সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

শীতের আগমনী বার্তায় খেজুর রস সংগ্রহে ব্যস্ত গাছিরা

প্রকাশিত: ০১:২৪ পিএম, অক্টোবর ১০, ২০১৮
আত্রাই (নওগাঁ) প্রতিনিধি: নওগাঁর আত্রাইয়ে এক সময় দিগন্তজুড়ে মাঠ কিংবা সড়কের দু’পাশে সারি সারি অসংখ্য খেজুর গাছ চোখে পড়ত। বর্তমানে কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রামবাংলার ঐতিহ্য খেজুর গাছ। শীত মৌসুমের আগমনী বার্তার সাথে সাথে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য খেজুর রস সংগ্রহে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন আত্রাইয়ের গাছিরা। বৈচিত্র্যপূর্ণ ছয় ঋতুর দেশ আমাদের বাংলাদেশ। এক একটি ঋতুর রয়েছে এক একটি বৈশিষ্ট্য। তেমনি এক ঋতু হেমন্ত। এই ঋতুতেই দেখা মিলে শীতের। এই শীতের সময়ই পাওয়া যায় গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী সুস্বাদু পানীয় খেজুর গাছের রস। শীতের সকালে মিষ্টি রোদে বসে বসে এই সুস্বাদু খেজুর গাছের রস খাওয়ার যেন মজাই আলাদা। শীতের ভরা মৌসুমে রস সংগ্রহের জন্য শীতের আগমনের শুরু থেকেই খেজুর রস সংগ্রহের প্রতিযোগিতায় মেতে উঠেছে গাছিরা। বেড়েছে অযত্নে অবহেলায় পড়ে থাকা আত্রাইয়ের গ্রাম গঞ্জের খেজুর গাছের কদর। এখনো তেমন একটা শীতের দেখা না মিললেও এরই মধ্যে খেজুর রস সংগ্রহের কাজ শুরু করে দিয়েছেন অনেকেই। খেজুর গাছ সংকটের কারণে প্রতি বছরের মতো এ বছরও চাহিদা অনুযায়ী রস পাওয়া যাবে না বলে আশঙ্কা করেছেন গাছিরা। উপজেলার জীববৈচিত্রের সংরক্ষণ ও প্রাকৃতিক পরিবেশ উন্নয়নে সংশিষ্ট বন বিভাগ সংরক্ষণের উদাসীনতার কারণে এ অঞ্চলে দেশী খেজুর গাছ অনেকটা বিলুপ্তির পথে। উপজেলার প্রতিটি এলাকা এক সময় খ্যাতি থাকলেও কালের বিবর্তনের হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রামবাংলার ঐতিহ্য খেজুরের রস ও গুড়। কয়েক বছর আগেও এলাকার প্রতিটি বাড়িতে , ক্ষেতের আইলের পাশে ও রাস্তার দুই ধার দিয়ে ছিল অসংখ্য খেজুর গাছ। খেজুর গাছ সচারাচর উপযোগী আবহাওয়ায় জন্ম হয়। এমনকি অনেক স্থানে একাধিক গাছ জন্ম নেয়ায় সৃষ্টি হয় দেশী খেজুর বাগান। এ সব গাছ বাড়ীর আঙ্গিনা, জমির আইল ও পতিত ভূমিতে জন্ম নেয় বেশী। খেজুর গাছ সারা বছর অযত্নে অবহেলায় পড়ে থাকলেও শীত মৌসুমে কদর বেড়ে যায় অনেকাংশে। কারণ প্রতি বছরে ৪ মাস খেজুর গাছ থেকে গুড় ও মিষ্টি রস সংগ্রহ করা হয়। এ রস অত্যন্ত সুস্বাধু ও মানব দেহের উপকারিতারর কারণে মানুষের কাছে অতি জনপ্রিয় হয়ে উঠে। শীতকালে শহর থেকে মানুষ দলে দলে ছুটে আসতো গ্রাম বাংলার খেজুর রস খেতে। সন্ধ্যাকালীন সময়ে গ্রামীন পরিবেশটা খেজুর রসে মধুর হয়ে উঠতো। রস আহরণকারী গাছিদের প্রাণচাঞ্চল্য লক্ষ্য করা যেত সে সময়ে। রস জ্বালিয়ে পাতলা ঝোলা, দানা গুড় ও পাটালী তৈরি করতেন। যার সাধ ও ঘ্রাণ ছিল সম্পূর্ণ রুপে ভিন্ন। এখন অবশ্যই সে কথা নতুন প্রজন্মের কাছে রূপকথা মনে হলেও বাস্তব। যত বেশি শীত পড়বে তত বেশি মিষ্টি রস দেবে খেজুর গাছ। খেজুর গাছ ৮ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত রস দেয়। এটাই তার বৈশিষ্ট্য। শীতের পুরো মৌসুমে চলে রস, গুড়, পিঠা, পুলি ও পায়েস খাওয়ার পালা। এ ছাড়া খেজুর পাতা দিয়ে আর্কষনীয় ও মজবুত পাটি তৈরী হয়। এমনকি জ্বালানি কাজেও ব্যাপক ব্যবহার হয়। কিন্তু জয়বায়ু পরিবর্তন, কালের বির্বতনসহ বন বিভাগের নজরদারী না থাকায় বাংলার ঐতিহ্যবাহী পরিবেশবান্ধব খেজুর গাছ এখন উপজেলা জুড়ে বিলুপ্তির পথে। এ ব্যাপারে উপজেলার শাহাগোলা ইউনিয়নের পকুরপাড়া গ্রামের মতিনের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, শীত মৌসুমের শুরুতেই আমি খেজুর গাছের রস সংগ্রহের কাজ করে থাকি। বছরের এই ৫ মাস খেজুর গাছের রস সংগ্রহ করে থাকি। এই রস থেকে বিভিন্ন রকমের পাটালি ও লালি গুড় তৈরি করে বাজারে বিক্রি করে আমরা জীবিকা নির্বাহ করে থাকি। তিনি আরো জানান, বর্তমানে যে হারে খেজুর গাছ হারিয়ে যেতে বসেছে হয়তো বা এক সময় আমাদের এলাকা থেকে খেজুর গাছ হারিয়ে যাবে। এই ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে চাইলে আমাদের সবার উচিত তালগাছের মতো বেশি করে খেজুর গাছ লাগানো এবং তা যত্ন সহকারে বড় করা। যদি আমরা আমাদের এই হাজার বছরের ঐতিহ্যকে আগামী প্রজন্মের জন্য ধরে রাখতে চাই তাহলে এই কাজে আমাদের সবার এগিয়ে আসা উচিত। এব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কে এম কাউছার হোসেন বলেন, আমরা কৃষি সম্প্রসার বিভাগ থেকে আত্রাই উপজেলার বিভিন্ন সড়কের দুই ধার দিয়ে খেজুরের গাছ লাগানোর জন্য কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি । খেজুর গাছ ফসলের কোন প্রকারের ক্ষতি করেনা । এই গাছের জন্য বাড়তি কোন খরচ করতে হয়না। যা সকলের রস ও গুড়ের চাহিদা মিটাবে। একুশে সংবাদ // এস, নাহিদ // ১০.১০.২০১৮

বিভাগের আরো খবর

You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MySQL server version for the right syntax to use near 'ORDER BY bn_content.ContentID DESC LIMIT 8' at line 1