সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

নওগাঁর জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে কৃত্রিম উপায়ে মধু সংগ্রহ

প্রকাশিত: ১২:৪৫ পিএম, ডিসেম্বর ১০, ২০১৮
নওগাঁ প্রতিনিধিঃ দিগন্ত জুড়ে ফসলের মাঠ। যতদুর চোখ যায় শুধু হলুদ আর হলুদ রঙে মাখামাখি। এ যেন সৃষ্টিকর্তার পাঠানো হলুদ গাঁদার খামে মোড়ানো একখন্ড চিঠি। সরিষা ফুলের হলুদ বরণে সেজেছে নওগাঁর মান্দা উপজেলার ফসলের মাঠ। সরিষার ক্ষেতের পাশে মৌ-চাষীদের মধু সংগ্রহের বাক্স স্থাপন করে ভ্রাম্যমান কৃত্রিম পদ্ধতিতে মধু সংগ্রহ শুরু করেছেন বেকার শিক্ষিত যুবকরা। সচেতনতা বৃদ্ধি, উপযুক্ত প্রশিক্ষণ এবং ঋণের সুবিধা দিলে আগামীতে বাণিজ্যিক ভাবে মধু সংগ্রহ করা সম্ভব বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা, এ বছর জেলায় ২৭ হাজার হেক্টর জমিতে উন্নত জাতের সরিষার আবাদ করা হয়েছে। জেলার মান্দা উপজেলার সরিষার মাঠে প্রায় ১ হাজার ৬৮ টি মৌ-বাক্স স্থাপন করা হয়েছে। গত বছর জেলায় ২৫ হাজার কেজি মধু আহরণ করা হয়েছিল। এ মৌসুমে এখন পর্যন্ত প্রায় ২ হাজার কেজি মধু আহরণ করা হয়েছে। জেলার মান্দা উপজেলার পরানপুর. সাবাইহাট, ভারশোঁ, বাঁকাপুর, কৈইকুড়িসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের ফসলের মাঠে সরিষা ফুল থেকে কৃত্রিম পদ্ধতিতে মধু সংগ্রহ করছেন মৌ-চাষিরা। তবে স্থানীয় ভাবে মধু সংগ্রহ না হলেও রাজশাহী জেলার স্থানীয় মৌচাষী আফজাল হোসেন সহ মোহনপুর উপজেলা এবং বিভিন্ন এলাকা থেকে এসে মধু সংগ্রহ করছেন একাধিক মৌ-চাষী। সরিষা ক্ষেত এলাকায় অভিনব পন্থায় ইউরোপিয়ান মেলিফেরা জাতের মৌমাছি দিয়ে মধু সংগ্রহে ব্যাস্ত সময় পার করতে দেখা যায় তাদের। ক্ষেতের পাশে ৬০ টি মধুবাক্স স্থাপন করা হয়েছে। প্রতিটি বক্সে ৬টি করে ফ্রেম সাজানো আছে। সপ্তাহ পর পর প্রতিটি ফ্রেম থেকে ৩ কেজি সংগ্রহ করা হয় মধু। গত ২৫ দিনে প্রায় ১০ মণ মধু সংগ্রহ হয়েছে। সরিষা ক্ষেতে মৌমাছি বসায় ফসলের ক্ষতি হচ্ছে এমন ভ্রান্ত ধারনা আছে কৃষকদের মাঝে। ফলে অনেক স্থানে মৌ-চাষীদের বসতে দেওয়া হয় না। এছাড়া সরিষা ক্ষেতে কীটনাশক স্প্রে করা হয়। ফলে মৌমাছি বসায় মৌমাছি মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটে। উপজেলার দোডাঙ্গী গ্রামের কৃষক আলমগীর হোসেন বলেন, এ বছর তিন বিঘা জমিতে সরিষার আবাদ করেছেন। বিগত বছরগুলোতে সরিষা ক্ষেতে কীটনাশক স্প্রে করতে হতো। গত বছর থেকে আমাদের মাঠে মৌ-চাষীরা ফসলের ক্ষেতের পাশে মৌ-বাক্স স্থাপন করে মধু সংগ্রহ শুরু করছে। ক্ষেতে মৌমাছির বিচরণ হওয়ায় পরাগায়ন হয়। কীটনাশক স্প্রে করতে হয়নি। রোগবালাই তেমন নাই। ফলে সরিষার আবাদও ভাল হয়েছিল। এ বছর ফলন ভাল হবে বলে আশা করছেন এই কৃষক। গত এক মাস আগে উপজেলার বাঁকাপুর গ্রামের রাস্তা সংলগ্ন মাঠে মৌ-বাক্স স্থাপন করে মধু সংগ্রহ করছেন মৌচাষী এমদাদুল হক। রাজশাহী কলেজ থেকে দর্শনে অর্নাস মার্স্টাস শেষ করছেন তিনি। ২০১০ সালে মৌ-চাষের উপর বিসিক এর অধীনে দিনাজপুর জেলার বাঁশের হাট থেকে এক মাসের প্রশিক্ষণ নেন। এরপর ৫৫০ টাকা করে ২৪টি ফ্রেম কিনে আনুষঙ্গিক প্রায় ৩৫ হাজার টাকা খরচ করে মৌচাষ শুরু করেন। খামারের নাম দিয়েছেন ‘স্ব-দেশ মৌ খামার’। ২০১৮ সালে কয়েকটি জেলায় প্রায় ৬০ মণ মধু সংগ্রহ করেছিলেন তিনি। এছাড়া মৌমাছি বিক্রি করেছিলেন প্রায় ৫০ হাজার টাকা। এ বছর প্রায় ৬০/৭০ মণের মতো মধু উৎপাদন হবে বলে আশা করেন তিনি। মৌ-চাষী এমদাদুল হক বলেন, রাজশাহী, দিনাজপুর, পাবনা, নাটোর ও নওগাঁ, শরিয়তপুর, মাদারীপুর জেলা থেকে মধু সংগ্রহ করা যায়। বাকী সময় মৌ-মাছিকে রয়েল জেলী খাওয়াতে হয়। নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারী মাস পর্যন্ত সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহ হয়। মুলত সরিষা, কালাই জিরা ও লিচু ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করেন। সরিষা ও লিচুর মধু পাইকারি ২৫০ টাকা ও খুরচা ৩০০ টাকা কেজি এবং কালাই জিরা মধু পাইকারি ৪০০ টাকা ও খুরচা ৫০০ টাকা কেজিতে বিক্রি করেন। ইন্ডিয়ান ডাবর এবং দেশীয় এপি কোম্পানীসহ বিভিন্ন কোম্পানীর কাছে পাইকারী বিক্রয় করেন। আমাদের মতো ক্ষুদ্র যারা খামারি আছেন তাদের উন্নত প্রশিক্ষণ এবং স্বল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থা করা হলে আগামীতে বাণিজ্যিক ভাবে মধু সংগ্রহ এবং বাজারজাত করা সম্ভব হবে বলে মনে করেন তিনি। এছাড়াও সমাজের বেকার যুবকেরা মধু চাষ করে আর্থিকভাবে লাভবান হবে। লেখাপড়া শেষে চাকুরীর পিছনে না ছুটে তার মতো কৃত্রিম উপায়ে মৌমাছি দ্বারা মধু সংগ্রহ করে সাবলম্বী হওয়ার জন্য অন্যদের উদ্বুদ্ধ করেন তিনি। একুশে সংবাদ // এস.সুদাম // ১০.১২.২০১৮

বিভাগের আরো খবর

You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MySQL server version for the right syntax to use near 'ORDER BY bn_content.ContentID DESC LIMIT 8' at line 1