সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

রাঙ্গামাটিতে বিলাতি ধনিয়া চাষ করে স্বাবলম্বী নারীরা

প্রকাশিত: ১১:৫৬ এএম, নভেম্বর ২৭, ২০১৮
একুশে সংবাদ: প্রচলিত ভাষার বিলাতি ধনিয়া, যাকে চাকমা ভাষায় ‘ধইন্যা ফাতা’, আর মারমা ভাষায় ‘বহক’ বলা হয়। ওয়াগগাছড়ার মারমা গৃহিনী ও জুমিয়া ইনু চিং মারমা একথা বলেন। ছড়ার পানিতে ধনিয়া পাতা ধুয়ে আঁটি বাঁধতে বাঁধতে ইনু চিং মারমা জানালেন, ধনিয়া পাতাই আমাদের অনেক স্বাবলম্বী করেছে। তিনি চোখে মুখে আনন্দের আভা নিয়ে বললেন, সারা দেশে পাহাড়ের ধনিয়া পাতার চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় আমরা এখন অনেক লাভবান হচ্ছি। ভোজন রসিক বাঙালি জাতি, সব সময়ই রান্নায় বিচিত্র স্বাদ আনতে ব্যবহার করেন নানান জাতীয় মশলা। পাহাড়ের নারীরা এ ক্ষেত্রে আর এক ধাপ এগিয়ে, তারা বনের বিভিন্ন প্রকার লতা, পাতা, গাছের ডাল, ফল এবং ফুলও অনেক সময় তরকারির স্বাদ বাড়াতে শুদ্ধ প্রক্রিয়ায় ব্যবহার করে আসছেন আবহমান কাল থেকেই। এমনি একটি পাহাড়ি মশলার জাত ‘বহক’। জনশ্রুতি রয়েছে এ বীজ বিলেত থেকে এসেছে, তাই একে সবাই বিলেতি ধনিয়া বলে থাকে। আমাদের দেশীয় প্রজাতির ধনিয়ার স্বাদ বেশী হলেও তা বছরের তিন থেকে চারমাস পাওয়া যায়। মাছ এবং সবজি জাতীয় তরকারিতে বছরের বাকি সময় সচেতন গৃহিনীরা বিলেতি ধনিয়া ব্যবহার করে থাকেন। সারাদেশেই এর চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। পাহাড়ের মাটি ও আবহাওয়া এ জাতের মশলার উপযোগী হওয়ায় তিন পার্বত্য জেলাতেই এর ব্যাপক ফলন হচ্ছে। তবে ওয়াগগাছড়া এখন যেন ধন্যা পাতার জন্য প্রসিদ্ধ স্থান। প্রতিদিন ট্রাক ভরে এখান থেকে ধন্যা পাতা চলে যাচ্ছে সারা দেশে। এ সুবাদে পাহাড়ি নারীরা হচ্ছেন স্বাবলম্বী। শুধু ওয়াগগাই নয় কাপ্তাই উপজেলার প্রত্যন্ত দুর্গম এলাকায়ও চাষিরা এখন বিলাতি ধনিয়া চাষ করছেন বেশ আগ্রহের সাথে। সল্পসময়ে এ ধনিয়ার ফলন ভালো হওয়ায় অধিকাংশ জুমিয়ারা দিন দিন ঝুঁকছেন বিলাতি ধনিয়া চাষের দিকে। এ বছর কাপ্তাই, ওয়াগ্গা, তঞ্চঙ্গ্যা পাড়া ও শীলছড়ি মারমা পাড়াসহ বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় বিলাতি ধনিয়ার ব্যাপক চাষ হয়েছে। পাহাড়ের পাদদেশে চাষ করা এ বিলাতি ধনিয়া পাতার বাম্পার ফলন হয়েছে এবার। এ বিলাতি ধনিয়া পাতা চাষ করে স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছে জুমিয়া পরিবার। পাহাড়ের আনাচে-কানাচে, ঢালে ও পাদদেশে বিলাতি ধনিয়া পাতা চাষ করছে সাধারণ বাঙালি চাষিরাও। সবারই ভালো ফলন হয়েছে বলে জানালো কৃষি বিভাগ। বিলাতি ধনিয়া পাতা বিক্রি করে আর্থিকভাবে আশাতীত সফলতা পেয়েছে এসব প্রান্তিক নারী। জানা গেলো, প্রতি সাপ্তাহে শুধু কাপ্তাই বাজারেই কয়েক লক্ষ টাকার বিলাতি ধনিয়া বিক্রি হয়। স্থানীয় বাজারের পাশাপাশি সারাদেশেই এখন পাহাড়ে উৎপাদিত বিলাতি ধনিয়ার চাহিদা বেড়েছে। অধিক ফলনের কারণে ক্রেতাদের জন্য বিলাতি ধনিয়া দাম যেমন সহনশীল, তেমনি চাষিরাও এ দামে সন্তুষ্ট। উচ্চ বাজারমূল্যের সুবাদে আয়বর্ধক ফসল হওয়ায় কাপ্তাইয়ের আনাচে কানাচে বাড়ছে বিলাতি ধনিয়াপাতার চাষ। এর পরিচর্যা তেমন একটা লাগে না। খরচও তেমন একটা নেই, শুধু কায়িক পরিশ্রম। এক সময় পাহাড়ে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের মধ্যে শুধুমাত্র তঞ্চঙ্গ্যা সম্প্রদায় বিলাতি ধনিয়া পাতার চাষ করতো। কিন্তু কালের বির্বতনে আগ্রহ বেড়েছে অন্যান্য সম্প্রদায়ের কৃষকের মধ্যেও। খবর নিয়ে জানা গেছে পাহাড়ে উৎপাদিত এ বিলাতি ধনিয়া পাতার সুবাস মনকাড়া। পাতা বেশ পুরষ্ট এবং চ্যাপ্টা হওয়ায় ফলন বেশি। পাতার দু’পাশে খাঁজকাটা। সবুজ ও ভারি এ পাতা লম্বায় ১৫ থেকে ২০ সেন্টিমিটার এবং চ্যাপ্টায় দুই থেকে তিন সেন্টিমিটার। একবার বীজ বুনলে কয়েক বছর পর্যন্ত গাছ বেঁচে থাকে। ফলে বার বার পাতা সংগ্রহ করা যায়। সাধারণত বিলাতি ধনিয়া মূলসহ গাছ তুলে বাজারজাত করার জন্য সংগ্রহ করা হয়। এ সময় পঁচা মরা বা পুরনো পাতা পরিষ্কার করে আঁটি বেঁধে বাজারজাত করা হয়। কাপ্তাই সড়কে ওয়াগ্গা এলাকার বিলাতি ধনিয়া পাতা চাষি কণিকা তঞ্চঙ্গ্যা জানান, অল্প পুঁজি, বেশি লাভ। বিভিন্ন সবজির পাশাপাশি চাষ করা যায় এ বিলাতি ধনিয়া পাতা। সহজ পদ্ধতিতে চাষ করা সম্ভব। তাই জুমিয়াদের মাঝে এ চাষের প্রবণতা বাড়ছে। তবে তিনি এও জানান, এবার বিলাতি ধনিয়া পাতার ফলন ভালো হলেও উৎপাদন খরচ অনুযায়ী বাজার মূল্য অনেকটাই কম। সরেজমিনে ওয়াগগা এলাকা ঘুরে জানা যায়, বিলাতি ধনিয়া পাহাড়ি এ অংশে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। কৃষাণ-কৃষাণীরা বিলাতি ধনিয়া চাষ করে ব্যাপকভাবে লাভবান হচ্ছে । তাছাড়া এ ধনিয়াতে তেমন কোন রোগবালাই দেখা যায় না। তবে সরেজমিনে ঘুরে আরো একটা বিষয় জানা গেলো, সম্প্রতি অতিরিক্ত গরম ও তাপদাহের কারণে বিলাতি ধনিয়া পাতায় ছত্রাকজনিত এক জাতীয় রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। এ বিষয়ে কৃষি কর্মকর্তাদের উদ্যোগ কামনা করেছেন এলাকার সংশ্লিষ্টরা। একুশে সংবাদ //এস.ব,স // ২৭.১১.২০১৮

বিভাগের আরো খবর

You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MySQL server version for the right syntax to use near 'ORDER BY bn_content.ContentID DESC LIMIT 8' at line 1