সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

কুকুরের প্রেমে ভারতে থেকে গেলেন ব্রিটিশ দম্পতি

প্রকাশিত: ০৪:২০ পিএম, মে ১৩, ২০১৮
একুশে সংবাদ : ব্রিটিশ এক দম্পতি মাত্র ১০ দিনের জন্যে বেড়াতে গিয়েছিলেন ভারতের কেরালায়, কিন্তু তারা আর ফিরে আসেননি এবং সেখানকার একদল কুকুরের পেছনে তারা খরচ করেছেন তাদের নিজেদের জমানো তিন লাখ পাউন্ড। কেন? নির্ধারিত সময়ের আগেই চাকরি থেকে অবসরে গিয়েছিলেন এই দম্পতি। তারপর কথা ছিল তারা বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াবেন। গ্র্যান ক্যানারিয়ার পর তারা এবার ভারতে দু'সপ্তাহের জন্যে একটি হলিডে বুক করলেন। ম্যারি এবং স্টিভ মাসক্রফ্ট ঠিক করলেন যে তারা যাবেন দক্ষিণ ভারতের কেরালা রাজ্যের কোভালাম শহরে। তারা গেলেন, কিন্তু সেখান থেকে একেবারে ফিরে এলেন না। তাদের চোখে পড়লো দুটো কুকুর। প্রাণীটির প্রতি তাদের মায়া এতোই তীব্র হয়ে উঠলো যে এই দম্পতি কুকুর দুটোকে দেখাশোনা করতে শুরু করলো। তারপর কেটে গেছে ১০ বছর। এখন তাদের আছে একশোটির মতো কুকুর। প্রাণীদের জন্যে তারা একটি ক্লিনিকও পরিচালনা করেন। বেওয়ারিশ কুকুর দেখভাল করার জন্যে তারা একটি সংস্থাও গড়ে তুলেছেন যাদের কাজ রাস্তা থেকে অসুস্থ কুকুর তুলে এনে তাদেরকে খাওয়ানো, টিকা দেওয়া ইত্যাদি ইত্যাদি। "কোনদিন ভাবিনি আমার জীবনে এরকম কিছু হবে, বলেন ম্যারি, একজন গায়িকা, থাকেন মিডেলসেক্সে, "কিন্তু আমরা তো শুধু বসে বসে, বই পড়ে এবং খেয়ে দিয়ে জীবন কাটিয়ে দিতে পারি না। আমি মনে করি কেউই এরকম করে জীবন সাজাতে চায় না। স্টিভ অবসর নেওয়ার আগে ব্র্যাডফোর্ড শহরে একটি ব্যবসা চালাতেন। "আমাদের খুব বেশি আর্থিক সচ্ছলতা ছিল না। আবার খুব একটা অসুবিধাও ছিল না। তাই অল্প বয়সেই আমরা অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেই। ইউরোপে ঘুরে বেড়ানো ছাড়া আমাদের তেমন কোন পরিকল্পনা ছিল না," বলেন স্টিভ। কিন্তু এই দম্পতির প্রথম লক্ষ্য ছিল চাকরি বাকরি ছাড়াই জীবনটা কেমন চলে সেটা দেখার। "আমরা তো মাত্র দু'সপ্তাহের জন্যে এখানে বেড়াতে এসেছিলাম। কিন্তু এসে দুটো কুকুরের বাচ্চার প্রেমে পড়ে গেলাম।" স্টিভ বলেন, "তারপর তো সবকিছু বদলে গেল। দুটো কুকুর থেকে ছ'টি কুকুর হলো। তারপর হলো ১২টি। এভাবে বাড়তেই লাগলো।" কিছুদিন পর এমন হলো যে এই দম্পতি কোভালাম শহরের বেওয়ারিশ কুকুর খুঁজে বের করতে শুরু করলেন। আরম্ভ করলেন ঘুরে ঘুরে তাদের খাওয়ানোর কাজ। একটা সময়ে কুকুরের সংখ্যা এতো বেড়ে গেল যে তাদের জন্যে খাবার দাবার নিয়ে যেতে বড় একটি রিকশা ভাড়া করতে হলো। এজন্যে একজন রিকশাচালককেও অনেকটা স্থায়ীভাবেই ভাড়া করা হলো। তার নাম কুক্বু। এখন তিনি কুকুর ক্লিনিকের ম্যানেজার। শহরের সবাই তখন জেনে গেল এই দম্পতির কথা। রাস্তা থেকে তারা তো কুকুর কুড়িয়ে আনতেনই, লোকজনও এই দম্পতির বাড়ির দরজার সামনে কুকুর রেখে যেতে শুরু করলেন। স্টিভ জানান, একবার তারা একটি প্লাস্টিকের ব্যাগের ভেতরে ছ'টি কুকুরের বাচ্চা পেয়েছিলেন। এভাবেই বদলে গেল এই দম্পতির জীবন। দিন রাত তাদের কাজ হয়ে গেল রাস্তা থেকে অসুস্থ কুকুর বাড়িতে নিয়ে আসা, খাওয়ানো এবং চিকিৎসা করা। খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে পড়তেন এই দম্পতি। তারপর তারা কুকুরগুলোকে গোসল করান, খাবার দেন, স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে দেখেন। সকাল ১১টা থেকে দুপুর তিনটা পর্যন্ত এতো গরম পড়ে, বেশিরভাগ দিনই গড় তাপমাত্রা পৌঁছায় ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে, সেসময় কুকুরগুলো একটু ঘুমায় এবং চারটার পর আবার শুরু হয় খাওয়া দাওয়ার পর্ব। এই দম্পতি বলছেন, কুকুরের অসুখ বিসুখ কোভালামে কোন সমস্যা নয়। কিন্তু তারপরেও শুরুতেই তাদেরকে টিকা দেওয়া হয়। এই দম্পতি বলছেন, কেরালার এসব কুকুরের পেছনে তারা নিজেদের জমানো তিন লাখ পাউন্ড খরচ করে ফেলেছেন। অর্থ সংগ্রহের জন্যে তারা মাঝে মাঝে অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করেন। বহু পরিবার, বন্ধু এবং পর্যটকও তাদেরকে অর্থ দিয়ে সাহায্য করেছেন। তারা যখন কুকুরদের নিয়ে কাজ করতে শুরু করেন তখন কোভালামের সমুদ্র সৈকত এলাকায় ৬৩৩টি কুকুর ছিল। ২০১৭ সালে তাদের সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ৮৯। যেসব কুকুর সুস্থ তাদেরকে জীবাণুমুক্ত করে আবার রাস্তায় ছেড়ে দেওয়া হয়। শুধুমাত্র অসুস্থ কুকুরকেই নিয়ে আসা হয় তাদের আশ্রয়ে। "আমি আমার আত্মীয় স্বজনকে মিস করি, মিস করি বন্ধুদের, ইংলিশ ব্রেকফাস্ট, খাবার দাবারও মিস করি। আরও মিস করি পাব এবং ফুটবল নিয়ে টিভি অনুষ্ঠান ম্যাচ অফ দ্যা ডে," বলেন স্টিভ। "তবে ভালো কিছু দিকও আছে। যেমন এখানে আমাকে গাড়ির কাঁচে জমা বরফ পরিষ্কার করতে হয় না। ঠাণ্ডায় ঘর গরম করার জন্যে বাড়তি বিলও গুণতে হয় না। "৬০ বছর বয়সে যেরকম থাকা যায় সেই হিসেবে আমি খুশি," বলেন তিনি।খবর বিবিসি একুশে সংবাদ // এস.ব.সি // ১৩.০৫.২০১৮

বিভাগের আরো খবর

You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MySQL server version for the right syntax to use near 'ORDER BY bn_content.ContentID DESC LIMIT 8' at line 1