সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

করনীতিতে পরিবর্তন আনা জরুরি হয়ে পড়েছে

প্রকাশিত: ০৯:৩৯ এএম, এপ্রিল ১২, ২০১৪
একুশে সংবাদ : বাংলাদেশে অতি অল্প সময়ে অল্প কিছু লোক অভাবনীয় ধনী হয়েছে। ধনী হওয়ার ক্ষেত্রে অধিকাংশ ক্ষেত্রে কাজ করেছে সরকারি আনুকূল্য। অতি স্বাধীনভাবে সৎ ব্যবসা বা অন্য অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড করে খুব কম মানুষই ধনী হয়েছে। সরকারি পদগুলোকে অবাধে অপব্যবহার করে অনেকে ধনী হয়েছে। সত্য হলো, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অনেক ক্ষেত্রেই দুর্নীতিকে বাধা দিতে অক্ষম হয়েছে। অর্থের উৎস সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ না করার সরকারি প্রজ্ঞাপন দুর্নীতি করে জোগাড় করা অর্থকে লুকাতে সাহায্য করে। দুর্নীতিবাজরা অর্থকে লুকাতেও চায় না। তারা কালো টাকা সাদা করার সরকারি আদেশের পেছনে আশ্রয় গ্রহণ করে। অন্যত্র বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অর্থের উৎসকে যেহেতু জিজ্ঞাসা করার বিধান অনেক দিন থেকেই ছিল না, সেহেতু লুণ্ঠনের অর্থকে তারা বিনিয়োগ হিসেবে দেখিয়ে রাতারাতি ধনী হয়ে গেছে। ধনী তারা এতটাই হয়েছে যে, এখন তাদের চোরাই স্তূপীকৃত অর্থ দেশের বাইরেও চলে যাচ্ছে। আমাদের কি কোনো হিসাব আছে— প্রতি বছর বাংলাদেশের ধনীরা কী পরিমাণ অর্থ দেশের বাইরে নিয়ে যাচ্ছে? ধনী লোকদের অর্থের কোনো বর্ডার নেই। তারা এক অর্থে গ্লোবাল সিটিজেন এবং তাদের অর্থও গ্লোবাল। তবে তারা ক্ষমতার অপব্যবহারপূর্বক  কর না দিয়ে অন্যদের ন্যায্য অংশ থেকে বঞ্চিত রেখে অর্থ স্তূপ করছেন বাংলাদেশে। ধনী দেশগুলো অর্থের জন্য নিরাপদ স্বর্গ হিসেবে কাজ করছে। বাংলাদেশের মতো দেশগুলো চাইলেও তাদের অর্থ কারা লুণ্ঠন করে বিদেশে নিয়ে যাচ্ছে, তা জানতে পারবে না। আমাদের জন্য একমাত্র ভালো পথ হলো দেশের অর্থনীতিতে আশাবাদ জাগ্রত রাখা। লোকদের মনে এ ধারণা দিতে হবে যে, তাদের অর্থ এবং জীবন এ দেশে শুধু নিরাপদই নয়, বরং এ দেশে অতি সত্ভাবে ব্যবসা ও বিনিয়োগ করলে তার সুফল তারাই পাবে। দেশের মধ্যে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে নেই। অস্থিরতা থাকলে অবশ্যই অর্থ পালাবে। ভালো হতো দেশে যদি একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক ধারাকে জবাবদিহিতার মধ্যে থেকে সামনে এগিয়ে নেয়া যেত। অনেকে সংসদ সদস্য হতে চান শুধু আর্থিক সুবিধা নেয়া এবং আদায় করার জন্য। যদিও আমাদের অনেকের চোখে তাদের জন্য দেয় বিশেষ সুবিধাগুলো বড় ডিসট্রেসফুল বলে মনে হয়। সংসদ সদস্যদের জন্য যদি এটা থাকে যে, রাষ্ট্র থেকে সব নাগরিক সমান সুযোগ পাবে, তাহলে শুধু সংসদ সদস্যদের জন্য বিনা শুল্কে বিলাসী গাড়ি আনার সুযোগগুলো কেন বার বার দেয়া হচ্ছে? সৎ নাগরিকরা প্রশ্ন করছে, এ দেশে বুঝি সত্ভাবে পরিশ্রম করে ধনী হওয়া কঠিন হয়ে গেছে। দেশের অর্থনীতিতে দ্রুত আয় বৈষম্য বাড়ছে। আয় বৈষম্য যে হারে বাড়ছে, সে হারে কিন্তু বিনিয়োগ হচ্ছে না। এর অন্য অর্থ হলো, ধনী লোকেরা তাদের জমায়িত অর্থকে বিনিয়োগ না করে হয় অতিরিক্ত ভোগে ব্যয় করছে, নতুনবা আয়কে অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে। ফলে লুণ্ঠন এবং দুর্নীতির মাধ্যমে জমায়িত অর্থও দেশের অর্থনীতির উন্নতির ক্ষেত্রে তেমন কাজে আসছে না। ট্যাক্স হলিডে বা ট্যাক্স কনসেশন  দেয়া তখনই যুক্তিযুক্ত হয়, যখন কাঙ্ক্ষিত খাতে বিনিয়োগ উৎসাহিত হয়। আমাদের এ অর্থনীতিতে ট্যাক্স হলিডে বা কর অবকাশ সুবিধাটা ব্যাপক হারে আরো ব্যবহার হয়েছে। সময় হয়েছে এ সুবিধা পুনর্বিবেচনা করার। অন্য আরেকটা বিষয় হলো, বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অর্থের উৎস সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করার বিধান না থাকায় অনেক উদ্যোক্তা শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির আয়কে সুকৌশলে সরিয়ে নিয়ে একাধিক প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি স্থাপন করেছে। একটা প্রশ্ন এসব উদ্যোক্তাকে করা উচিত যে, তাদের অধীনে স্থাপিত শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটি যদি এত লাভই না করে বা বছরের পর বছর ওই কোম্পানির স্থিতিপত্রে লোকসান দেখানো হয়, তাহলে তাদের অন্য ব্যবসায়িক স্থাপনাগুলো নির্মাণের জন্য ইকুইটি ক্যাপিটালটা কোত্থেকে এল? অবস্থা হলো, অনেক উদ্যোক্তার একই মালিকানায় মাল্টিপল কোম্পানি গড়ে উঠেছে, কিন্তু শেয়ারবাজার থেকে যে কোম্পানির জন্য তারা অর্থ নিয়েছিলেন, সেই কোম্পানির ডিভিডেন্ড দেয়া হচ্ছে যিকঞ্চিৎ অথবা ওই কোম্পানিকে রুগ্ণ করে রাখা হয়েছে। আয়কে লোকসান এবং লোকসানকে আয় হিসেবে দেখানোর ক্ষেত্রে একশ্রেণীর অডিটর এসব ঠকবাজি উদ্যোক্তার সঙ্গে অডিটিংয়ের নামে সহযোগিতা করে। রাজস্ব বোর্ড ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের উচিত, অডিট ফার্মগুলোকে জবাবদিহিতার মধ্যে আনতে প্রয়োজনীয় আইন তৈরি করা। আমাদের মনে রাখতে হবে, যাদেরকে ভুয়া সনদ দেয়ার ক্ষেত্রে শাস্তির ব্যবস্থাসংবলিত আইন পাস করতে হবে তাদের জিজ্ঞাসা করে কোনোদিনই সেই আইন পাস করা যাবে না। প্রস্তাবিত ফিন্যান্সিয়াল রিপোটিং কাউন্সিল (এফআরসি) অ্যাক্ট সম্পর্কে সরকার অনেকবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আশা করি, আইনটি পাস করানোর জন্য অবশ্যই দ্রুত সংসদে উপস্থাপন করা হবে। রাজস্ব আহরণ এবং শেয়ারবাজারে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের প্রতি ন্যায়বিচার করার ক্ষেত্রে এফআরসি অ্যাক্ট হবে অতি গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে অডিট রিপোর্টের যে হাল, তার অধিকাংশই কেউ বিশ্বাস করে না। ওসবের ভিত্তিতে কর আদায় করতে গেলে সরকার যথাযথ কর পাবে না। বর্তমানে ডিভিডেন্ড আয় ট্যাক্সের আওতায় আছে। এক্ষেত্রে একটা সুপারিশ হলো, ব্যক্তিপর্যায়ে ডিভিডেন্ড আয়ের ওপর কর আরোপের ক্ষেত্রে কিছুটা ছাড় দেয়া আবশ্যক। পূর্বে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত ডিভিডেন্ড আয় করমুক্ত ছিল। অন্য বিকল্প ব্যবস্থা হতে পারে, ডিভিডেন্ড আয়ের ওপর সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ আয়কর নির্ধারণ করা যেতে পারে। এতে করে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা টিআইএন নম্বর দিয়ে এ কর দিতে উৎসাহবোধ করবেন। বিদেশী কোম্পানির অনেকগুলোই শেয়ারবাজারে নেই। এর অর্থ হলো, তারা এ দেশে চুটিয়ে ব্যবসা করলেও এ দেশের জনগণকে মালিকানা দিতে নারাজ। বিশ্বের আর কয়টি দেশে এসব বহুজাতিক কোম্পানি জনগণকে মালিকানা না দিয়ে ব্যবসা করতে পারছে? এক্ষেত্রে শেয়ারবাজারে না আসলে বাড়তি করারোপ করা যায় কিনা, রাজস্ব বোর্ড এবং সরকার তা ভেবে দেখতে পারে। আজ এ দেশে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে কীভাবে শেয়ারবাজারে আনা হয়েছে, সেটাও রাজস্ব বোর্ড দেখতে পারে। অনুরোধ করে তাদের শেয়ারবাজারে আনা যাবে না। এক্ষেত্রে বাধ্যকতার বিষয়টি বিবেচনায় আনা উচিত। সিটিব্যাংক এনএ, ইউনিলিভার, সিমেন্স যদি অন্য দেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হতে পারে, তাহলে আমাদের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হতে অসুবিধা কোথায়? আসলে তারা আমাদের জনগণকে অবজ্ঞা করে এবং আমাদের পলিসি মেকারদের অমনোযোগী মনে করে। তারা ভাবে যে, এ দেশে মালিকানার বিষয়টি নিয়ে যেহেতু মাথাব্যাথা নেই, সে জন্য এটি এড়িয়ে গিয়ে তারা ব্যবসা করতে পারবে। বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর বিভিন্নভাবে অর্থ পাচারের বিষয়টি রাজস্ব বোর্ডের গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত। উন্নত দেশগুলো ট্রান্সফার প্রাইসিং রোধ করতে তাদের মধ্যে বিভিন্ন চুক্তি করে নিয়েছে। আমাদের দেশে পূর্বে এ ইস্যুর ব্যাপারে সরকার উদাসীন ছিল। বর্তমানে এ লক্ষ্যে একটা আইন হয়েছে বটে, তবে তার প্রয়োগ দরকার। অন্য বিষয় হলো, বহুজাতিক কোম্পানিগুলো কেন এ দেশে আয় করে কম ট্যাক্সের দেশে অর্থ পাচার করছে, সেটি খতিয়ে দেখতে হবে। কর হার বেশি থাকলে সব কোম্পানিই আয়কে কম ট্যাক্সের দেশে নিয়ে গিয়ে সেখানে আয় প্রদর্শন করবে। ট্রান্সফার প্রাইসিং নামের অর্থ পাচার রোধ করতে হলে বাংলাদেশকে করপোরেট ট্যাক্স হার বা কোম্পানি নেট আয়ের ওপর দেয় কর হারকে হ্রাস করার দিকে মনোযোগ দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, ইউরোপসহ অন্য অনেক দেশে করপোরেট আয়কর আমাদের দেশ থেকে কম। রাজস্ব বোর্ডের উচিত হবে, কোম্পানিগুলো কর্তৃক উচ্চহারে ডিভিডেন্ড ঘোষণা করাকে উৎসাহ দেয়া। কোম্পানিগুলো বেশি ডিভিডেন্ড দিলে রাজস্ব বোর্ডও বেশি কর পাবে। অন্যদিকে শেয়ারবাজারে ঝুঁকি নিয়ে যারা বিনিয়োগ করছেন তারাও লাভবান হবেন। অন্য অনেক দেশে এখন ব্যয়ের ওপর কর হার বাড়ানো হচ্ছে। আমাদের দেশেও ধনী লোকেরা যেসব পণ্য বা সেবা ভোগ করছে, ওইগুলোর ওপর বর্ধিত হারে ভ্যাট বসানো যেতে পারে। যারা বিএমডব্লিউ, মার্সিডিস বেঞ্জ, এসইউভি জাতীয় গাড়িগুলোয় চড়ছেন, তাদের কর দেয়ার অবস্থা কী? জেলা-উপজেলা পর্যায়ে অনেক মানুষ এখন ধনী হয়েছে। তারা ঠিকমতো কর দিচ্ছে তো? রাজস্ব আয়করের অন্য নীতি হওয়া উচিত বেশি বেশি লোককে করের আওতায় আনা। একুশে সংবাদ/এমপি

বিভাগের আরো খবর

You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MySQL server version for the right syntax to use near 'ORDER BY bn_content.ContentID DESC LIMIT 8' at line 1