সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

রংপুরের আকর্ষণ তাজহাট জমিদারবাড়ি

প্রকাশিত: ০৬:৪০ এএম, এপ্রিল ৫, ২০১৪
oooooooooএকুশে সংবাদ : বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী জনপদ রংপুর। রংপুর মহানগরী ও এর আশপাশে বিভিন্ন জায়গায় রয়েছে বেশ কিছু ভ্রমণ কেন্দ্র। এর মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় তাজহাট জমিদারবাড়ি। নন্দনীয় স্থাপত্যের নিদর্শন এই বাড়িটি ১৯৮৪ সাল থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোট বেঞ্চ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এখন তা সোনালী অতিতের সাক্ষী হয়ে একটি সুন্দর জাদুঘরে পরিণত হয়েছে। এখানে প্রতিদিনই আসেন দেশি-বিদেশি পর্যটক। রংপুর নগরী থেকে তিন কিলোমিটার দক্ষিণ-পুর্বে লালবাগ এলাকায় অবস্থান এই রাজবাড়ির। বৃহত্তর রংপুরে একসময় বেশ কয়েকজন জমিদার ছিলেন। এদের মধ্যে কাকিনা, কুণ্ডি বর্ধনকোট, তুষভাণ্ডার, মন্থনা, পীরগঞ্জের জামিদারদের নাম পাওয়া যায়। তবে তাজহাট জমিদারবাড়ি ছাড়া সব ক’টিই প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে। তাজহাটের জমিদারদের মধ্যে জনপ্রিয় ছিলেন গিরিধারী লাল রায়। ১৮৭৯ সালে তার মৃত্যু হলে তাঁর ছেলে গোবিন্দ লাল রায় জমিদারি সামলান। মূলত তাঁর সময়ে তাজহাট জমিদারির সোনালি অধ্যায় ছিল। এ সময়ে জমিদারির প্রভূত উন্নতি হয়। প্রজাহিতৈষণার জন্য ১৮৮৮ সালে ব্রিটিশ সরকার গোবিন্দ লাল রায়কে রাজা, ১৮৯২ সালে রাজা বাহাদুর এবং ১৮৯৬ সালে মহারাজা উপাধিতে ভূষিত করেন। ১৮৯৭ সালে তাঁর মৃত্যুর পর ছেলে কুমার গোপাল লাল রায় জমিদার নিযুক্ত হন। তিনিই ছিলেন এ বংশের শেষ জমিদার। তিনিও ১৯১২ সালে রাজা, ১৯১৮ সালে রাজা বাহাদুর উপাধি পান শিক্ষা, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে বিশেষ ভূমিকার জন্য। ১৯৫০ সালে জমিদারি প্রথার বিলোপ ঘটলে কুমার গোপাল রায়ের বংশের অনেকেই ভারতে চলে যান। তবে বেশ কয়েকজন রয়ে যান মাটির টানে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় তারাও চলে যান ভারতে। তাদের আর ফিরে আসা হয়নি এদেশে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রথমে জমিদারবাড়ি কেমন ছিল তার সঠিক চিত্র পাওয়া যায় না। ১৮৯৭ সালে ভূমিকম্পের পর বাড়িটি নতুন করে তৈরি করা হয়। ধারণা করা হয়, ৫৬ একর জমির ওপর বাড়িটি তৈরি। পূর্বমুখী দোতলা প্রাসাদের সামনের দিক প্রায় ৭৭ মিটার দীর্ঘ। বাড়ির সামনের দিকে রয়েছে বেশ বড় একটি দালান। এর উপরে ওঠার জন্য রয়েছে সাদা পাথর বসানো সিড়িঁ। বাড়ির ছাদের কেন্দ্রীয় অংশে আট কোণা পিলারের উপর শিলার তৈরি গম্বুজ। প্রাসাদমুখের দুই প্রান্তে অষ্টাভুজাকৃতিতে বাইরের দিকে বেরিয়ে যাওয়া অংশ রয়েছে। প্রাসাদের বারান্দা প্রায় ১০ মিটার দীর্ঘ। বারান্দার উপরে যে ঝুল বারান্দা তার ছাদ চারটি করিন্থীয় পিলারের উপর স্থাপিত। প্রাসাদের দুই প্রান্তে বারান্দাতেও ত্রিকোণাকৃতির ছাদ রয়েছে দু’টি করিন্থীয় পিলারের উপর। প্রাসাদে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে চোখে পড়ে ১৪ মি ও ১৯ মি আকৃতির বিশাল হলঘর। হলঘরের দুই দিকে একটি করে ঘর রয়েছে। প্রাসাদের ভেতরে ৩ মিটার প্রশস্ত একটি টানা বারান্দা রয়েছে। পুরো ভবনে মোট ২২টি কক্ষ রয়েছে। প্রসাদপ্রাঙ্গনে চারটি বড় পুকুর ও বিস্তৃত জায়গা রয়েছে। বাড়ির পেছনে রয়েছে গুপ্ত সিড়ি। এই গুপ্ত সিঁড়ি কোন একটি সুরঙ্গ পথের সঙ্গে যুক্ত যা সরাসরি ঘাঘট নদীতে গিয়ে উঠেছে- এমন জনশ্রুতি আছে। তবে গুপ্ত সিড়িটি এখন নিরাপত্তা জনিত কারণে বন্ধ রাখা হয়েছে। ২০০৫ সালে এই বাড়িতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে জাদুঘর। এখানে দুর্লভ প্রত্নসামগ্রীর মধ্যে রয়েছে মূল্যবান কষ্টি পাথরের শিলামূর্তি, পোড়ামাটির ফলক, শিবলিঙ্গ, প্রাচীন মুদ্রা। এ ছাড়াও রয়েছে সংস্কৃত এবং আরবি ভাষায় লেখা বেশ কিছু প্রাচীন পাণ্ডুলিপি। দশম ও একাদশ শতাব্দীর টেরাকোটা শিল্পকর্ম। মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের সময়ের পবিত্র কোরআন শরীফ, মহাভারত ও রামায়ণও রয়েছে। পেছনের ঘরে রয়েছে কাল পাথরের কয়েকটি বিষ্ণুমূর্তি। জাদুঘরের ভেতরে ছবি তোলায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। জাদুঘরটি এখন প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের আওতাধীন। জাদুঘরের কাস্টোডিয়ান আব্দুল লতিফ প্রামাণিক জানান, নির্ধারিত প্রবেশ মূল্য দিয়ে এখানে প্রবেশ করা যায়। প্রাসাদ চত্ত্বরে গাড়ী নিয়ে ঢোকা যায়। তবে তার জন্য আলাদা ফি দিতে হয়। দর্শণার্থীদের বসার জন্য জাদুঘর চত্বরে নির্মাণ করা হয়েছে আসন। খোলা হয়েছে মন্তব্য বই। কর্তৃপক্ষ জানান, প্রতিবছর এখানে দেশি-বিদেশি দর্শণার্থীর সংখ্যা লাখ ছাড়িয়ে যায়। দেশের বিভিন্ন স্থান ছাড়াও ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের নাগরিকরা জাদুঘর পরিদর্শনে আসেন। তারা জমিদার বাড়ি ও জাদুঘর দেখে মুগ্ধ হন। প্রতিবেদকের বক্তব্য: আপনিও আসতে পারেন রংপুরে তাজহাটে এই জমিদার বাড়ী দেখতে। রংপুর নগরী থেকে রিকশা ও অন্যান্য যানবাহনে এখানে আসা যায়। ছাড়াঘেরা অসাধারণ সুন্দর এই জমিদার বাড়ী দেখে আপনার চোখ জুড়িয়ে যাবে।

বিভাগের আরো খবর

You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MySQL server version for the right syntax to use near 'ORDER BY bn_content.ContentID DESC LIMIT 8' at line 1