হবে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। এগুলো নিয়ে লিখেছেন প্রদীপ সাহা হার্ভার্ড-স্মিথসোনিয়ান সেন্টার যে আবিষ্কারের কথা জানিয়েছে, তাতে জানা যাচ্ছে চোখের পলক পড়তে যত সময় লাগে, তার থেকেও কম সময়ে মহাবিশ্বের স্ফীতি ঘটেছিল ১০০ ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন গুণ। এক ট্রিলিয়ন মানে হলো একের পাশে ১২টি শূন্য বসালে যে বিশাল সংখ্যা হয়, সেটি। আর তাতে কত সময় লেগেছিল? দশমিকের পর ৩৫টি শূন্য বসিয়ে তারপর এক বসালে যে সংখ্যা পাওয়া যায় 'মাত্র' তত সেকেন্ড। প্রকল্পের বিজ্ঞানী আভি লোয়েবের মতে, 'এই আবিষ্কার শুধু মহাজাগতিক স্ফীতির কথাই বলে না। এর থেকে জানা যায়, কখন এটা হয়েছিল এবং কতটা শক্তিশালী ছিল।' 'ব্যাকগ্রাউন্ড ইমেজিং অব কসমিক এক্সট্রাগ্যালাকটিক পোলারাইজেশন-টু' সংক্ষেপে 'বাইসেপ-টু' নামে একটি প্রকল্প বেশ কয়েক বছর ধরেই কাজ করে চলেছে মহাবিশ্ব সৃষ্টির রহস্য সন্ধানে। দক্ষিণ মেরুতে অবস্থানরত 'বাইসেপ-টু' টেলিস্কোপের সাহায্যে এই আলোক তরঙ্গ নির্ণয় করা সম্ভব হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, অন্য বিশেষজ্ঞদের দ্বারা স্বীকৃত হলে এই গবেষণাটি নোবেল পুরস্কারের জন্য পাঠানো হবে। সময় ব্যবধানের সঙ্গে সঙ্গে তরঙ্গগুলোর পরিবর্তনকে বিগব্যাংয়ের প্রথম কম্পন বলে বর্ণনা করেছেন বিজ্ঞানীরা। আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্ব এবং কোয়ান্টাম মেকানিক্সের সঙ্গে যোগাযোগের ভিত্তিতে এই তথ্যের নিশ্চয়তা নির্ধারণ করেছেন বিজ্ঞানীরা। নাসা জানিয়েছে, এই আবিষ্কার শুধু যে মহাবিশ্বের রহস্য সম্পর্কে নিশ্চিত করবে তা-ই নয়, তার সঙ্গে যে শক্তি স্থান ও সময়কে বিভক্ত করছে সে সম্পর্কেও ধারণা পাওয়া যাবে। গবেষণার প্রধান হার্ভার্ড-স্মিথসোনিয়ান সেন্টারের জ্যোতির্পদার্থবিদ জন কোভাক জানান, 'এই সংকেত নির্ধারণ আজকের মহাজাগতিক গবেষণায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার। তবে এর পেছনে অনেক মানুষের অনেক শ্রম ব্যয় হয়েছে।' 'বাইসেপ-টু' টেলিস্কোপটির কাজ ছিল ছায়াপথের বাইরে আকাশের 'সাউদার্ন হোল' বা 'দক্ষিণাঞ্চলীয় গহ্বর' থেকে ধূলিকণা বা ছায়াপথের অতিরিক্ত কোনো উপাদানের দেখা পাওয়া যায় কি-না তা পর্যবেক্ষণ করা। বিজ্ঞানীরা যেটা প্রথমবার দেখতে পেয়েছেন, সেটি হলো 'কসমিক মাইক্রোয়েভ ব্যাকগ্রাউন্ড' (সিএমবি) যা একটি বিশেষ ধরনের পোলারাইজেশন। এই মহাকর্ষীয় তরঙ্গ আসছে ইনফ্লেশন বা মহাজাগতিক স্ফীতি থেকেই। 'সিএমবি' হলো মহাজগতের সেই স্তর যা পৃথিবী থেকে দেখা যায়। এই স্তরের যে বিকীরণ সেগুলো শুরু হয়েছিল বিগব্যাং বা মহাবিশ্ব সৃষ্টির বিস্ফোরণের ৩ লাখ ৮০ হাজার বছর পর থেকে। এর আগে মহাবিশ্ব ছিল উত্তপ্ত, কিন্তু নিকষ অন্ধকার, কোনো আলোর বিকিরণ হতো না। টেলিস্কোপে এই সিএমবির যে ছবি ধরা পড়েছে, তাতেই দেখা গেছে ওই বিশেষ ধরনের পোলারাইজেশন। আর এতেই তোলপাড় বিশ্বের জ্যোতির্বিজ্ঞানী মহল। কেউ কেউ তো বলেই ফেলেছেন, আবিষ্কারটি নোবেল পুরস্কারের যোগ্য। বিগব্যাংয়ের ফলে যে 'কসমিক মাইক্রোওয়েভ' বা মহাজাগতিক বেতার তরঙ্গ সৃষ্টি হয় তা পর্যবেক্ষণের চেষ্টা চালাচ্ছিলেন বিজ্ঞানীরা। সে সময়ই তাদের চোখে আসে ছোট তরঙ্গের চাঞ্চল্য। ওই স্থানটির বায়ু ছিল ভীষণ শুষ্ক। মিনেসোটা ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক ক্লেম প্রাইকে জানান, 'এ ধরনের জিনিসের সন্ধান পাওয়াটা আসলেই অভূতপূর্ব।' ধারণা করা হয়, বিগব্যাংয়ের ঠিক পরে মহাবিশ্ব ছিল নানা পদার্থের সংমিশ্রণে একটি গরম স্যুপের মতো, যা ঠাণ্ডা হতে লেগেছিল প্রায় ৩ লাখ ৮০ হাজার বছর। এর পরই ওই উপাদানগুলো অণুতে পরিবর্তিত হয়, সৃষ্টি হয় নক্ষত্র এবং ছায়াপথ। এর কয়েকশ' কোটি বছর পর গ্যাস এবং ধূলিকণাসমৃদ্ধ গ্রহের সৃষ্টি হয়, যা নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে ঘুরতে থাকে। এভাবেই ধীরে ধীরে মহাবিশ্ব বিস্তার লাভ করে। বিজ্ঞানীরা বলেছেন, তিন বছর ধরে সব তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে তারা দেখেছেন এই গবেষণায় কোনো ভ্রান্তি ছিল কি-না। ক্লেম প্রাইকের কথায়, কীভাবে মহাবিশ্ব সৃষ্টি হলো, আমরা কোথা থেকে এসেছি_ এসব প্রশ্নের উত্তর হয়তো পাওয়া যাবে এ থেকে। তাছাড়া কীভাবে এই স্ফীতি ঘটল এবং প্রক্রিয়াটি কতটা শক্তিশালী তার জবাবও হয়তো পেয়ে যাব আমরা। প্রায় ১১ বছর অনুসন্ধানের পর অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি রিসার্চ স্কুলের গবেষকরা মহাবিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন নক্ষত্রের সন্ধান পেয়েছেন। প্রধান গবেষক ড. স্টেফান কেলার বলেন, 'স্প্রিং অবজারভেটরি থেকে স্কাইম্যাপার টেলিস্কোপের মাধ্যমে তারা এর দেখা পান। ১৩.৭ বিলিয়ন বছর আগে বিগব্যাং হওয়ার ঠিক পরেই এই নক্ষত্রের জন্ম। পৃথিবী থেকে এই নক্ষত্রের দূরত্ব প্রায় ৬ হাজার আলোকবর্ষ। মহাবিশ্ব সৃষ্টির রহস্য সম্পর্কে এটি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দিতে পারে। এর ফলে আমাদের জীবন ধারণের জন্য উপযোগী যেসব পদার্থ আশপাশে রয়েছে সেগুলো কোথা থেকে এলো, সে সম্পর্কেও ধারণা পাওয়া যেতে পারে।' কেলার জানান, 'নক্ষত্রটি বিশ্লেষণ করে আমরা নিশ্চিত হয়েছি এটি প্রথম প্রজন্মের নক্ষত্র। এর ভর সূর্যের ভরের ৬০ গুণ। ধারণা করা হতো, মহাকাশে লোহার আধিক্যের কারণে বিস্ফোরণের মাধ্যমে নক্ষত্রের মৃত্যু হতো। এই নক্ষত্রের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, সেই দূষণ খুব কম মাত্রায় হয়েছে। হালকা মাত্রার উপাদান অর্থাৎ কার্বন বা ম্যাগনেসিয়াম দ্বারা এটি দূষিত হয়েছে। এখানে লৌহের কোনো উপাদান পাওয়া যায়নি। এর অর্থ প্রথম দিককার নক্ষত্রগুলো কেবল বিশুদ্ধ হাইড্রোজেন এবং হিলিয়ামের তৈরি।' এই নক্ষত্রের আবিষ্কারে আরও কয়েকটি জিনিসও জানা গেছে। এক একটি নক্ষত্র পেঁয়াজের মতো অর্থাৎ এর ভেতরে নানা স্তর রয়েছে। আর লৌহের মতো ভারী পদার্থ থাকে একদম ভেতরে। তাই সুপারনোভার সময় কেবল বাইরের স্তরে থাকা কার্বন এবং অল্প পরিমাণ ম্যাগনেসিয়াম নিঃসৃত হয়। একুশে সংবাদ/mp

বিভাগের আরো খবর

You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MySQL server version for the right syntax to use near 'ORDER BY bn_content.ContentID DESC LIMIT 8' at line 1