সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

২০০ বছরের প্রাচীন নওগাঁর শালবন

প্রকাশিত: ০৬:৩০ এএম, এপ্রিল ৬, ২০১৪
eeeeeeeeeeএকুশে সংবাদ :  উত্তরাঞ্চলের বরেন্দ্রভূমি হিসেবে খ্যাত ভারতের সীমান্ত ঘেঁষা নওগাঁর ধামইরহাটে অবস্থিত প্রায় দুইশ বছরের প্রাচীন এক শালবন। এ বরেন্দ্রভূমির বিশাল শালবনটি ৬৫২ একর (১৯৫৬ বিঘা) এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। প্রকৃতির অপূর্ব নিদর্শন আর চোখ জুড়ানো সৌন্দর্যের প্রাচুর্য নিয়ে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে চিরসবুজের নজরকাড়া সৌন্দর্য অকাতরে বিলিয়ে যাচ্ছে এই শালবনটি। তাই মন জয় করা এই শালবনে প্রান জুড়াতে আসেন দূর-দূরান্তের অনেক পর্যটক। এই বিশাল শালবনটিকে ঘিরে লুকিয়ে আছে দেশের পর্যটন ক্ষেত্রের বিশাল সম্ভাবনা। এ শালবনটি গত ২০১১ সালে সরকার জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করেন। বনের পথ যেখানে শেষ সেখানেই ভারত সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়া। কাছাকাছি সীমান্তের পিলার। বেড়ার ওপারে দেখা যায় ভারতীয়দের কৃষি-কর্ম আর বিএসএফের টহল। এই বনের অন্যতম আকর্ষণ শালগাছকে জড়িয়ে উঠে গেছে হিংলো লতা, অনন্তমূল ও বনবড়ইসহ নানা লতাগুল্ম আর বনফুল। বনের ভেতরে প্রবেশ করতেই নাকে ভেসে আসে নাম না জানা নানা রকমের বনফুলের মিষ্টি গন্ধ। আর মাঝে মাঝে আছে ঘন বেত বন। বেত গাছের সবুজ চকচকে চিকন পাতায় চোখ জুড়িয়ে যায়। এই বনে আছে সাপ, শিয়াল, খরগোস, বনবিড়াল, বনরুই ও বেজিসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রানী আর পাখি। পাখির কলতানে মুখরিত সমগ্র শালবন। নওগাঁ শহরের বালুডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড থেকে ৬০ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে যেতে হবে জেলার ধামইরহাট উপজেলা সদরে। পথে পড়বে মহাদেবপুর, পত্মীতলা উপজেলার সদর। ধামইরহাট থেকে মাত্র ৬কিলোমিটার পথ পেরুলেই দেখা মিলবে প্রকৃতির আপন খেয়ালে সাজানো নয়নাভিরাম সেই প্রাচীন শালবনটি। ৬কিলোমিটার রাস্তা জুড়ে লালমাটির রাঙ্গাপথ। দূরে থেকেই নজরে পড়বে সেই প্রচীন শালবনটি। বনের দিকে যতই এগিয়ে যাবেন ততই অনুভূতি হবে রোমাঞ্চকর। পথের ধারে ছোট ছোট বসতবাড়ি সেগুলিতে আদিবাসীদের বসবাস। চোখে পড়বে বরেন্দ্রভূমির চারিদিকে শুধু উঁচু-উঁচু শালগাছ। এই বনভূমি সরকারের রির্জাভ ল্যান্ড ফরেস্ট হিসেবে সংরক্ষিত। প্রাকৃতিক এই বনভূমির মাঝে নেই কোন কৃত্রিমতা। নওগাঁর বরেন্দ্রভূমি ধামইরহাট উপজেলার মশইর মৌজার বিশাল শালবনটি সত্যিই অবাক করার মতো। কথিত আছে, পালযুগে পালবংশের কোন এক রানী শালবনটি দেখতে এসেছিলেন। রানীকে কাছে পেয়ে সেখানকার প্রজারা তাদের জল কষ্টের কথা জানায়। কোমল প্রাণ রানী প্রজাদের ওই কষ্টে ব্যথিত হয়ে সেখানে একটি বিশাল দিঘি খনন করেন এবং এর নামকরণ করেন আলতাদিঘি। এই দিঘিটি ৪২.৮১ একর জুড়ে। আরও কথিত আছে, এক সময় শালবনটির মালিক ছিলেন কলকাতার পাথরঘাটার জমিদার অত্যানন্দ ঠাকুর। তিনি দৈবক্রমে অন্ধ হয়ে যান। ফলে তার স্ত্রী অক্ষয় কুমারী দেবী জমিদারী পরিচালনা করতেন। উপজেলার আড়ানগরে তাদের কাছারীবাড়ি ছিল (বর্তমানে বাড়িটি তহশিল অফিস হিসেবে ব্যবহ্নত হচ্ছে)। তিনি নিজে উপস্থিত থেকে প্রতি বছর ৩০চৈত্র পরিপক্ক শালগাছগুলি নিলামে বিক্রি করতেন। জমিদারের কর্মচারীরা আগেই পরিপক্ক গাছগুলি চিহ্নিত করে রাখতেন। দূর-দূরান্ত থেকে কাঠ ব্যাসায়ীরা প্রকাশ্যে ওই নিলামে অংশনিতেন। অক্ষয় কুমারীর উপস্থিতিতে ১৯৪৭ সালে শেষবারের মতো নিলাম অনুষ্ঠিত হয়। এরপর থেকে আর সেখানে ওই জমিদারের কেউ আসেননি। বুনোপথ ধরে কিছুটা এগিয়ে যেতেই দেখা মিলবে শালবনের মাঝে বিশাল টলটলে জলের আলতাদিঘি। দিঘির এই প্রাকৃতিক বনভূমির চারপাশে ঝোঁপঝাঁড়। প্রকৃতি এখানে নিজ হাতে যেন সবকিছু সাজিয়েছে। তাই এখানে প্রতিদিনই আসে অনেক দূরের প্রকৃতিপ্রেমীরা। এক নজর দেখতে, কেউ বা পিকনিক করতে। শালবনের মাঝে জায়গা করে নিয়ে বড় বড় ঢিবি গড়ে তুলেছে উইপোকা। যা নিজের চোখে দেখলেও কেউ বিশ্বাস করতে চাইবে না, তবে তা সত্য। লালচে রঙ্গের এই ঢিবিগুলো প্রবল বর্ষনেও নষ্ট হয় না। উইপোকারা নির্বিঘেœ তাদের কর্মকাণ্ড চালিয়ে যায় সারা বছর। শালবনে বেড়াতে আসা পর্যটকদের নিরাপত্তা ও সহযোগীতার জন্য ২৪ জন জনবল নিয়োজিত রয়েছে সব সময়। বর্তমানে এটি পর্যটন কেন্দ্র না হলেও প্রতিদিনই মুখোরিত হয় বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা দর্শনার্থীদের পদচারনায়। প্রকৃতির বনভূমি শালবনে কোন বিশ্রমাগার না থাকলেও বনের উত্তর ধারে অনেকটা ফাঁকা জায়গা রয়েছে। যারা বেড়াতে আসেন তারা এ ফাঁকা জায়গায় বসে নির্মল বাতাসে আরাম করেন। অনেকে সেখানেই রান্না করে খাবারের পর্ব সারেন। শালবনে গেলে চোখে পড়বে চারিদিকে নিঝুম স্তব্ধতা। দু’চোখে শুধুই সবুজ আর সবুজ। কানে আসবে জানা-অজানা পাখির ডাক। বরেন্দ্রভূমির এই প্রকৃতির রাজ্যে যারা আসবেন তাদের মন ভরে উঠবে প্রকৃতির অকৃত্রিম ভালোবাসায়। সারাটা জীবন ক্ষনিকের এই স্মৃতি ডেকে ফিরবে বারংবার। বেড়াতে আসা পর্যটক কায়েস উদ্দিন বলেন, ‘এই স্থানটির কথা আমি বহুবার শুনেছি কিন্তু আসা হয়নি। আজ এখানে এসে নিজ চোখে না দেখলে বিশ্বাসই করতাম না জেলায় এতো সুন্দর একটি শালবন রয়েছে। আর মাঝখানের দিঘিটি শালবনের সৌন্দর্যকে আরও বৃদ্ধি করেছে।’ এ বিষয়ে ধামইরহাট উপজেলার দায়িত্বে থাকা বনবিট কর্মকর্তা লক্ষন চন্দ্র ভৌমিক বলেন, ‘শালবনের জাতীয় উদ্যানটিতে ইতোমধ্যে ১৭০ হেক্টর জমিতে ৬৮ হাজার ওষুধি গাছ লাগানো হয়েছে। সেই সঙ্গে বেতের বাগান করা হয়েছে। এই উপজেলা প্রকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর। প্রতিদিন এই শালবন উদ্যান দেখার জন্য শতশত লোকজন এসে থাকে বনভোজনের জন্য। আশা করছি খুব তাড়াতাড়ি এই উপজেলার চেহারাই পাল্টে যাবে এই উদ্যানের জন্য।’

বিভাগের আরো খবর

You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MySQL server version for the right syntax to use near 'ORDER BY bn_content.ContentID DESC LIMIT 8' at line 1