সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

মোবাইলে আসক্ত বর্তমান তরুণ প্রজন্ম

প্রকাশিত: ০৫:২৮ পিএম, আগস্ট ১১, ২০২০
একুশে সংবাদ: মাঠে গিয়ে ধুলো-কাদা মাখা হয় না আর এখন। ঘেমে-নেয়ে বিকেলে খেলা শেষে বাড়ি ফেরার চিরারিত দৃশ্যটা আজকাল যেন হারিয়ে যাচ্ছে। পাড়ায় পাড়ায় খেলার জায়গার অভাব,পড়ার চাপ, যেমন বাইরে গেলে করোনার ভয় - কতই না অভিযোগ অভিভাবকদের! তার বদলে অভিভাবকরা বিনোদনের নামে স্মার্টফোন তুলে দিচ্ছেন ছেলে-মেয়েদের হাতে, তার ক্ষতির পরিমাণটা তাদের ধারণারও হচ্ছে। বিশেষ করে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলাতে চিত্র ক্রমেই মারাত্মক হয়ে উঠছে এই মোবাইল গেমস করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারনে যখন বন্ধ রয়েছে স্কুল কলেজ, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সেই সঙ্গে বাইরে খেলাধুলার পর্যাপ্ত সুযোগ না থাকায় অবসরের আনন্দ খুঁজে নিতে বর্তমানে তরুণ প্রজন্মের বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম হল মোবাইল ভিডিও গেমস। এই ডিজিটাল প্রযুক্তি আমাদের যতটা না উপকার করছে তার চাইতে বাচ্চাদেরকে পিছিয়ে ফেলেছে বেশি। ঘরে বসে থাকা স্কুল কলেজ শিক্ষার্থীরা সহ তরুণরাও জোকে গেছে স্মার্টফোনের সুন্দর সুন্দর গ্রাফিক্স গেমস্ধসঢ়; এর দিকে। প্রযুক্তি নির্ভর এই যুগে দিনের পর দিন রাতের পর রাত জেগে মোবাইল ব্যবহার করে কাটিয়ে দেয়া আমাদের কাছে একদম সহজ হয়ে গেছে। ফেসবুক, ইউটিউব, মেসেজিং করে রাতের বেশির ভাগ সময় পার করে দেয়া আমাদের প্রতিদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া স্মার্টফোনের সুন্দর সুন্দর গ্রাফিক্স গেমস তো রয়েছেই, যার মাধ্যমে আমরা আমাদের সময় টা কে আনন্দের সাথে কাটাতে পারি। কিন্তু এই গেমস আর ডিজিটাল জুয়া কতটা ক্ষতির কারন তা কি কেও চিন্তা করেছি? এই গেম মাদকের চেয়েও বেশি ভয়াবহতা রয়েছে। মোবাইলে গেমস এর মধ্যে রয়েছে তিন পাত্তি, লুডু, পাপজি সহ অনেক খেলা। বড়দের মতো শিশুদের মধ্যেও ভর করছে শহুরে যান্ত্রিকতা। ফলে তারা খেলাধুলার আনন্দ খুঁজে ফিরছে মাউসের বাটন টিপে, কম্পিউটারের পর্দায় গেমস খেলে, কিংবা মোবাইল ফোনের স্ক্রিনে। অনেক সময় তাদের এ আকর্ষণটা চলে যাচ্ছে আসক্তির পর্যায়ে। ধীরে ধীরে তারা র্নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে কম্পিউটার-মোবাইল-ট্যাব গেমসের ওপর। এজন্য প্রথমেই বলা যায়, ভিডিও গেমস আমাদের শিশু-কিশোরদের প্রকৃত শৈশব-কৈশোর কেড়ে নিচ্ছে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য তিন পাত্তি নামক মোবাইল গেমস যা রীতিমতো জুয়া। এই গেম খেলোয়াড় বেশিরভাগই উঠতি বয়সী তরুণ- গ্রামের একদম নিন্মবিত্তের সন্তান থেকে শুরু করে কোটিপতি বাবার সন্তান এই গেমে আসক্ত। দেশে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব এর কারণে স্কুল কলেজ বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীসহ উঠতি বয়সী তরুণরা সারাদিন মোবাইলে গেম নিয়ে মত্ত থাকছে। সরেজমিনে দেখা গেছে ক্লাস সিক্স- সেভেনের ছাত্র থেকে শুরু করে কলেজ পড়ুয়া ছেলেরা সারাদিন বিভিন্ন জায়গায় মিলিত হয়ে গেম খেলে দিন পার করে দিচ্ছে। কোমলমতী কিশোরদের মেধা নষ্ট সহ অর্থের অপচয় করছে এই তিন পাত্তি নামক জুয়া। এখানে ১ কোটি কয়েন বিক্রি হয় ৫০ টাকা থেকে ১শ টাকায়। এভাবে দৈনিক হাজার হাজার টাকা লেনদেন হচ্ছে। কয়েকজন জুয়ারী বলেছেন, তিন পাত্তি থেকে তার প্রতিদিন ১ হাজার থেকে ১৫ শত টাকা আয় হচ্ছে। তিনি সারাদিন গেম খেলে এবং রাতে ১৫০ টাকা করে কয়েন বিক্রি করে। তিনি দুইটি মোবাইল দিয়ে গেম খেলে। এতে কয়েন বৃদ্ধি করা যায়একজনের থেকে অন্যজন ১০ টাকা করে বেশি দিয়ে কয়েন কিনে।একাধিক অভিভাবক জানান, পাবজি গেম সহিংস মনোভাব তৈরি করছে বলে অভিভাবক ও সংশ্লিষ্ট মনোবিজ্ঞানীরা মনে করছেন। লেখাপড়ায় ফাঁকি দিয়ে সারা রাত এই গেম খেলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক ধরনের আসক্তি তৈরি হয়েছে।পড়ালেখায় অনেকের মনোযোগ কমে গেছে। গেমটি খেলতে না পারলেই মানসিক যাতনা তৈরি হয়। এ কারণে পাবজি নামের খেলাটি নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। এ বিষয়ে হাজী ছোট কলিম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল হান্নান সজল মতামতে বলেন, ইন্টারনেট ভাল কাজে ব্যবহার হয়, খারাপ কাজেও ব্যবহার হয়। আমাদের দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার দরকার আছে। এর সুফলের পাশাপাশি কুফলও আছে। কুফলের দিকে অভিভাবকদের নজর রাখতে হবে। এর নিয়ন্ত্রন করতে হবে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে যেমন জ্ঞানার্জন করতে পারে ঠিক তেমনি মনোজগতকে ধ্বংস করতে পারবে। সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে ইন্টারনেটকে জ্ঞান অর্জনের দিকে ধাবিত করতে হবে। শিশুরা আগামী দিনের ভবিষ্যৎ তাদের দৈহিক ও মানসিক সুস্থ গঠনের লক্ষ্যে প্রত্যেকটি মা-বাবাকে আরো সচেতন হতে হবে। শিক্ষার্থীদের মেধাবিকাশে সঠিক পদক্ষেপ নিতে হবে এটাই আমার প্রত্যাশা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইদানিং কমবয়সী অর্থাৎ ১৪ থেকে ২৪ বছর বয়সীদের মধ্যে ইন্টারনেটে ডুবে থাকার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। দেখা গেছে, ১৩-১৭ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি শিশু সপ্তাহে ৩০ ঘণ্টার চেয়ে বেশি সময় ব্যয় করে ভিডিও গেমস, কম্পিউটার, ই-রিডার্স, মোবাইল ফোন ও অন্যান্য স্ক্রিনভিত্তিক প্রযুক্তি ব্যবহার। অনেক শিক্ষার্থীর পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ থাকে না। তাই গেমে আসক্ত হয়,আবার অনেকে গেমে আসক্ত হওয়ায় পড়াশোনায় মনযোগ হারায়।এই ধরনের খেলায় সহজেই সাফল্য পাওয়া যায়,তাই আসক্তি দ্রুত বাড়ে। বয়স্কদের চেয়ে শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম। মস্তিষ্কের গঠন নরম। ফলে মোবাইল ফোনসহ নানা ধরণের ইলেক্ট্রনিক্স পণ্যের ব্যবহার তাদের নানা ধরনের রোগের ঝুঁকিতে ফেলে। তবে প্রথমেই প্রয়োজন স্মার্টফোন কিংবা ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ কমানো। শ্রীপুর উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সদস্য লেখক ও কলামিস্ট সাইদ চৌধুরী বলেন,করোনা প্রাদুর্ভাবের কারনে শিক্ষার্থীরা সময় পার করার জন্য ও বিনোদনের অনুসঙ্গ হিসেবে মোবাইল ফোনে গেমসে আসক্ত হচ্ছে।এতে করে তাদের চোখ ও মস্তিষ্কের ক্ষতি হচ্ছে। মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট ভিত্তিক বিনোদনের ভয়াবহ পরিণতির হতে পারে, এলাকাতেও দেখা যায়, স্কুলগামী শিশুরা প্রায় ৭৭ ভাগ পর্নোগ্রাফি দেখে। শিশু কিশোরদের এ অবস্থা এখন অভিভাবকদের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।আর আমাদের শিশুদের হাতে মোবাইল ফোন তুলে দিচ্ছেন বাবা-মায়েরা ।আমরা এর ক্ষতিকর দিক নিয়ে ভাবছি না। মোবাইলের পরিবর্তে তাদের হাতে বই দেওয়া উচিত। পর্যাপ্ত খেলাধূলার সুযোগ দেওয়া উচিত। পারিবারিক সম্পর্কগুলোর চর্চা বাড়ানো উচিত। একটা সুস্থ আগামী প্রজন্মের জন্য এর বিকল্প নেই। অন্যান্য ব্যাটেল রয়্যাল গেমের মতোই পাবজিও অনেক বেশি হিং¯্র গেম। এবং এর ভয়াবহতা এতই বেশি যে শিশু এবং কিশোরদের মধ্যে এক প্রকার ক্ষিপ্রতা সৃষ্টি করে এই গেম। অতিরিক্ত হিং¯্রতা শিশু-কিশোরদের মধ্য বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। এবং পরবর্তী জীবনে শিশুদের হিং¯্র করে তুলতে পারে এই গেম। আজ ঘরে থাকা মানে আগামীর পৃথিবীতে আপনি মুক্ত বলাকা। ঘরে থাকুন, ভালো থাকুন । করোনা থেকে নিজেকে বাঁচান পরিবারকেও বাঁচান। একুশে সংবাদ/সানি/১১/০৮/২০২০

বিভাগের আরো খবর

You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MySQL server version for the right syntax to use near 'ORDER BY bn_content.ContentID DESC LIMIT 8' at line 1