সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

ছেলে আমার মস্ত বড় মস্ত অফিসার তাই বৃদ্ধাশ্রমই এখন আমাদের ঠিকানা

প্রকাশিত: ০২:৫৩ পিএম, এপ্রিল ১৭, ২০১৮
গাইবান্ধা : ছেলে আমার মস্ত বড় মানুষ মস্ত অফিসার মস্ত ফ্লাট যায়না দেখা এপার ওপারতাই তো আমার ঠিকানা তাই বৃদ্ধাছ্রম।জন প্রিয় শিল্পী নচিকথতা হয়তো এনাদের জন্যই এই গানটি গেয়েছিলেন গরিব,অসহায় ও সন্তানদের অবহেলার শিকার ১৭ জন মা-বাবার ঠিকানা এখন গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ পৌর শহরের ‘বৃদ্ধা সেবা বৃদ্ধাশ্রম’। যে মানুষগুলো জীবনের সবটুকু শ্রম-ঘাম দিয়েছেন পরিবারের জন্য, আজ বার্ধক্যে তারা সেই পরিবার থেকে বিতাড়িত। সংসারের কথা, সন্তানদের কথা ভেবে তাদের বুক ভেঙে আসে দুঃখে, কিন্তু কোনও ক্ষোভ নেই সন্তানদের প্রতি; তাদের মঙ্গল কামনা করেন সব সময়। স্থানীয় ১২ তরুণ নিজেদের উদ্যোগে ২০১৭ সালে গড়ে তুলেছেন ‘বৃদ্ধা সেবা বৃদ্ধাশ্রম’। এরই মধ্যে এখানে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন ১৭ জন বৃদ্ধ ও বৃদ্ধা। বয়সের ভারে ন্যুব্জ ৭১ বছরের পাকিজা বেওয়া মৃত্যুর প্রহর গুনছেন এখানে। গোবিন্দগঞ্জের তরুণীপাড়ার এই বদ্ধৃা জানান,স্বামীর ছোট ব্যবসার আয়ে চলতো সংসার। নিজেরা খেয়ে না খেয়ে একমাত্র ছেলের মুখে তুলে দিয়েছেন খাবার। অথচ স্বামী মারা যাওয়ার সেই ছেলের ‘বোঝা’ হন তিনি। একমাত্র ছেলে ও ছেলের বউ তাকে তাড়িয়ে দেওয়ায় বৃদ্ধাশ্রমে আশ্রয় নিতে হয়েছে। কথাগুলো বলার সময় বার বার কান্নায় ভেঙে পড়েন পাকিজা বেওয়া।পাকিজা বেওয়ার মতো সন্তানের ঘরে ঠাঁই হয়নি আরেক বৃদ্ধা পলাশবাড়ীর হরিনামারীর মেহেরুণ নেছার। দুই ছেলে-এক মেয়ে নিয়ে তার সাজানো সংসার ছিল। মেয়ের বিয়ে হয়েছে। দুই ছেলে বিয়ে করে আলাদা সংসার পেতেছেন। নিজের বাড়িতে জায়গা না হওয়ায় মনের দুঃখে আত্মহত্যা করতে চেয়েও পারেননি মেহেরুণ নেছা। স্থানীয় লোকজন তাকে রেখে যান বৃদ্ধাশ্রমে। গত সাত মাসে একবারও খোঁজ নেয়নি ছেলেমেয়েরা। শুধু পাকিজা আর মেহেরুণ নেছাই নয়, তাদের মতো ১৭ জন অসহায় মানুষের আশ্রয়স্থল স্থানীয় তরুণদের প্রচেষ্টায় গড়ে তোলা এ বৃদ্ধাশ্রম।এই ১৭ জনের কেউ দরিদ্র-অসহায়, কেউ ভূমিহীন,কেউ বা সন্তানের অবহেলা-অপমানের শিকার। মজিরন বেওয়া জানান, বাড়ি থেকে ছেলেরা বের করে দিয়েছে। এরপর বিভিন্ন জায়গায় নানা কষ্টে রাতদিন কেটেছে তার। শরীরে রোগ বাসা বেঁধেছে। নিজের পায়ে হাঁটাচলাও করতে পারেন না। বৃদ্ধাশ্রমে এখন চলাফেরা করতে হয় অন্যর সাহায্যে নিয়ে। শারীরিক প্রতিবন্ধী বাদশা মিয়া বলেন, ‘স্ত্রী-সন্তান, নিজ বাড়ি, আবাদি জমি সবেই ছিল। অসুস্থ হয়ে পড়ায় শারীরিক সক্ষমতা হারিয়ে ফেলি। চিকিৎসা চালাতে গিয়ে সব বিক্রি করে নিঃস্ব হয়েছি। তিন ছেলে ও এক মেয়ে থাকলেও তারা বিয়ে করে আলাদা হয়েছে।’ শারীরিক অক্ষমতাসহ উপার্জন করতে না পারায় ছেলেরা তাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়। ফলে শেষ জীবনে শেষ ঠিকানা হয়েছে বৃদ্ধাশ্রমে। গোবিন্দগঞ্জ পৌর শহরের বোয়ালিয়া শিববাড়ী মোড়ে এলাকার ১২ তরুণ নিজেদের উদ্যোগে ২০১৭ সালে গড়ে তোলেন বৃদ্ধাশ্রমটি। তাদের মধ্যে অধিকাংশই কলেজছাত্র। বৃদ্ধাশ্রম পরিচালনা কমিটির সভাপতি আপেল মাহমুদ জানান, দিনদিন বৃদ্ধাশ্রমে বাড়ছে অসহায় মানুষের সংখ্যা। নিজেদের চাঁদা ও সামান্য সংগ্রহ দিয়ে চলে বৃদ্ধাশ্রমটি। গত একবছর ধরে এসব মানুষকে তিনবেলা খাবার, দেখাশুনা ও তাদের চিকিৎসা চালিয়ে আসছেন। এছাড়া তাদের অক্ষর জ্ঞান দেওয়াসহ নামাজ ও কোরান পড়ানো হয় নিয়মিত। বর্তমানে বাড়ি ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল ও তাদের পোশাকসহ প্রতিমাসে খরচ প্রায় ৫০ হাজার টাকা। এমন অবস্থায় খরচ চালাতে হিমশিম অবস্থায় পড়েছেন তারা। বৃদ্ধাশ্রম পরিচালনার কমিটির সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম খোকন বলেন,অর্থের অভাবে বৃদ্ধাশ্রমটি বন্ধ হয়ে পড়লে অসহায়-নির্যাতিত মানুষগুলোর কোথাও ঠাঁই হবে না। এসব অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে সমাজের সম্পদশালী মানুষ ও সরকারকে সহযোগিতা চান তিনি। গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার ভারপ্রাপ্ত ইউএনও ও সহকারী কমিশনার ভূমি রাফিউল আলম বলেন, ‘সমাজের যুবকরা দিন দিন অবক্ষয়ের দিকে যাচ্ছে। কিন্তু সেই সমাজের যুবক-ছাত্রদের প্রচেষ্টায় গড়ে ওঠা বৃদ্ধাশ্রম সত্যিই মানবসেবার দৃষ্টান্ত। আগেও বৃদ্ধাশ্রমের জন্য সহযোগিতা করা হয়েছে। তাদের বৃদ্ধাশ্রমের জন্য আবারও সহযোগিতা করার চেষ্টা করব         একুশে সংবাদ // এস. ইফা // ১৭.০৪.২০১৮

বিভাগের আরো খবর

You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MySQL server version for the right syntax to use near 'ORDER BY bn_content.ContentID DESC LIMIT 8' at line 1