সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

মেজর-কর্নেল সহ নিজের বহু ভূয়া পরিচয়ে অপকর্ম করতেন সাহেদ

প্রকাশিত: ০১:০৪ পিএম, জুলাই ১৩, ২০২০
একুশে সংবাদ: করোনা টেস্টের ভুয়া রিপোর্ট দেয়া এবং অর্থ আত্মসাতসহ একগাদা প্রতারণার অভিযোগ রিজেন্ট গ্রুপ ও রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান সাহেদ করিম ওরফে মো. সাহেদের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি সাহেদের রিজেন্ট হাসপাতাল ও রিজেন্ট গ্রুপের প্রধান কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে একের পর এক তার অপকর্মগুলো জানতে পারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পাশাপাশি তার দ্বারা নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার অনেক ব্যবসায়িক অংশীদার মুখ খুলতে শুরু করেছেন। কাগজে-কলমে সাহেদের পেশা একটি হাসপাতালের চেয়ারম্যান এবং সমাজসেবক হলেও তিনি একেকজনের সামনে নিজের একেক পরিচয় তুলে ধরতেন। সাহেদের সঙ্গে ব্যবসা করে ১২ লাখ পাওনা আছে-এমন একজন ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আমার সঙ্গে ব্যবসার জন্য তিনি যখন আসতেন তখন নিজেকে ‘মেজর ইফতেকার আহম্মেদ চৌধুরী’ দাবি করতেন। আবার কখনো ‘কর্নেল ইফতেকার আহম্মেদ চৌধুরী’ও বলতে শুনেছি। যখনই কথা হতো সেনা কর্মকর্তা পরিচয় দিতেন।” আরেক ভুক্তভোগী বলেন, “কখনো কখনো নিজেকে ‘মেজর সাহেদ করিম’ হিসেবে পরিচয় দিতেন সাহেদ।” ২০১৮ সালে ঢাকার বালু ব্যবসায়ী জয়নাল আবেদিনের কাছ থেকে সেনা কর্মকর্তা পরিচয়ে ১৫ লাখ টাকার বালু কিনেছিলেন সাহেদ। সেই বালু পদ্মা সেতুতে ব্যবহার হবে বলে জানিয়েছিলেন জয়নালকে। দুই বছর হলেও বালুর টাকা পরিশোধ করেননি সাহেদ। এ বিষয়ে ব্যবসায়ী জয়নাল আবেদিন বলেন, ‘টাকার অভাবে ঋণের বোঝা এত ভারী হয়েছে যে, ৯ মাস ধরে বাড়িভাড়া দিতে পারছি না। পাওনা টাকা চাইলে একদিন সে আমাকে তার রুমে নিয়ে গিয়ে পিস্তল দেখায়।’ সিলেটের শামসুল মাওলা নামের আরেক ব্যবসায়ী দাবি করেন, “তিনি সাহেদের কাছ থেকে ৩০ লাখ টাকা পান। একবার টাকা চাইলে সাহেদ নিজেকে ‘প্রধানমন্ত্রীর পিএস (একান্ত সচিব)’ বলে হুমকি দিয়ে টাকা না দিয়ে চলে যায়।” সাহেদের বিরুদ্ধে চলতি বছরের জানুয়ারিতে তিনটি মামলাও করেছেন শামসুল মাওলা। সাহেদের পদবী নিয়ে বিভ্রান্তির পাশাপাশি তার ‘আসল নাম’ নিয়েও রয়েছে বিভ্রান্তি। রিজেন্ট গ্রুপের ওয়েবসাইটে তাদের চেয়ারম্যানের নাম উল্লেখ করা হয়েছে ‘মো. সাহেদ’। রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যানের নামেও ‘মো. সাহেদ’। তবে তার সম্পাদনা ও প্রকাশনার ‘দৈনিক নতুন কাগজ’ পত্রিকাটির নামে সরকারি অ্যাক্রিডিটেশন কার্ডে তার নাম ‘মোহাম্মদ সাহেদ’। জাতীয় পরিচয়পত্রে তার নাম ‘মো. শাহেদ করিম’। ৬ জুলাই রিজেন্ট হাসপাতালের উত্তরা ও মিরপুর শাখায় অভিযান চালায় র‌্যাব। অভিযানে ভুয়া করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট, করোনা চিকিৎসার নামে রোগীদের কাছ থেকে অর্থ আদায়সহ নানা অনিয়ম উঠে আসে। পরে রোগীদের সরিয়ে রিজেন্টের উত্তরা ও মিরপুর শাখা সিলগালা করে দেয়া হয়। গ্রেফতার করা হয় আটজনকে। এ ঘটনায় ৭ জুলাই রাতে উত্তরা পশ্চিম থানায় ১৭ জনকে আসামি করে একটি মামলা করা হয়। এতে সোমবার রিজেন্ট হাসপাতালের উত্তরা শাখা থেকে আটক আটজনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। এছাড়া রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো. সাহেদসহ ৯ জনকে পলাতক আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সর্বশেষ রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান সাহেদের প্রধান সহযোগী তারেক শিবলীকে গ্রেফতার করা হয়। হেফাজতে নেয়া হয় টিভি নাটকের অন্যতম প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ‘টেলিহোম’র প্রধান ও সাহেদের ভায়রা মোহাম্মদ আলী বশিরকে। বর্তমানে গাঢাকা দিয়ে আছেন রিজেন্ট গ্রুপ ও রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান সাহেদ। মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে পুলিশ। সাহেদ নিজেকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য বলে পরিচয় দিতেন। তবে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সাহেদ একসময় বিএনপি করতেন। বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তির সঙ্গে তার তোলা ছবি ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। চলছে নানামুখী আলোচনা সমালোচনা। এদিকে করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা ও আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দেয়ার নামে প্রতারণা করা রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান সাহেদ করিম ওরফে মো. সাহেদের পাসপোর্ট জব্দ করেছে তদন্তকারী দল। হদিস মিলেছে তার বিরুদ্ধে আরও ২৩ মামলার। মোট ৫৬টি মামলার আসামি প্রতারক সাহেদ। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান সাহেদকে খোঁজা হচ্ছে। তাকে আত্মসমর্পণ করতে হবে, অন্যথায় গ্রেফতার করা হবে। তার বিদেশ যাওয়ার সুযোগ নেই। একুশে সংবাদ/তাশা/গো/১৩/০৭/২০২০

বিভাগের আরো খবর

You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MySQL server version for the right syntax to use near 'ORDER BY bn_content.ContentID DESC LIMIT 8' at line 1