সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

চিরনিদ্রায় শায়িত অধ্যাপক আনিসুজ্জামান

প্রকাশিত: ০৩:০২ পিএম, মে ১৫, ২০২০
স্বাস্থ্যবিধি মেনে জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামানের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। শুক্রবার (১৫ মে) সকাল ১০টার দিকে রাজধানীর আজিমপুর কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন হয় বলে জাগো নিউজকে জানিয়েছেন তার ছোট ভাই আখতারুজ্জামান। তিনি বলেন, শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে আজিমপুর কবরস্থানে তার বাবার কবরে জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামানকে সমাহিত করা হয়েছে। পরিবারের দুই-তিনজন সদস্য এবং করোনাভাইরাসে মৃত্যু হলে সরকারের যেসব লোক দাফনের কাজ করেন, তারাই দাফন সম্পন্ন করেছেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনেই দাফন সম্পন্ন হয়েছে বলে জানান আখতারুজ্জামান। বৃহস্পতিবার (১৪ মে) বিকেল চারটা ৫৫ মিনিটে রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএসএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় ড. আনিসুজ্জামানের মৃত্যু হয়। পরে জানা যায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন তিনি। এ কারণে শ্রদ্ধাঞ্জলি ও জানাজার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে তার পরিবার। তবে রাষ্ট্রীয়ভাবে গার্ড অব অনার দেয়া হয়েছে। জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের মৃত্যুতে গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার এক শোকবার্তায় নিজের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের অনন্য অবদানের কথা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। শোকবার্তায় ড. আনিসুজ্জামানকে অত্যন্ত শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে অনেক স্মৃতিচারণ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমি ছিলাম স্যারের টিউটোরিয়াল গ্রুপের শিক্ষার্থী।’ ড. আনিসুজ্জামান দীর্ঘদিন ধরেই ফুসফুসে সংক্রমণসহ বিভিন্ন জটিল রোগে ভুগছিলেন। মহাখালীর ইউনিভার্সেল কার্ডিয়াক হাসপাতালে (সাবেক আয়েশা মেমোরিয়াল হাসপাতাল) ২৭ এপ্রিল থেকে চিকিৎসাধীন থাকার পর গত ৯ মে পরিবারের ইচ্ছায় তাকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) নেয়া হয়। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের ইমেরিটাস অধ্যাপক ছিলেন। অধ্যাপক আনিসুজ্জামান দেশের বরেণ্য শিক্ষাবিদ, লেখক ও গবেষক, ভাষা সংগ্রামী, মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণকারী, সংবিধানের অনুবাদক ও দেশের সব প্রগতিশীল আন্দোলনের অগ্রবর্তী মানুষ। জাতির বিবেকসম এ মানুষটি ১৯৩৭ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনা জেলার বসিরহাটে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা এ টি এম মোয়াজ্জেম ছিলেন বিখ্যাত হোমিও চিকিৎসক। ১৯৫৬ ও ১৯৫৭ সালে স্নাতক সম্মান এবং এমএ-তে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করেন আনিসুজ্জামান। অনার্সে সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়ার কৃতিত্ব স্বরূপ ‘নীলকান্ত সরকার স্বর্ণপদক’ বৃত্তি লাভ করেন। ১৯৬৫ সালে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন আনিসুজ্জামান। ভাষা আন্দোলন, রবীন্দ্র উচ্ছেদবিরোধী আন্দোলন, রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকী আন্দোলন এবং ঐতিহাসিক অসহযোগ আন্দোলনে সম্পৃক্ত ছিলেন তিনি। ১৯৭১ সালে তিনি মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। এছাড়া শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে গঠিত গণআদালতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৮৫ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন আনিসুজ্জামান। আনিসুজ্জামানের উল্লেখযোগ্য রচনাবলির মধ্যে ‘স্মৃতিপটে সিরাজুদ্দীন হোসেন’, ‘শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ স্মারকগ্রন্থ’, ‘নারীর কথা’, ‘মধুদা, ফতোয়া’, ‘ওগুস্তে ওসাঁর বাংলা-ফারসি শব্দসংগ্রহ’ ও আইন-শব্দকোষ অন্যতম। বাংলা সাহিত্যে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, একুশে পদক, অলক্ত পুরস্কার, আলাওল সাহিত্য পুরস্কারসহ নানা পুরস্কার ও রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক ডি-লিট ডিগ্রিতে ভূষিত হয়েছেন। অধ্যাপক আনিসুজ্জামান ভারতের রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ‘পদ্মভূষণ’ পেয়েছেন। সাহিত্যে অবদানের জন্য ২০১৫ সালে তাকে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদান করা হয়। ২০১৮ সালের ১৯ জুন বাংলাদেশ সরকার তাকে জাতীয় অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ দেয়।

বিভাগের আরো খবর

You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MySQL server version for the right syntax to use near 'ORDER BY bn_content.ContentID DESC LIMIT 8' at line 1